আক্রান্ত হবে ১০০ কোটি মানুষ!

আন্তর্জাতিক এইমাত্র জাতীয় সারাদেশ স্বাস্থ্য

* নমুনা পরীক্ষা প্রায় ৬০
* আক্রান্ত ৭,১০৩ জন
* মৃত্যু ১৬৩ জনের

 

এম এ স্বপন : জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যা ৩০ লাখের বেশি। মৃত্যুর হিসেবে সংখ্যা ২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। ঠিক এই সময়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে যথাযথ সহায়তা দেওয়া না হলে বিশ্বব্যাপী ১০০ কোটি মানুষ এ মারণভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে মার্কিন দাতা সংস্থা দ্য ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি (আইআরসি)।
বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংক্রমণ রোধে দুর্বল দেশগুলোকে আর্থিক ও মানবিক সাহায্য দিতে হবে উল্লেখ করে এক বিবৃতিতে আইআরসি বলেছে, বড় ধরনের বিস্তার রোধে আফগানিস্তান, সিরিয়ার মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর জরুরি সাহায্য প্রয়োজন। দুর্বল দেশগুলোকে যথাযথ সাহায্য দেওয়া না গেলে ভাইরাসটি বিস্তারের গতি কমানো যাবে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আইআরসি বলছে, সারা বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ থেকে ১০০ কোটি হতে পারে। একই সঙ্গে অস্থিতিশীল দেশগুলোয় মৃতের সংখ্যা ৩০ লাখ পেরিয়ে যেতে পারে।
এ বিষয়ে আইআরসির প্রধান ডেভিড মিলিব্যান্ড বলেন, এই সংখ্যা সবাইকে সতর্ক হওয়ার বার্তা দিচ্ছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ও অস্থিতিশীল দেশগুলোয় এই মহামারির ধাক্কা এখনো সে হিসেবে লাগেনি বলতে হবে। সে ধাক্কা কতটা প্রতিহত করা যাবে, সে বিষয়টি এখন পুরোটাই নির্ভর করছে দাতাদের ওপর।
মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে যেন কোনো সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিতের জন্য সরকারগুলোকে একযোগে কাজ করার আহবান জানান তিনি।
আইআরসি বলছে, ভাইরাসটির বিস্তার কেমন হবে তা অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এ ক্ষেত্রে জনঘনত্ব, স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা, সহিংস পরিস্থিতির উপস্থিতি ইত্যাদি থাকলে এর বিস্তার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
সংস্থাটির মতে, এ অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে যদি এখনই ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে রক্ষায় উদ্যোগ না নেওয়া যায়।
এ দিকে দেশে মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও আটজন মারা গেছেন। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মোট ১৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হিসেবে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ৬৪১ জন। ফলে দেশে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা সাত হাজার ১০৩ জন। বুধবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও চার হাজার ৯৬৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৫৯ হাজার ৭০১টি। নতুন যাদের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, তাদের মধ্যে আরও ৬৪১ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ফলে মোট করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সাত হাজার ১০৩ জন। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন আরও আটজন। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬৩ জনে। এছাড়া সুস্থ হয়েছেন আরও ১১ জন। ফলে মোট সুস্থ হয়েছেন ১৫০ জন। যারা নতুন করে মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ছয়জন পুরুষ এবং দুজন নারী। ছয়জন ঢাকার বাসিন্দা এবং দুজন ঢাকার বাইরের। বয়সের দিক থেকে চারজন ষাটোর্ধ্ব, দুজন পঞ্চাশোর্ধ্ব এবং দুজন ত্রিশোর্ধ্ব। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকার এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয় বুলেটিনে।
এদিকে, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩১ লাখ এবং মৃতের সংখ্যা দুই লাখেরও বেশী। তবে এই আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভিন্ন তথ্য।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ফিন্যানসিয়াল টাইমস সম্প্রতি ১৪টি দেশে মৃতের সংখ্যা বিশ্লেষণ করে বলছে, করোনায় মৃতের যে সংখ্যা বিভিন্ন দেশের সরকার প্রকাশ করছে, প্রকৃত মৃতের সংখ্যা তার চাইতে ৬০ শতাংশ বেশি।
আক্রান্তের সংখ্যা নিয়েও এমন দাবি করেছে একধিক সংস্থা। তবে আক্রান্তের সংখ্যা সীমার মধ্যে রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে বিভিন্ন দেশের সরকার। লকডাউন থেকে শুরু করে কারফিউয়ের মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিভিন্ন দেশের সরকার।
এই পদক্ষেপে চীনের মতোই সফলতা পেয়েছে বিভিন্ন দেশ। নিউজিল্যান্ড ও জার্মানি এক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে। অনেক দেশ এই লকডাউন তুলে নেয়ার এবং শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছে। তবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে আবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছে তারা।
এ সিদ্ধান্তের বাইরে বেরুতে পারেনি বাংলাদেশও। ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ার তথ্য প্রকাশের পর ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি চলছে। সারা দেশকে লকডাউন ঘোষণা করা না হলেও কার্যতভাবে তেমনটাই হয়েছে।
ভাইরাসটির প্রতিষেধক ও ভ্যাকসিন আবিষ্কারে যখন দেশে দেশে গবেষণা চলছে তখন চীনের একদল গবেষক দাবি করেছেন এই ভাইরাস আসলে পৃথিবী থেকে কখনোই দূর হবে না। প্রতিবছরই ঘুরে ফিরে আসবে এর প্রাদুর্ভাব। তবে লকডাউন করে ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা সম্ভব।
এই ভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও পরিবেশগত দিক থেকে বেশ উপকৃতই হয়েছে পৃথিবী। বায়ু দূষণের মাত্রা এতটাই কমেছে যে ওজন স্তরে যে ক্ষতি হয়েছিল তার অনেকটাই পুষিয়ে নিয়েছে পৃথিবী।


বিজ্ঞাপন