নিজস্ব প্রতিবেদক : বহুল আলোচিত গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা মামলার রায় আগামী ২৭ নভেম্বর দেয়া হবে। এ মামলার রায় ঘিরে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। মামলায় অভিযুক্ত আসামিদের সবাই কারাগারে বন্দি রয়েছেন। বাইরে থাকা জেএমবি ও নব্য জেএমবির সদস্যরা যেনো কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সেজন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। যার ধারাবাহিকতায় রাজধানী ঢাকায় বেশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
ইতোমধ্যে হিজবুত তাহরীর, জেএমবি ও নব্য জেএমবির বেশকজন শীর্ষ নেতা ধরা পড়েছে। বাকিদের অবস্থান ও কর্মকাণ্ড নজরদারি চলছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, জঙ্গিরা এ ধরনের বিচারের রায়ের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বেই বিভিন্ন সময়ে তাদের শক্তি প্রদর্শন করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। বাংলাদেশেও তারা শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করতে পারে।
ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, জঙ্গিদের ছোট ছোট সেলগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় রয়েছে। সেগুলোর উপর আমাদের নজরদারি রয়েছে। জেমবি সদস্যদের মধ্যে বিস্ফোরক বানাতে পারে এখনো এমন সদস্য সক্রিয় আছে। তাদেরকে ধরার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
মামলার রায়কে কেন্দ্র করে নাশকতার আশংকা রয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, এ মামলাটির তদন্ত অনেক জটিল ছিল। কারণ যে পাঁচজন হামলায় অংশগ্রহণ করেছিল তারা সবাই ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি গ্রেপ্তার আসামিদের কাছ থেকে তথ্য এবং ঘটনাস্থলে আলামত সংগ্রহ করে বিভিন্ন বিচার বিশ্লেষণ করে একটি নির্ভুল অভিযোগপত্র দিতে। আমরা আশাবাদী প্রত্যাশা অনুযায়ী রায় পাবো।
সরকারপক্ষের আইনজীবী সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মো. গোলাম ছারোয়ার খান (জাকির) জানান, চাঞ্চল্যকর এই জঙ্গি হামলা ২০১৬ সালের ১ জুলাই মধ্যরাতে ঘটে। একইদিন গুলশান থানায় মামলা দায়ের করা হয়। পরে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে ২৮১/১৮ নম্বর মামলা করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চার্জশিটে আটজনকে অভিযুক্ত করেছেন। তাদের মধ্যে ছয়জন গ্রেপ্তার আর দুজনকে পলাতক দেখানো হয়েছিল। এরপর পরে আরো দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাছাড়া, মামলায় মোট ২১১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ১১৩ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। এই মামলায় আটজন আসামির মধ্যে চারজন আসামির পক্ষে আইনজীবী ছিলেন। আটজন আসামির যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন আইনজীবীরা।
এর আগে গত ৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করা হয়। ওইদিনই আসামিপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি উপস্থাপন শুনানি শুরু করেন। যুক্তি উপস্থাপন শুনানি গত ১৭ নভেম্বর শেষ হয়। ওইদিন সকালেই কারাগার থেকে চাঞ্চল্যকর এই মামলার আট আসামিকে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের পরিদর্শক হুমায়ূন কবির ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতের জিআর শাখায় মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর ৮ আগস্ট এই আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন আদালত। একই বছরের ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর আটজন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। অভিযোগপত্রের ২১ জন আসামির মধ্যে ১৩ জন বিভিন্ন সময়ে মারা যায়। পরে তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। এ সময় তাদের গুলিতে দুই পুলিশ সদস্য নিহত হন। এই ঘটনার দিন ভোরে গুলশানের হলি আর্টিজানে সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন থান্ডারবোল্টে’ নিহত হন পাঁচজন। এছাড়া ‘জঙ্গি আস্তানায়’ বিভিন্ন সময়ে অভিযানে নিহত হন আটজন। এ ঘটনায় গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করে পুলিশ।