চলছেই নিয়ম ভাঙার হিড়িক

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন

সেনাবাহিনী-জনগণের লুকোচুরি

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে সেনাবাহিনী রাজধানীকে কঠোর তদারকির মধ্যেও রাখলেও অনেকেই তা মানছেন না। মাস পার হয়ে গেলেও এখনও সচেতন হয়নি নগরবাসী। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখলেই লোকজন সরে যাচ্ছেন। টহল চলে গেলেই আগের অবস্থা ফিরে আসে।
অন্যদিকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস যুদ্ধে ঘরে থাকার নির্দেশনা মানছেন না অনেকেই। বেতন বোনাসের দাবিতে রাস্তায় গার্মেন্টস শ্রমিকরা, পাইকারি ও কাঁচাবাজারে হামলে পড়ছে মানুষ। পাড়া-মহল্লায় চুটিয়ে চলছে আড্ডা। মানা হচ্ছে না সামাজিক-শারিরিক দূরত্বও। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার নামে জনসাধারণের অবাধে চলাফেরা সবই বেড়েছে। বিনা প্রয়োজনেও ঘর থেকে রাস্তায় বের হচ্ছেন কেউ কেউ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি আছে শুধু মহাসড়ক ও প্রধান সড়কে। রাজধানীর অলি-গলিতে কোনো বিধিনিষেধের বালাই নেই। এসব কারণে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শঙ্কা বাড়ছেই।
মানিকনগর, খিলগাঁও, বাসাবো ও যাত্রাবাড়ী করোনাভাইরাস কবলিত এলাকা হিসেবে চিহিৃত। বাসাবোর বৌদ্ধ মন্দির এলাকা, খিলগাঁও চৌরাস্তা, রেললাইন সংলগ্ন বাজার, তালতলা, যাত্রাবাড়ী পাইকারি আড়ৎ, শনিরআখড়া ও দনিয়া এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অলি-গলিতে সবজি দোকান ঘিরে মানুষের ভিড়। প্রায় সবার মুখে মাস্ক থাকলেও দূরত্ব বজায় রাখছেন না তেমন কেউ। হ্যান্ড গ্লাভস ছাড়াই পণ্য বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
খিলগাও’র তালতলা বাজারে দেখা গেছে, কাঁচাবাজারের সামনে মোটরসাইকেল থামিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন তরুণরা। মধ্য বয়সী অনেকেই হাঁটাহাঁটি করছেন। বাজারের সামনে সারিবদ্ধভাবে রয়েছে অনেকগুলো রিকশা। তালতলা থেকে মালিবাগ হয়ে কাকরাইল পর্যন্ত দেখা গেছে একটু পর পর দ্রুত গতিতে ছুটে যাচ্ছে প্রাইভেট কার, পিকআপ, মোটরাসাইকেল। মূল সড়কেও যাত্রী নিয়ে চলছে রিকশা। রামপুরা ওয়াপদা রোড সংলগ্ন ডিআইটি রোডে রয়েছে পুলিশের একটি চেকপোস্ট। বেশিরভাগ সময় সেখানে পুলিশ সদস্যরা থাকেন না। যাত্রাবাড়ী পাইকারি বাজারে ভোর থেকে হাজার হাজার মানুষের ভিড়। সকালে বাজার উপচে চলে আসে প্রধান সড়কে। শনিরআখড়ার গোবিন্দপুর ও জিয়া স্মরণীতে হাজার হাজার মানুষের ভিড় লেগে থাকে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত। ভাবখানা এমন যেন বেলা ২টার মধ্যে ভিড় করলে সংক্রমণের ভয় নেই। এ নিয়ে দেশি বিদেশি মিডিয়ায় অনেক সমালোচনা হয়েছে। তাতে মানুষের যেমন হুঁশ ফেরেনি, পুলিশেরও টনক নড়েনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজন জানান, এ নিয়ে তারা বহুবার যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশকে জানিয়েছেন। ডিসি, এসি, ওসিকে জানিয়েছেন। কিন্তু কোনোই কাজ হয়নি।
অন্যদিকে, পুরান ঢাকা, মিরপুর, মোহাম্মদপুরসহ বেশ কিছু এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করেই আড্ডা দিচ্ছে লোকজন। মোহাম্মদপুর এলাকায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এখন পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত। কিন্তু কোনভাবেই দেখে মনে হবেনা নগরীর সংক্রমিত এলাকার মধ্যে প্রথম সারিতে আছে এই এলাকা। দুপুরে ওই এলাকায় ছিল সেনাবাহিনী টহল টিম। মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প, কৃষি মার্কেট এলাকায় বিনা প্রয়োজনে ঘোরাফেরা করছে সাধারণ মানুষ। খোলা রয়েছে দোকানপাটও। যদিও এটি নগরীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। সেখানে আক্রান্তের হারও অনেক বেশি। এসব এলাকায় ভেতরে থেকে দরজা বন্ধ করে ব্যবসা চালাচ্ছেন দোকানীরা। বিষয়টি বুঝতে সেনাবাহিনীর টহল দল গিয়ে আইন অমান্যকারী ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেন। তারা চলে গেলেই সেই আগের অবস্থানে ফিরছে পাড়া-মহল্লার অলি-গলি।
আইইডিসিআর’র তথ্য অনুযায়ী, পুরান ঢাকা, মিরপুর ও মোহাম্মদপুরে সংক্রমণ বেশি। এছাড়াও করোনা সতর্কতায় অনেক এলাকা ও ভবন লকডাউন করা হয়েছে। কিন্তু সেসব এলাকায়ও জনসমাগম থামানো যায়নি। সকালে রামপুরার উলন এলাকার একজন বাসিন্দা জানান, উলনে কাঁচাবাজারের সঙ্গে খোলা রয়েছে জুতা, কাপড়, চা ও কসমেটিকসের দোকান। এসব দোকানে ভিড় রেগেই থাকে।
ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণ করতে শারীরিক দূরত্ব ও গৃহবন্দি থাকার ব্যাপারটি বাস্তবায়ন করতে শুরু থেকে ঢিলেঢালা অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে অনেক স্থানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা করা হচ্ছে। মহাসড়ক ও প্রধান সড়কে বাড়ানো হয়েছে চেকপোস্ট। কিন্তু পাড়া-মহল্লায় কোনো বিধিনিষেধ নেই।
মিরপুর, মোহাম্মদপুরের ক্যাম্পের বাসিন্দারা করোনা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ইতিমধ্যে মিরপুর ১১ এর নন লোকাল রিলিফ ক্যাম্পের একজন আক্রান্ত হয়েছেন। মোহাম্মদপুরের জেনেভা ও স্টাফ কোয়ার্টার ক্যাম্পে আক্রান্ত অনেকে। এরমধ্যে মারা গেছেন একজন।
দূরত্ব বজায় রাখতে পারছেন না বস্তিবাসীও। মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিংয়ের কালুর বস্তিতে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে লুডু খেলছেন লোকজন। অনেকের গলির মোড়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন ত্রাণের আশায়।
ওই বস্তির বাসিন্দা আব্দুল খালেক জানান, বস্তিতে হাঁটার জায়গা নাই। সরু রাস্তা। অল্প জায়গা। দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন। কল্যানপুর পোড়া বস্তির বাসিন্দা রতন মিয়া বলেন, সবাই শুধু বাবার হাত ধুইতে বলে। ঠিকমতো খাবার জোগাতে পারি না, হাত ধোয়ার সাবান কিনবো ক্যামনে?
ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদুর রহমান জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে অকারণে ঘোরা-ফেরা নিয়ন্ত্রণ করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ রাজধানী জুড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। মানুষ যাতে অহেতুক বাইরে বের না হয়। সরকারি নির্দেশ অমান্য করা এবং আইন ভঙ্গের দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত গত দুইদিনে ১২৮টি মামলায় লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করেছে বলে জানান তিনি।


বিজ্ঞাপন