নিজস্ব প্রতিনিধি : রংপুর মহানগরীকে সরকার কর্তৃক ঘোষিত নিষিদ্ধ পলিথিন মুক্ত করার লক্ষে গত ২১/০৩/২০২১ খ্রি. রংপুর মহানগরীর নবাবগঞ্জ বাজারে রংপুর মেট্রোপলিটন ডিবি পুলিশ কর্তৃক পরিবেশ দূষণকারী পলিথিন বিরোধী সাঁড়াশি অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে ৪ ব্যক্তির মালিকানাধীন ০৪ টি পলিথিনের দোকান এবং সংশ্লিষ্ঠ ০৪ টি গুদামে অভিযান পরিচালনা করে সর্বমোট ১৫২ বস্তা যার মোট ওজন ৩০৪০ কেজি সরকার নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করা হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য- প্রায় ৯,১২,০০০ (নয় লক্ষ বার হাজার) টাকা।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রংপুর মেট্রোপলিটন গোযেন্দা বিভাগ (ডিবি) এর উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) জনাব কাজী মুত্তাকী ইবনু মিনান মহোদয়ের নির্দেশনায় সহকারী পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোঃ ফারুক আহমেদ এর পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে ইন্সপেক্টর (নিঃ) মোঃ সালেহ আহমেদ পাঠান, ইন্সপেক্টর (নিঃ) এবিএম ফিরোজ ওয়াহিদ, এসআই(নিঃ) গোলাম মোর্সেদ, এসআই(নিঃ) তছলিম উদ্দিন আহমেদ, এসআই(নিঃ) মোঃ নাজমুল ইসলাম, এসআই(নিঃ) মোঃ আবু ছাইয়ুম তালুকদার, এসআই(নিঃ) মোঃ লাকু সরকার এবং সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সসহ পরিবেশ অধিদপ্তর, রংপুর এর প্রতিনিধীদের সহায়তায় আরপিএমপি কোতয়ালী থানাধীন রংপুর সুপার মার্কেট সংলগ্ন নবাবগঞ্জ মার্কেট এর ভিতরে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
এ অভিযানে
১. মোঃ ওবায়দুল ইসলাম (৩৫), পিতা- আলাউদ্দিন মিয়া, সাং- শালবন মিস্ত্রিপাড়া, থানা-কোতয়ালী, মহানগর, রংপুর এর চায়না লেন মেসার্স নয়ন স্টোর নামে দোকান ও ভাড়ায় চালিত গোডাউন ঘর তল্লাশী করে (২০+৪০)=৬০ (ষাট) বস্তা সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। বস্তাগুলো ওজন করে প্রতিটি বস্তা ২০ (বিশ) কেজি করে মোট (৬০x২০)=১২০০ কেজি, যার মূল্য আনুমানিক (১২০০x ৩০০)= ৩,৬০,০০০/-(তিন লক্ষ ষাট হাজার) টাকা।
২. মোঃ আমান উল্ল্যাহ খান (৫৫), পিতা- মৃত আব্দুল হাই খানা, সাং- নবাবগঞ্জ বাজার (গুদরিবাজার) হীনদা গলি ভাড়াটিয়া (দোকান মালিক সমিতি ভোটার নং-৫১২), থানা-কোতয়ালী, মহানগর, রংপুর এর ভাড়ায় চালিত গোডাউন ঘর তল্লাশী করে (২০+৪০)=৬০ (ষাট) বস্তা সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। বস্তাগুলো ওজন করে প্রতিটি বস্তা ২০ (বিশ) কেজি করে মোট (৬০x২০)=১২০০ কেজি, যার মূল্য আনুমানিক (১২০০x৩০০)= ৩,৬০,০০০/-(তিন লক্ষ ষাট হাজার) টাকা।
৩. মোঃ ফরিদ (৩০), পিতা-অজ্ঞাত, সাং- অজ্ঞাত, থানা- অজ্ঞাত, রংপুর মহানগর, রংপুর এর ভাড়ায় চালিত গোডাউন ঘর তল্লাশী করে ২৪(চব্বিশ) টি পুরাতন প্লাষ্টিকের বস্তার ভিতরে রক্ষিত অবস্থায় সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। বস্তাগুলো ওজন করে প্রতিটি বস্তা ২০ (বিশ) কেজি করে মোট (২৪x২০)=৪৮০ (চারশত আশি) কেজি, যার মূল্য আনুমনিক (৪৮০x৩০০)= ১,৪৪,০০০/-(এক লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার) টাকা এবং
৪. মোঃ আবু তাহের (৩৫), পিতা- মোঃ হাসান আলী @ হাসান মুন্সী, সাং- হনুমানতলা, থানা- কোতয়ালী, রংপুর মহানগর, রংপুর এর ভাড়ায় চালিত গোডাউন ঘর তল্লাশী করে ০৮(আট) টি পুরাতন প্লাষ্টিকের বস্তার ভিতরে রক্ষিত সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। প্রতিটি বস্তা ২০ (বিশ) কেজি করে মোট(৮x২০)=১৬০ (একশত ষাট) কেজি যার মূল্য আনুমানিক (১৬০x৩০০)=৪৮,০০০/-(আটচল্লিশ হাজার) টাকা।
জব্দকৃত পলিথিনের মালিক ও অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আরপিএমপি কোতয়ালী থানায় মামলা রুজু করা হয়। মামলাগুলো যথাক্রমে আরপিএমপি, কোতয়ালী থানার মামলা নং-৫৩,৫৪,৫৫,৫৬ এবং সবগুলো মামলাই ‘পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫(সংশোধনী/২০১০)’ এর ৪(ক)/(খ)’ ধারা।
পলিথিন আমাদের পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। স্বাভাবিকভাবে পলিথিন পঁচনশীল নয়। ব্যবহৃত পলিথিনের পরিত্যক্ত অংশ দীর্ঘদিন অপরিবর্তিত ও অবিকৃত থেকে মাটি, পানি ইত্যাদি দূষিত করে। পলিথিন মাটির উবর্বরতা হ্রাস করে ও মাটির গুনাগুন পরিবর্তন করে ফেলে। পলিথিন পোড়ালে এর উপাদান পলিভিনাইল ক্লোরাইড পুড়ে কার্বন মনোক্সাইড উৎপন্ন হয়ে বাতাস দূষিত করে। পলিথিনের ব্যাগ ও অন্যান্য জিনিস শহরের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ‘নারডল’ নামক এক প্রকার প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রের পানিতে মিশে পানি দূষিত হচ্ছে। এতে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়ছে। পলিথিন ও বিভিন্ন প্লাস্টিক পণ্য ব্যাপকভাবে ব্যবহারে সারাদেশে খাল-বিল, নদী-নালা থেকে শুরু করে সমুদ্র্র পর্যন্ত প্লাস্টিক ছড়িয়ে পড়ছে। এতে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। যত্রতত্র পলিথিনের ব্যবহারের ফলে মানবদেহে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যাসহ ক্যান্সারও হয়। সেই সাথে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য।
জব্দকৃত পলিথিনের উৎপাদন, মজুদ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ থেকে খুচরা বিক্রির সাথে জড়িত সকলকে বিস্তৃত ও নিবিড় তদন্তের মাধ্যমে সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
রংপুর মহানগরী এলাকাকে সরকার কর্তৃক ঘোষিত নিষিদ্ধ পলিথিন মুক্ত করার লক্ষ্যে রংপুর মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) টিম এর অভিযান অব্যহত থাকবে। পলিথিন মুক্ত, পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব রংপুর মহানগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে রংপুর মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) টিম সদা তৎপর। এ লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক নজরদারী ও প্রয়োজনীয় অভিযান অব্যাহত থাকবে।