বিশেষ প্রতিবেদক : একটি শিশুর নিখোঁজ হওয়াকে কেন্দ্র করে কিশোর ও নারীসহ চারজনকে জেল খাটতে হলো বিনা দোষে। ২০১৪ সালে প্রথমে শিশুটিকে অপহরণ ও পরে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়। তদন্ত করে একই পরিবারের তিনজনসহ চারজনের কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও আদায় করে ডিবি। কিন্তু দীর্ঘ ৫ বছর পর শিশুটি পরিবারের কাছে ফিরে আসায় খুলতে শুরু করে ঘটনার জট।
৫ম শ্রেণি পড়ুয়া সন্তান আবু সাঈদ নিখোঁজের ঘটনায় ২০১৪ সালের এপ্রিলে রাজধানীর হাজারীবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন বাবা মো. আজম। এর পরপরই সাঈদকে অপহরণের দাবি করে গাইবান্ধার একটি প্রতারকচক্র। সাড়ে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দেয়ার পরও ফেরেনি সাঈদ। জুলাইয়ে শিশুটির বাবার করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ওই চক্রের তিনজন আটক হয়। কিন্তু ঘটনার কূল-কিনারা না হওয়ায় তদন্তের ভার পায় গোয়েন্দা পুলিশ।
এরপরই সাঈদের স্কুল থেকে ক্যান্টিন বয় নিখোঁজ হবার জেরে চারজনকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। জানা যায় বরিশালগামী একটি লঞ্চ থেকে নদীতে ফেলে শিশুটিকে হত্যা করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিও দেয়।
পাঁচ বছর পর নাটকীয়ভাবে বাড়ি ফিরে এলো নিখোঁজ সাঈদ। পড়াশোনার চাপ নিতে না পারায় পালিয়ে যাওয়ার দাবি করে সে।
আবু সাঈদ বলেন, নিজে নিজেই বাসে উঠেছি। এখান থেকে গাবতলীর বাসে উঠেছি। এরপর নবীনগর থেকে গিয়েছি শ্রীপুর। গাড়ির হেলপার হয়ে থেকেছি। গাড়িতেই খেয়েছি, সেখানেই থেকেছি। বাবা-মার কথা মনে পড়ায় চলে এসেছি।
এ ঘটনায় কথিত সাঈদ হত্যা মামলার আসামিদের দাবি, একই পরিবারের ৩ জনসহ ৪ জনকে ডিবি কার্যালয়ে ৭ দিন আটকে রেখে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি আদায় করা হয়।
ভুক্তভোগী সাইফুল বলেন, চোখ বেঁধে পিটিয়েছে তবুও আমি স্বীকার করিনি। পরে আমাকে মাটিতে ফেলে পাড়িয়েছে। এরপর ব্যথায় আমাকে যা শিখিয়েছে তাই বলেছি।
আফজাল বলেন, আমার বোন, বাবাকে গ্রাম থেকে ডিবি মনির তুলে এনে একটি মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। ৮-১০ দিন অত্যাচারের পর আমি তাদের কথা শুনতে বাধ্য হয়েছি।
ভুক্তভোগী সোনিয়া বলেন, দু’ ঘণ্টা পরপরই আমাদের মারত। যে সময় মনে হয় সে আমাদের মারত।
মামলার বাদী মোহাম্মদ আজমও দায় চাপালেন গোয়েন্দা পুলিশের ওপর।
আবু সাঈদের বাবা মো. আজম বলেন, মানুষ এখন পুলিশের কাছেই মার খায়।
আসামিপক্ষের আইনজীবী বলছেন, এমন ঘটনা লজ্জাজনক। আসামিপক্ষের আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, আদালতে আমি এ ব্যাপারে সামনের সপ্তাহেই জানাবো। ভিকটমকে পাওয়া গেছে। এছাড়া যারা নির্দোশ তাদের এভাবে অত্যাচারেরও বিচার চাইব।
হাজারীবাগ থানার ওসি বললেন, এ বিষয়ে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। অফিসার ইনচার্জ ইকরাম আলী বলেন, ভুক্তভোগীরা যদি আইনি কোনো সহযোগিতা চাইলে অবশ্যই উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব। দোষীদের বিচারের দাবি ভুক্তভোগীদের।