খোলা মাঠে রাজধানীর অর্ধেক কাঁচাবাজার

এইমাত্র জাতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জনসমাগম এড়াতে রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলো খোলা মাঠে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় অর্ধেক বাজার খোলা রাস্তা, মাঠ ও উন্মুক্ত ফুটপাতে বসানো হয়েছে। পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট শাখার উদ্যোগে বাজারগুলো স্থানান্তর করা হয়। পর্যায়ক্রমে সবকটি বাজার এভাবে সরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশন।
রাজধানীতে দুই সিটি করপোরেশনের দেড় শতাধিক মার্কেট রয়েছে। এসব মার্কেটের মধ্যে ২৮টি কাঁচাবাজার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটির ১৩টি এবং উত্তর সিটির ১৫টি মার্কেট রয়েছে। এসব মার্কেটে চলাচলের জয়গা খুবই কম। গাদাগাদি করে এসব স্থান থেকে কাঁচাবাজার করতে হচ্ছে নগরবাসীকে। এতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয় না। এ থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই অবস্থায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে দেশের সব কাঁচাবাজার উন্মুক্ত এবং খোলা মাঠে স্থানান্তরের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাস ঠেকাতে গত ১২ এপ্রিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে কাঁচাবাজারগুলো উন্মুক্ত ও খোলা স্থানে স্থানান্তরের জন্য দেশের সব জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনায় স্কুলের মাঠ, খেলার মাঠ বা খোলা জায়গায় বাজারগুলো স্থানান্তর করতে বলা হয়েছে।
এর পরপরই ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এবং দুই সিটি করপোরেশন মিলে রাজধানীর মোট ২৮টি কাঁচাবাজারের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ বাজারগুলো উন্মুক্ত স্থানে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া ওয়ার্ডভিত্তিক যেসব কাঁচাবাজার রয়েছে সেগুলোও উন্মুক্ত স্থানে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ইতোমধ্যে প্রায় অর্ধেক কাঁচাবাজার খোলা জায়গা ও মাঠে সরানো হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৭৭টি মার্কেট রয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি মার্কেট কাঁচাবাজার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে—নিউ মার্কেট বনলতা কাঁচাবাজার, কাঁঠালবাগান কাঁচাবাজার, হাতিরপুল কাঁচাবাজার, খিলগাঁও রেলওয়ে কাঁচাবাজার, সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজার, দয়াগঞ্জ ওয়ারী কাঁচাবাজার, ধলপুর মালতিলতা কাঁচাবাজার, শ্যামবাজার কাঁচাবাজার, বাদামতলী কাঁচাবাজার, নওয়াব ইউসুফ কাঁচা মার্কেট, মিরনজল্লাহ কাঁচাবাজার ও ঠাটারী বাজার কাঁচাবাজার। এর মধ্যে নয়াবাজার নবাব ইউসুফ মার্কেট কাঁচাবাজারটি আরমানিটোলা খেলার মাঠে, খিলগাঁও কাঁচাবাজার পাশের মাঠে, মালিবাগ কাঁচাবাজার জনপথ সড়কে বসছে। নিউমার্কেট কাঁচাবাজার পাশের মূল সড়কে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসূফ আলী সরদার বলেন, আমাদের যেসব কাঁচাবাজার রয়েছে, সেগুলো খোলা মাঠ ও উন্মুক্ত স্থানে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরই মধ্যে কয়েকটি বাজার সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোও পর্যায়ক্রমে সরিয়ে নেওয়া হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১৫টি কাঁচাবাজার রয়েছে। এর মধ্যে বনানী, মিরপুর-১ নম্বর, মিরপুর-১১ নম্বর, কল্যাণপুর বাজারগুলো খোলা জায়গায় সরানো হয়েছে। কাওরানবাজারে খুচরা বিক্রি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
জানতে চাইলে ডিএনসিসির ভারপ্রাপ্ত মেয়র জামাল মোস্তফা বলেন, ‘স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাদের যেসব কাঁচাবাজর ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে সেগুলো খোলা মাঠে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরই মধ্যে গুলশান-১ ও ২-এর কাঁচাবাজার ওয়ান্ডারল্যান্ড মাঠে স্থানান্তর করা হয়েছে। এসব বাজার সকাল থেকে শুরু করে দুপুর ২টার মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন কাঁচাবাজার ছাড়াও অন্যান্য কাঁচাবাজারেও পুলিশের সহায়তায় উন্মুক্ত স্থানে স্থানান্তর করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে খুচরা বিক্রেতাদের জন্য অস্থায়ী কাঁচাবাজার বা দোকান বসিয়েছে পুলিশ। নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে এসব দোকান বসানো হয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে তেজগাঁও বিজ্ঞান কলেজের সামনের সড়কে খুচরা বিক্রেতাদের জন্য অস্থায়ী দোকান বসিয়ে দিয়েছে পুলিশ। কাওরানবাজারে কয়েকজন ব্যবসায়ী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর বাজারটিতে খুচরা বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই খুচরা বিক্রেতাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাদের নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে একেকটি দোকান বসতে দেওয়া হয়েছে। অনেক ক্রেতা ও বিক্রেতাকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে গ্লাভস ও মাস্ক পরিধান করে এখানে কেনাকাটা করতে দেখা গেছে।


বিজ্ঞাপন