লালমনিরহাটে কোরআন অবমাননা হয়নি

রংপুর সারাদেশ

দাবি জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির

 

লালমনিরহাট প্রতিনিধি : লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে শহীদুন্নবী জুয়েলের কোরআন অবমাননার কোনো সত্যতা মেলেনি বলে দাবি করেছে জেলা প্রশাসকের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।


বিজ্ঞাপন

বুধবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিং করেন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। এর আগে শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) লালমনিরহাট অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট টি.এম. এ মমিনকে প্রধান করে তিন কার্যদিবস সময় দিয়ে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে কয়েক দফায় সময় নিয়ে বুধবার তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে সক্ষম হন কমিটি।


বিজ্ঞাপন

প্রেস ব্রিফিংয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট টি.এম.এ মমিন সাংবাদিকদের বলেন, তিন কার্যদিবস থেকে সময় বাড়িয়ে ৯ কার্যদিবস সময় নেওয়া হয়। সময়মতো তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসক মহোদয় অফিসের বাহিরে থাকায় বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) সকালে তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেওয়া হবে। কোরআন অবমাননার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। এটি স্রেফ একটি গুজব। গুজব ছড়িয়ে জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যা ও মরদেহ পোড়ানো হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদন বিষয়ে তিনি আরও বলেন, তদন্তকার্যে মোট ৫০ জনের লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য গ্রহণ করে তদন্ত কমিটির ৭টি সভা করে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। ৬টি অধ্যায়ে ৪২টি অনুচ্ছেদে ৭৩ পাতা সংযুক্তিতে মোট ৬ পাতার তদন্ত প্রতিবেদন। ঘটনার ভূমিকা, বিবরণ, অধিক তথ্যানুসন্ধান, গভীর পর্যবেক্ষণ, সুপারিশমালা ও মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনটিতে ৪টি সুপারিশ স্থান পেয়েছে বলেও দাবি করেন তদন্ত কমিটির প্রধান।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কমিটির সদস্য ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক সাইদুল ইসলাম বলেন, বিচার কার্যের তদন্তকারী সংস্থা আইনি জটিলতা নিরসনে প্রয়োজন মনে করলে কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে প্রতিবেদনটি নিতে পারবেন।

সাংবাদিকদের অপর একটি প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কমিটির অপর সদস্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম বলেন, ঘটনার গভীরে যেতে এবং নিবির পর্যবেক্ষণের জন্য আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ১৭-২০টি ভিডিও ক্লিপ সংগ্রহ করেছি। এসব দেখেও অনেক তথ্য উপাত্ত পেয়েছি।

উল্লেখ্য, গত ২৯ অক্টোবর বিকেলে পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে শহিদুন্নবী জুয়েলকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের চাচাত ভাই সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে শনিবার (৩১ অক্টোবর) একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে মোট ৩২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে ১০ জনকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। গ্রেফতার আসামিরা সবাই বুড়িমারী এলাকার বাসিন্দা।

নিহত যুবক শহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রীপাড়া এলাকার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। সুলতান রুবায়াত সুমন নামে এক সঙ্গীসহ বুড়িমারী বেড়াতে আসেন তিনি। ওই দিন বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে শহিদুন্নবী জুয়েলকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।