লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা

আন্তর্জাতিক এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

মৃত্যু আরও ১০ জনের
আক্রান্ত বেড়ে ৩৭৭২
ঢাকা বিভাগ বেশি আক্রান্ত

মহসীন আহমেদ স্বপন : বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ। ২১০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাস বুধবার পর্যন্ত ১ লাখ ৭৭ হাজার ৭৭৫ জন মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়ার্ল্ডোমিটারে এ সংখ্যা নিশ্চিত করা হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন প্রায় ৭ লাখ মানুষ। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ১৬ লাখ ৮৯ হাজার ৯৬ জন। এদের মধ্যে ১৬ লাখ ৩১ হাজার ৬১০ জনের জনের শরীরে মৃদু সংক্রমণ থাকলেও ৫৭ হাজার ২৪৫ জনের অবস্থা গুরুতর।
এ দিকে বাংলাদেশে নতুন করে আরও ৩৯০ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৩৭৭২ জনে। এছাড়া করোনা আকান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ১০ জন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১২০ জনে। বুধবার দুপুরে করোনা ভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন সংবাদ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, অধিদফতরের কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. শহীদুল্লাহ।
বুলেটিনে বলা হয়, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় তিন হাজার ৯৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সব মিলিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩২ হাজার ৬৭৪টি। নতুন যে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে তার মধ্যে আরও ৩৯০ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ফলে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৭৭২-এ। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ১০ জন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১২০ জনে। এছাড়া সুস্থ হয়ে উঠেছেন আরও পাঁচজন। ফলে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা ৯২।
শুরুতে ডা. মো. শহীদুল্লাহ পিপিইসহ চিকিৎসা সামগ্রী গ্রহণ ও বিতরণের তথ্য তুলে ধরেন।
বুলেটিন উপস্থাপনকালে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে বাড়িতে থাকার এবং স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর প্রথম দিকে কয়েকজন করে নতুন আক্রান্ত রোগীর খবর মিললেও এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এ সংখ্যা। সবশেষ হিসাবে দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজার ৭৭২। মারা গেছেন ১২০ জন। সুস্থ হয়েছেন ৯২ জন।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। নিয়েছে আরও নানা পদক্ষেপ। এসব পদক্ষেপের মূলে রয়েছে মানুষে মানুষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, বিশেষত ঘরে রাখা। কিন্তু সশস্ত্র বাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশের টহল জোরদার করেও মানুষকে ঘরে রাখা যাচ্ছে না বিধায় করোনাভাইরাসের বিস্তার উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
করোনার সংক্রমণ ক্রমাগত বাড়তে থাকলেও দুইদিন আগে বুলেটিনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক দাবি করেছিলেন ইউরোপ আমেরিকার চেয়ে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি ভালো। এছাড়া অন্যান্য দেশে করোনার চিকিৎসায় যখন বারবার ভেন্টিলেটরের কথা উঠে আসছে তখন তিনি জানিয়েছিলেন, ভেন্টিলেটরে যাদের নেয়া হয় তাদের মারা যাওয়ার সংখ্যাই বেশি। ওই দিন তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ভেন্টিলেটরে নেয়া ৯ জনের মধ্যে মারা গেছেন আট জন।
এদিকে ভাইরাসটির সংক্রমণে ইউরোপেও মৃত্যুর হার কমতে শুরু করেছে। বাড়ছে সুস্থতার হার। এজন্য অনেক দেশ লকডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। জার্মানিও এমন নিয়েছে এমন সিদ্ধান্ত। যদিও এতে ফল খারাপ হলে আগের মতোই কঠোর লকডাউনে ফেরার ঘোষণা দিয়েছে তারা। আক্রান্তের সংখ্যায় শুরুর দিকে থাকা দেশগুলোর মধ্যে জার্মানিতেই মৃত্যুর হার সবচেয়ে কম। তবে লকডাউন কিছুটা শিথিল করে আবারও পূর্বের অবস্থায় ফিরেছে স্পেন। শিথিল করার পর আক্রান্তের সংখ্যা আবারও বাড়তে শুরু করায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। প্রতিবেশী দেশ ভারতও লকডাউন শিথিল করেছে। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও কিছুক্ষেত্রে এই শিথিলতা আরোপ করেছে দেশটি।
বুধবার পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার তথ্য অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ লাখ ৭৭ হাজার ৭৭৫ জন। এছাড়া এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে প্রায় ২৬ লাখ। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন প্রায় ৭ লাখ মানুষ। এদের মধ্যে ১৬ লাখ ৩১ হাজার ৬১০ জনের জনের শরীরে মৃদু সংক্রমণ থাকলেও ৫৭ হাজার ২৪৫ জনের অবস্থা গুরুতর।
ভাইরাসটির আক্রমণে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের। সেখানে ৮ লাখ ১৯ হাজার ১৬৪ জনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ৪৫ হাজার ৩৪০ জন।
মৃতের সংখ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের পরে অবস্থানে রয়েছে ইউরোপের দেশ ইতালি। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২৪ হাজার ২৮২ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৯৫৭ জন।
ইতালির পরের অবস্থানেই রয়েছে স্পেন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২৪ হাজার ৬৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে অবশ্য ২য় অবস্থানে রয়েছে এ দেশটি। এখানে ২ লাখ ৪ হাজার ১৭৮ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
মৃত্যুর তালিকার চার নম্বরে রয়েছে ফ্রান্স। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২০ হাজার ৭৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫০ জন।
ফ্রান্সের পরের অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১৭ হাজার ৩৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ২৯ হাজার ৪৪ জন।
এদিকে জার্মানিতে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৫৩ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৮৬ জনের।
ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত হয় চীনে। সেখানে এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৮২ হাজার ৭৮৮ জন এবং মারা গেছেন ৪ হাজার ৬৩২ জন।
এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ইরানে। এখানে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৮৪ হাজার ৮০২ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ২৯৭ জনের।
বেশি আক্রান্ত ঢাকা বিভাগে : দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ হাজার। এর মধ্যে ঢাকাতেই ১ হাজার ২৭০ জন। সংখ্যার হিসেবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীতে এখন পর্যন্ত ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা সারা দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর অর্ধেক। এর মধ্যে শুধু পুরান ঢাকাতেই ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়। এই রোগে দেশে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ১৮ মার্চ। প্রথম মারা যাওয়া ব্যক্তিও রাজধানীর বাসিন্দা ছিলেন।
গত সোমবার পর্যন্ত রাজধানীতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ১৭৪ জন, যা মোট আক্রান্তের ৩৫ শতাংশ। আর রাজধানীতে মৃত্যুর সংখ্যা দেশে মোট মৃত্যুর ৪৮ শতাংশ। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুযায়ী, দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে বুধবার পর্যন্ত ১২০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
দেশে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়েছে শহর থেকে গ্রামে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এখনও সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ঢাকা বিভাগের জেলাগুলো। এসব জেলায় বিপুল সংখ্যক শিল্প কারখানার শ্রমিকের বসবাস। দেখা যাচ্ছে, লকডাউন দিয়েও তাদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এদের মাধ্যমে নতুন এলাকায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি দেখছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ খান আবুল কালাম আজাদ। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরে কারফিউ জারি করে প্রত্যেকের ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় বসবাসকারীদের ঘরে রাখতে না পারলে গোটা দেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা চিকিৎসকদের।


বিজ্ঞাপন