বিনোদন ডেস্ক : আসন্ন শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে এফডিসি এখন বেশ সরগরম। আর এই নির্বাচনকে ঘিরেই চলতি কমিটি নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন অনেকেই।
গত নির্বাচনে এক প্যানেল থেকে সহসভাপতি পদে চিত্রনায়ক রিয়াজ, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে চিত্রনায়ক ফেরদৌস ও চিত্রনায়িকা পপি নির্বাচিত হন। এবং একই প্যানেলে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক পদে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসেন মিশা সওদাগর ও জায়েদ খান।
একই প্যানেলের হলেও তাদের মধ্যে এখন সুসম্পর্কটা নেই। মিশা-জায়েদ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে প্যানেল থেকে বের হয়ে গেছেন রিয়াজ, পপি ও ফেরদৌস।
তহবিলের অর্থের হিসেবে অসচ্ছতা, সদস্য বাদ দেয়া ও নতুন সদস্য নেয়ার প্রক্রিয়ার অনিয়ম উল্লেখ করে অভিযোগ এনেছেন তারা। আর এতেই বিতর্কিত কান্ড ঘটছে এখন এফডিসিতে।
গেল নির্বাচনে এক প্যানেলে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসেন সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারন সম্পাদক জায়েদ খান। তাদের প্যানেল থেকে সহসভাপতি পদে নির্বাচিত হন চিত্রনায়ক রিয়াজ, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন চিত্রনায়ক ফেরদৌস ও চিত্রনায়িকা পপি।
সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সাক্ষাতকারে বলেন, শিল্পীদের জন্য ফান্ড গঠন করতে একটি চ্যারিটি অনুষ্ঠান থেকেও ৫০ হাজার করে টাকা নিয়েছেন রিয়াজ, ফেরদৌস ও পপি। শিল্পী সমিতি ও শিল্পীদের প্রতি কোনো দায় নেই তাদের। এজন্যই ফান্ড গঠনের চ্যারিটি অনুষ্ঠান থেকেও পারিশ্রমিক নেন তারা। তারা ছাড়া অন্য কেউ টাকা নেননি।
বাদ যাননি জায়েদ খানও। মিশার কথার সঙ্গে একই সুর মিলিয়ে এই তিন তারকার দায়বোধের প্রতি আঙুল তুলে গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জায়েদ খান বলেন, ‘উনারা সমিতির তহবিল নিয়ে বড় বড় কথা বলে। দুই বছরে তারা একটি পয়সাও তহবিলে দেননি। কোথাও থেকে আনেনওনি। তাদের কী অবদান আছে সমিতিতে? কেউ মারা গেলেও তারা আসেননি, কোনো মিলাদেও অংশ নেননি। উল্টো শিল্পী সমিতির ফান্ড গঠনের অনুষ্ঠান থেকে ৫০ হাজার করে পারিশ্রমিক নিয়েছেন রিয়াজ ও ফেরদৌস। নায়িকা পপিও তাদের সঙ্গে টাকা নিয়েছেন।’
এসব মিথ্যাচার দেখে মিশা-জায়েদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন চিত্রনায়িকা পপি। তিনি বলেন, ‘কে টাকা দিয়েছে? কার নামে? রশিদটা কোথায়? শুধু এই একটা শোয়ের কথা কেন বলা হচ্ছে? আমি তো সমিতির জন্য অনেক অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেছি। রিয়াজ, ফেরদৌস, পূর্ণিমা, সাইমন, অপুসহ আরো অনেকেই এসব অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। কখনো পুলিশের অনুষ্ঠান, কখনো র্যাবের, অনেক রকম অনুষ্ঠান। এক টাকাও পারিশ্রমিক নিইনি আমি। একটা পারফর্ম করলে তো অনেক সহশিল্পী রাখতে হয়। তাদের টাকা দিতে হয়। সেই টাকাটাও দেয়া হতো না। ভাবতাম সমিতির জন্যই কাজ করছি। সমস্যা নেই। জায়েদ বলতো অমুকের অনুষ্ঠান, তমুকের অনুষ্ঠান টাকা নেয়া যাবে না। সমিতির ফান্ডের জন্য কিছু ডোনেশান আসবে। তো কত টাকা ডোনেশান আসলো? সেই টাকা কোথায় কীভাবে খরচ করা হয়েছে জানতে চাই। এখানে শিল্পীদের পরিশ্রম, ঘাম মিশে আছে। দুই বছরে লাখ লাখ টাকা এসেছে সমিতিতে, হিসেবটা পাইনি। উল্টো অভিযোগ তোলা হচ্ছে। দুই বছরে অনেক কিছু দেখেছি। যখন কোথাও থেকে টাকা আনার দরকার হয় তখন শিল্পীদের ডাক পড়ে। আসুন, শো আছে। এরপর আর কোনো খবর নেই। যখন কাউকে টাকা দেয়ার সময় আসে তখন তারা দুইজন। ফেসবুক ভরিয়ে ফেলে ছবি দিয়ে। সব ক্রেডিট তারা নেয়। আমরা আত্মীয় স্বজনকে দেখতে গেলে, কিছু সাহায্য করলে কী সেটা পাড়া পড়শীকে জানিয়ে করি? কিন্তু দুই বছর ধরেই তারা এমন করে শিল্পীদের ছোট করেছে বলে মনে করি আমি।’
পপি বলেন, ‘এখন নাকি আবার বলছে সমিতির কেউ কিছু করেনি। সব তারা দুজন আর তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা। তাদের দেখে কেউ এক টাকা দিয়েছে না দেবে? শুধু কী তাই? দুই বছরে একটা এজিএম করেনি। অভিযোগের শেষ নেই। আমরা নানা অনিয়ম দেখে অভিযোগ তুলে এবার তাদের প্যানেলে যেতে রাজি হইনি। এজন্যই তারা দুই মাস ধরে আমাদের সাথে বাজে আচরণ করছে। নানা রকম ব্লেম দিয়ে যাচ্ছে। হাসি পায়, তাই বলে ৫০ হাজার টাকার মানহানি করবে? আমি বা রিয়াজ, ফেরদৌসরা ৫০ হাজার টাকার শিল্পী? ওদের মতো ভাবে সবাইকে, তাই না? আর যদি ধরেও নেই যে আমরা তিনজন নারায়ণগঞ্জে ৫০ করে দেড় লাখ টাকা নিয়েছি তাহলে আরও তো আড়াই লাখ টাকা বাকী। সেগুলো কোথায়? ওই প্রোগ্রামে ৮ লাখ টাকার ৪ লাখ টাকা যাবে সমিতির ফান্ডে আর ৪ লাখ টাকা খরচ করা হবে শিল্পীদের পারফর্ম বাবদ। আমরা তিনজন দেড় লাখ নিয়ে নিলাম। তাহলে বাকী টাকা কোথায়? জোচ্চুরি করে আবার বড় বড় কথা বলা হচ্ছে! ওদের লাজ লজ্জাও কিছু নেই নাকি!’
নির্বাচনে না আসার কারণ জানিয়ে পপি বলেন, ‘আসলে গেল দুই বছরে সমিতির সঙ্গে থেকে ও অনেক কিছু দেখে নির্বাচনের ইচ্ছেটা মরে গেছে। আর যেটা বুঝেছি তারা দুজন নিজেদের কোরাম আগে থেকেই ঠিক করে নিয়েছে। যারা নায্য কথা বলে, যারা অনিয়ম হলে প্রতিবাদ করে তারা সমিতিতে নেতৃত্বে আসুক এটা তারা চায় না। হঠাৎ করে শুনি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়ে গেছে। আমি কিছু জানতেই পারিনি। পুরো দুই বছরেই এমনটা হয়েছে। কমিটির বা সমিতির কোনো ঘটনা থাকলে অন্যদের কাছে আমাকে শুনতে হয়েছে। শুধু পারফর্মের বেলায় পপিকে ডাকো অন্যসব কাজে গুরুত্বহীন করে রেখেছিলো। সিদ্ধান্ত তো যা নেয়ার তারাই নিয়েছে। এটা বিশেষ করে হয়েছে যখন দেখলো সাংবাদিকরা তাদের চেয়ে তারকা সদস্যদের প্রাধান্য দেয় তখন থেকেই। বহুবার ভেবেছি এসব নিয়ে কথা বলি। কিন্তু সেই সুযোগটা আসেনি। তাছাড়া শিল্পী হয়ে শিল্পী সমিতি নিয়ে নাড়াচাড়া করতে ইচ্ছেও করেনি। ভেবেছি সরে যাবো। যা পারে তারা করুক। কেউ যদি কোনোদিন পারে তাদের থামাবে। কিন্তু এখন তারা আমার বা আরও অনেকের উপর অন্যায় অভিযোগ চাপিয়ে দিচ্ছে। চুপ করে থাকার সুযোগ নেই।’
আক্ষেপের সুরে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত এই নায়িকা বলেন, ‘বিষয় হলো, সিনিয়ররা অনেকেই না বুঝে তাদের হয়ে কথা বলছেন। হয়তো শিগগিরই তারাও তাদের ভুল বুঝতে পারবেন। এটা যত দ্রুত হবে সমিতির জন্য তত মঙ্গল।’