আজকের দেশ ডেস্ক : মেস থেকে খানা এল। কথা চলল খেতে খেতে। মুক্তিযুদ্ধ, মুজিবের বিচার, ঢাকার সর্বশেষ পরিস্থিতি ইত্যাদি আরও অনেক কথা। এর ফাঁকেই টুক করে আমি আসল কথাটা গলিয়ে দিলাম- আচ্ছা ঢাকা থেকে যে সাংবাদিকটি এলেন, তিনি তো আপনার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। আপনি গররাজি হলেন কেন?
ঢাকার ওই সাংবাদিকের নাম করতেই জ্বলে উঠলেন তাজউদ্দীন। আমার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিক্ষেপ করে বললেন, আপনি না একজন ঝানু সাংবাদিক? আপনিও বুঝতে পারছেন না? ওর কাছে কী আছে জানেন? পাকিস্তানি পাসপোর্ট। দেখছেন না, কতো সহজে লোকটি আমাদের বিদেশ দফতরে ঠাই করে নিল।
তাজউদ্দীন সাহেব বিদেশ দফতরের কথাটা বলতেই এক রহস্যকুঠরির যেন দরজা খুলে গেল আমার সামনে। সন্দেহের গন্ধটা আমারও ওইদিক থেকেই আসছিল। আর রাখঢাক না করে আমি ষড়যন্ত্রের কথাটা সরাসরি জানতে চাইলাম তার কাছে। মনে হল, কী যেন খুঁজতে উনি গভীর মগ্ন হলেন। কী ভাবছেন? তাজউদ্দীন সাহেব নানা ঘটনাসূত্রে আমাকে বিশ্বাস করতেন। না, গোপন করলেন না কিছু। বললেন- বসুন তা হলে, হাত-মুখ ধুয়ে আসি, মুখে কিছু বলব না আমি। ফাইলটা দেখাচ্ছি। আপনি সব বুঝতে পারবেন।
টপ সিক্রেট লেখা একান্ত গোপনীয় একটা লাল ফাইল তাক থেকে পেড়ে দিলেন আমার সামনে। কিছুটা অংশ একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন নিজে। তারপর বললেন- পড়ে দেখুন, চান তো নোটও নিতে পারেন এই ফাইল থেকে। তবে ধৈর্য ধরতে হবে আপনাকে। এক্ষুণি কিছু প্রকাশ করবেন না।
কথা দিলাম। সতর্ক দৃষ্টিতে ফাইলটা দেখছি। সুড়ঙ্গের সন্ধান পেলাম নেমে যাই রহস্যের গভীরে। সেখানে ঝিকমিক করছে দেখি তথ্যের মণিমুক্তোগুলি।
জনৈক মাহবুব আলম চাষীর একটি প্রস্তাবের অনুলিপি পেলাম ফাইলের মধ্যে। তাতে জনাব মাহবুব আলম পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধ করে আলাপ- আলোচনার প্রস্তাব করেছেন।
ওই প্রস্তাবের পরেই আছে অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনের এক স্বাক্ষরিত নোট। নোটের বয়ান- ‘যারা এ ধরনের ষড়যন্ত্রে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে পার্টির (আওয়ামী লীগের) রাজনৈতিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তবে মাহবুব আলম চাষী যখন একজন সরকারি পদস্থ অফিসার, তাকে আমি এক্ষুণি তাড়িয়ে দিচ্ছি। সে একজন জঘন্য ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত।’