বন্যায় ২৮২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ
পদ্মার ভাঙনে আতঙ্কে মুন্সীগঞ্জবাসী
নিজস্ব প্রতিবেদক : চলমান বন্যায় দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ধাক্কা লেগেছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বন্যাক্রান্ত এলাকার সড়ক ও রেল যোগাযোগ। এখন পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশের ১১টি মহাসড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিতে মহাসড়ক ডুবে থাকায় কোনো কোনো অঞ্চলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। আবার অনেক জায়গায় পানি নেমে গেলেও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ক্ষতিগ্রস্ত মহাসড়ক। আর দুর্গত এলাকার জেলা ও গ্রামীণ সড়কও চলে গেছে বেহাল দশায়। পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে রেলপথ। ফলে গুরুত্বপূর্ণ ৮টি রুটে ট্রেন চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। বন্ধ হয়ে পড়েছে একাধিক রুট। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগের আওতাধীন খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি-বান্দরবান আঞ্চলিক মহাসড়কটির কয়েকটি অংশ পানিতে ডুবে আছে। একই অবস্থায় রয়েছে কেরানীহাট-বান্দরবান জাতীয় মহাসড়কও। চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি জাতীয় মহাসড়কটির ৫৮তম কিলোমিটারে কলাবাগান নামক স্থানে মাটি ধসে গেছে। এখানে সাময়িক তৎপরতার অংশ হিসেবে এসক্যাভেটর দিয়ে পানির গতিপথ পরিবর্তন ও প্যালাসাইডিং স্থাপন করে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানটি ঝুঁকিমুক্ত করেছে রাঙ্গামাটি সড়ক বিভাগ। তাছাড়া সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের কয়েকটি স্থান পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যায় যান চলাচল বিঘিœত হচ্ছে পার্শ্ববর্তী নেয়ামতপুর-তাহিরপুর ও কচিরঘাটি-বিশ্বম্ভরপুর আঞ্চলিক মহাসড়কেও। সিলেট-মৌলভীবাজারের গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়কটি তিন থেকে চারটি স্থানে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। শেরপুর-জামালপুর মহাসড়কের পোড়ার দোকান নামক স্থানে সড়কের প্রায় তিন ফুট ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বন্যার পানি। এ অংশটিতে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। পারাপারে নৌকাও ব্যবহার করছেন স্থানীয়রা। সিলেট-গোয়াইনঘাট মহাসড়কের ১১তম কিলোমিটারের বারকিপুরে বন্যায় একটি বেইলি ব্রিজ ভেঙে গেছে। ফলে এ পথে বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। ক্ষতিগ্রস্ত সেতুটি মেরামতের জন্য বন্যার পানি কমা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সড়ক বিভাগের প্রকৌশলীরা। কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে গেছে শ্যামপুর-দুর্গাপুর মহাসড়কও।
সূত্র জানায়, বিগত ২০১৭ সালের বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল রংপুর-কুড়িগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক। পরবর্তী সময়ে মহাসড়কটি সংস্কার করা হলেও সাম্প্রতিক বন্যায় কাউনিয়া এলাকায় ফের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত স্থান দিয়ে ছোট ছোট যানবাহন কোনো রকমে চলাচল করলেও ভারী যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়েছে। বন্যায় পঞ্চগড়ের করতোয়া নদীর ওপর নির্মিত সেতুর এক প্রান্তের এক্সপ্যানশন জয়েন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত স্থানটি এরই মধ্যে বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীরা পরিদর্শনও করেছেন। এর বাইরে বন্যায় নির্মাণাধীন যশোর-খুলনা জাতীয় মহাসড়কটিও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর-তারাকান্দি সড়কের একাংশ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এ কারণে সড়কটি দিয়ে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়েছে। সড়কটি মেরামতে সেনাবাহিনী ও পানি উন্নয়ন বোর্ড যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এসব মহাসড়ক ছাড়াও দুর্গত এলাকার জেলা ও গ্রামীণ সড়কগুলোও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো বন্যাদুর্গত ২১ জেলার অনেক গ্রামীণ সড়ক পানির নিচে ডুবে রয়েছে। গাইবান্ধা শহরের পিকে বিশ্বাস রোড, সান্তারপট্টি রোড, স্টেশন রোডের কাচারীবাজার থেকে পুরনো জেলখানা পর্যন্ত, ভিএইড রোড, ডেভিড কোম্পানীপাড়ার দুটি সড়ক, মুন্সিপাড়া শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়ক, ব্রিজ রোড কালিবাড়িপাড়া সড়ক, কুটিপাড়া সড়ক, পূর্বপাড়া সড়ক, একোয়াস্টেটপাড়া সড়ক, বানিয়ারজান সড়ক, পুলিশ লাইন সংলগ্ন সড়ক পানিতে ডুবে রয়েছে। কুড়িগ্রামে ৭২ কিলোমিটার কাঁচা ও ১৬ কিলোমিটার পাকা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় দেশের কোথায় কী পরিমাণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার তথ্য সংগ্রহ করছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। এর পাশাপাশি বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উদ্ভূত বিরূপ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, তথ্য সংগ্রহ, অভিযোগ গ্রহণসহ মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা প্রদানের জন্য সওজ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষও খোলা হয়েছে। বন্যার কারণে যেসব স্থানে সড়ক-মহাসড়ক ও সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেসব স্থানে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড টানানোরও উদ্যোগ নিয়েছে অধিদপ্তর।
সূত্র আরো জানায়, বন্যার প্রভাবে সড়কপথের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে রেলপথও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে অন্তত ৮টি রুটে ট্রেন চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ বাজার সেকশন ও জামালপুর-তারাকান্দি সেকশনের সরিষাবাড়ী-বয়ড়া স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে রেললাইন বন্যার পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ কারণে আন্তঃনগর তিস্তা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেনসহ ঢাকা, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা সব ট্রেন দেওয়ানগঞ্জ বাজার ও তারাকান্দি পর্যন্ত চলাচল না করে জামালপুর স্টেশন পর্যন্ত চলছে। আর পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বাদিয়াখালী রোড-ত্রিমোহনী জংশন স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে রেললাইন বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে ঢাকা-লালমনিরহাট রুটে চলাচল করা লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকা-সান্তাহার-বগুড়া-বোনারপাড়া-কাউনিয়া-লালমনিরহাট রুটের বদলে ঢাকা-সান্তাহার-পার্বতীপুর-লালমনিরহাট রুট দিয়ে চলাচল করছে। একইভাবে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকা-সান্তাহার-বগুড়া-বোনারপাড়া-কাউনিয়া-রংপুর রুটের বদলে ঢাকা-সান্তাহার-পার্বতীপুর-রংপুর রুট দিয়ে যাতায়াত করছে। আন্তঃনগর দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস ট্রেনটি দিনাজপুর-সান্তাহার-দিনাজপুর রুটের বদলে দিনাজপুর-গাইবান্ধা-দিনাজপুর রুটে এবং আন্তঃনগর করতোয়া এক্সপ্রেস সান্তাহার-বুড়িমারী-সান্তাহারের বদলে সান্তাহার-বোনারপাড়া-সান্তাহার দিয়ে চলাচল করছে। পদ্মরাগ এক্সপ্রেস ট্রেনটি বন্যার কারণে বাদিয়াখালী স্টেশনে আটকা পড়ায় বন্ধ হয়ে পড়েছে সান্তাহার-লালমনিরহাট-সান্তাহার রুটের ট্রেন চলাচল। পাঁচপীর-উলিপুর স্টেশনের মাঝে রেললাইন পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ৪২১-৪২২ নম্বর লোকাল ট্রেন পার্বতীপুর-কুড়িগ্রাম-পার্বতীপুর ও ৪১৫-৪১৬ নম্বর লোকাল ট্রেন তিস্তা জংশন-কুড়িগ্রাম-তিস্তা জংশন রুটে চলাচল করছে।
এদিকে সড়ক-মহাসড়কে বন্যার প্রভাব প্রসঙ্গে সওজ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (প্ল্যানিং অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স উইং) আশরাফুল আলম জানান, বন্যা মোকাবেলায় সব সময়ই সওজ অধিদপ্তর প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। প্রস্তুতি দুই ধরনের। একটা বন্যা-পূর্ববর্তী সময়ের জন্য। এ সময় যেসব স্থানে বন্যার কারণে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়, সেসব স্থানে সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবেলায় কাজ করেন অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা। এর বাইরে বন্যা-পরবর্তী সময়ে যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করতে। বন্যা মোকাবেলায় সওজর সক্ষমতা বেড়েছে। অর্থ বরাদ্দেও কোনো কমতি নেই। তবে কিছু এলাকা এখনো বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। পানি না কমানো পর্যন্ত সেখানে কাজ করা কঠিন। তার পরও বন্যাদুর্গত এলাকাগুলো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও জরুরি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানান, বন্যার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে রেলপথ পানিতে তলিয়ে গেছে। এ কারণে কয়েকটি রুটে ট্রেন চলাচল কিছুটা বিঘিœত হচ্ছে। তবে যাত্রীদের কথা বিবেচনায় রেখে সম্ভাব্য সব বিকল্প রুট ব্যবহার করা হচ্ছে। বন্যা মোকাবেলায় রেলওয়ের প্রকৌশলীরা সার্বক্ষণিক মাঠপর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে।
বন্যা ও পদ্মার ভাঙনে আতঙ্কে এলাকাবাসী : কয়েক দিনের ব্যবধানে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কুমারভোগ ইউনিয়নের খড়িয়া গ্রাম ও লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ৭০ পরিবারের ভিটেমাটি পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে আরো শতাধিক পরিবারসহ খড়িয়া মসজিদ। ফলে তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। এদিকে গত শুক্র, শনি ও গত রোববার ভাঙন এলাকা ঘুরে স্থানীয় লোকজনকে বাড়িঘর সরিয়ে নিতে হিমশিম খেতে দেখা গেছে। কুমারভোগ ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জাকির হোসেন বলেন, গত তিন দিনে অন্তত ৭০ হাত জায়গা নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। ভাঙনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিতে আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। একই গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য রফিজ উদ্দিন জানান, নদীর পাড়ে মাসের পর মাস ভারী জাহাজ ও ট্রলার ভেড়ানোর কারণে ভাঙনের মাত্রা বেশি হয়েছে। কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি জাহাজ ভেড়ানোর বিনিময়ে পয়সা নিয়েছেন। গত শতকের নব্বই দশকে টানা ১০ বছর পদ্মার ভাঙনে তেউটিয়া ও ধাইদা ইউনিয়ন দুটির অধিকাংশ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এরপর দুই দশক ভাঙন বন্ধ থাকে। পাঁচ-ছয় বছর আগে খড়িয়া থেকে আধা কিলোমিটার দূরত্বে বালু ফেলে শিমুলিয়াঘাট তৈরি করা হয়। ফলে পদ্মার এই শাখা নদীর বাঁক পরিবর্তন হওয়ায় ¯্রােত এসে খড়িয়া গ্রামে সরাসরি আঘাত করে। এর ফলে প্রতিবছর বর্ষাকালে নদীতে লৌহজংয়ের কোথাও না ভাঙলেও খড়িয়া এক এক করে ভেঙেই চলেছে। ভিটেমাটি ভাঙনের মুখে থাকা মাহবুব হোসেন বলেন, আমরা ত্রাণ কিংবা আর্থিক সহযোগিতা চাই না। সরকারের কাছে একটাই দাবি, নদীশাসন করে আমাদের ভিটেমাটি রক্ষা করা হোক। স্থানীয়রা দাবি করেন, খড়িয়া গ্রাম থেকে এক কিলোমিটার দূরত্বে পদ্মা সেতুর নদীশাসনের কাজ চলছে। সেতুর হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের সঙ্গে সামান্য কিছু খরচ এখানে করলে এ এলাকা ভাঙন থেকে রক্ষা পেত। বেঁচে যেত তাঁদের বাপ-দাদার ভিটেবাড়িসহ হাজারো এলাকাবাসী। স্থানীয়রা আরো বলেন, খড়িয়া গ্রামের পাশাপাশি চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা পদ্মার ভাঙন ও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। সে সঙ্গে চরের নয়টি গ্রামের বাসাবাড়িতে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চরবাসী। ফলে জীবনযাত্রা হয়ে পড়ছে দুর্বিষহ। চরাঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর এখনই ত্রাণ প্রয়োজন। এরই মধ্যে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ মুরাদ আলী ভাঙন ও বন্যাকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন। লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কাবিরুল ইসলাম খান বলেন, খড়িয়ার ভাঙন সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। এলাকাটি এরইমধ্যে পদ্মা সেতুর নদীশাসনের আওতায় রয়েছে। আগামি অর্থবছরে ভাঙনরোধে কাজ শুরু হবে।
বন্যায় ২৮২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ: বন্যার পানি ঢুকে সিরাজগঞ্জের পাঁচটি উপজেলার ২৮২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে গেছে; নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে সাতটি। জেলা শিক্ষা অফিস জানায়, বন্যা কবলিত এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৬৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। আর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ছয়টি প্রাথমিক ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিক মোহাম্মদ ইউসুফ রেজা বলেন, জেলার পাঁচটি উপজেলার ২১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এসব বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন,বন্যা কবলিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কাজিপুরে ৮৬, চৌহালিতে ১৯, সিরাজগঞ্জ সদরে ২৫, শাহজাদপুরে ৬৫, এবং বেলকুচি উপজেলায় ২০টি রয়েছে। আর যমুনা নদীর ভাঙ্গনে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে- চৌহালি উপজেলার অ্যাওয়াজী কাঠালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিদাশুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চৌবারিয়া পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিলজলহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেলকুচি উপজেলার রতনকান্দি সোহাগপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সিরাজগঞ্জ সদরে বেতুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়া বেলকুচি উপজেলার চরবেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মেহেরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং শাহজাদপুর উপজেলার বাঐখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদী ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে বলে এ শিক্ষা করর্মকর্তা জানান। তিনি বলেন, সিরাজগঞ্জ সদরে চারটি, কাজিপুরে সাতটি, বেলকুচিতে দুইটি এবং চৌহালিতে দুইটি বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র্র খোলা হয়েছে। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.শফিউল্লা বলেন, বন্যার পানি প্রবেশ করায় জেলার ৬৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে চৌহালিতে ২১, কাজিপুরে ১৯, শাহজাদপরে ১০, বেলকুচিতে ১০ এবং সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় ৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তিনি বলেন, চৌহালী উপজেলার চরপাচরিয়া উচ্চবিদ্যালয় নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়াও বন্যার পানির প্রবল স্রোতে কাজিপুর উজেলার নাটুয়ারপাড়া কেবি উচ্চবিদ্যালয় ও নিশ্চিন্তপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রবেশের রাস্তা ধসে গেছে।