নিজস্ব প্রতিবেদক : র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেছেন, আমরা শুধু মাদক ব্যবসায়ীদের ধরেই ক্ষান্ত নই, মাদকে যারা অর্থায়ন করে, হুন্ডির মাধ্যমে টাকা এপার-ওপার করে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিছু হুন্ডি ব্যবসায়ী বিদেশে বসে এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের চিহ্নিত করেছি। ওই সমস্ত দেশ থেকে তাদের ধরার চেষ্টা করছি আমরা। বাংলাদেশে পা দিলে তাদের নিষ্কৃতি নেই। কারণ মাদককে আমরা দুষ্প্রাপ্য করতে চাই।
মঙ্গলবার দুপুরে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে মাদকবিরোধী ‘বিচ ম্যারাথন’ শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।
‘চলো যাই যুদ্ধে মাদকের বিরুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে দৌড়াও বাংলাদেশ’ শিরোনামে কুয়াকাটায় ১০ কিলোমিটারব্যাপী এ বিচ ম্যারাথনের আয়োজন করে র্যাব। এতে অংশ নেন পটুয়াখালী ও বরগুনার স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই হাজার শিক্ষার্থী।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার ও মাদক উদ্ধার করলেই মাদক দমন করা যাবে না। যতদিন সমাজে মাদকের চাহিদা থাকবে ততদিন কোনো না কোনোভাবে মাদক আসবেই। সাপ্লাই বন্ধ করতে হলে ডিমান্ড বন্ধ করতে হবে। ডিমান্ড বন্ধ হলে অটোমেটিকলি সাপ্লাই কমে আসবে।
তিনি বলেন, সেই সঙ্গে যদি এ এনফোর্সমেন্টের অভিযান অব্যাহত থাকে তাহলে আমি মনেকরি মাদক নির্মূল হতে বাধ্য। দুই বছর আগে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল যে, অনেকে ভাবতেন মাদক থেকে আমাদের পরিত্রাণ নেই। তখন এমনও দেখা গেছে, প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হতো, ৫০ টাকায় ইয়াবা পাওয়া যেত। আর মাদক তখন দ্রুত বড়লোক হওয়ার হাতিয়ার হিসেবে পরিগণিত হয়েছিল। আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী যখন নির্দেশ দিলেন, ওইদিন রাত থেকেই মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করি। আজ দেশবাসীর সহযোগিতায় মাদককে দুষ্প্রাপ্য করেছি আমরা।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, মিয়ানমার থেকে ইয়াবা প্রবেশের সিংহদ্বার কক্সবাজার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিয়ে আমরা সেখানে একটি অ্যাডহক ব্যাটালিয়ন র্যাব-১৫ প্রতিষ্ঠা করি। এ বছর এর সরকারি অনুমোদন পাওয়া গেছে। গত এক বছরে কক্সবাজার র্যাব ব্যাটালিয়ন প্রায় ৪০ লাখেরও বেশি ইয়াবা উদ্ধার করেছে। গোলাগুলিতে নিহত হয়েছে ৫-৬ জন। ক্রমাগত সেখানে অপারেশন করে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ আমাদের বহুমুখী নিরাপত্তাজনিত সমস্যা তৈরি করেছে। রোহিঙ্গাদের একটা ছোট অংশ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। একশ্রেণির রোহিঙ্গা নাগরিক এতই ডেসপারেট যে, তারা সীমান্তের মাইন উপেক্ষা করে মাদক নিয়ে আসে। যখনই আমরা কক্সবাজারে একটা শক্ত অবস্থান নিয়েছি। কক্সবাজার দিয়ে মাদক প্রবেশ এখন আসলেই কঠিন ব্যাপার। কুয়াকাটা-বরিশাল-খুলনা দিয়ে প্রবেশের চেষ্টা। মিজোরাম দিয়ে, আসাম-মেঘালয় সিলেট দিয়ে প্রবেশ করানোর চেষ্টা করেছে। ওখানেও ব্যবসায়ীদের আমরা গ্রেফতার করেছি। এরা যতই অপচেষ্টা করুক আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই আমাদের সক্ষমতা দিয়ে আমরা এদের মোকাবিলা করতে সক্ষম হব।
বাংলাদেশে সঠিক মাদকাসক্তের সংখ্যা নেই উল্লেখ করে র্যাব ডিজি বলেন, এনজিওর হিসাব মতে, দেশে ৬০-৮০ লাখ লোক মাদকাসক্ত। প্রতিদিনই এ সংখ্যা বাড়ছে। সে কারণে প্রচুর মাদকাসক্তের পুনর্বাসন দরকার। দেশকে মাদক নিশ্চিহ্ন করা না গেলেও, মাদককে পুরোপুরি দুষ্প্রাপ্য করা সম্ভব। কোনো বর্ডারই পরিপূর্ণ সিল করা যায় না, নিয়ন্ত্রণ করা যায়, মনেকরি সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমরা মনে করি সাফল্যজনকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে নিশ্চিহ্ন করতে সক্ষম হব।
এ সময় র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, টুরিস্ট পুলিশ, স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।