চট্টগ্রামে আইসিইউ সংকট বড় বিপর্যয়ের শঙ্কা

চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : বন্দরনগরী চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে অক্সিজেন এবং আইসিইউ’র মারাত্মক সংকট। বর্তমানে আড়াই হাজার কোভিড রোগীর বিপরীতে আইসিইউ শয্যা রয়েছে মাত্র ১০টি। এ অবস্থায় চলতি সপ্তাহে অন্তত ৬০টি নিবিড় পরিচর্যা শয্যার ব্যবস্থা করা না গেলে বিপর্যয় নেমে আসার আশংকা করছেন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকদের তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সাড়ে ৩ হাজার রোগীর মধ্যে ৮০ শতাংশ রোগীর কোনো উপসর্গ ছিল না। ১০ শতাংশের ছিল মৃদু উপসর্গ। আর বাকি ১০ শতাংশের মধ্যে ৫ শতাংশকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে বিভিন্ন হাসপাতালে। আর এই ৫ শতাংশ রোগীকে নিয়েই চরম বিপাকে পড়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এক হাজারের বেশি রোগী এখন চিকিৎসাধীন রয়েছেন নগরীর বিশেষায়িত চারটি হাসপাতালে। আর এসব রোগীদের শ্বাসকষ্ট নিবারণের জন্য প্রতিনিয়ত প্রয়োজন হয় অক্সিজেনের পাশাপাশি আইসিইউ সুবিধা।
কিন্তু জেনারেল হাসপাতালের ১০টি শয্যা ছাড়া আর কোনো আইসিইউ’র ব্যবস্থা করতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। ফলে করোনা আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসা সুবিধা না থাকায় মৃত্যু হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৬ জনসহ এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৮৩ জন। এরমধ্যে একজন চিকিৎসক’ও রয়েছেন।
চট্টগ্রাম বিএমএ সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মইজ্জুল আকবর চৌধুরী বলেন, সমগ্র চট্টগ্রামের জন্য ২০টি আইসিইউ বেড এটা নামমাত্র ছাড়া কিছুই না। সাধারণ মানুষের চাহিদার কাছে এটা কখনও পর্যাপ্ত নয়।
চট্টগ্রাম জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটি সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, অক্সিজেন যদি আমরা দিতে পারতাম। তার সাথে আইসিইউ আর ভেন্টিলেটর সাপোর্ট যদি আমরা দিতে পারতাম তাহলে চট্টগ্রামে চিকিৎসার জন্য যে হাহাকার চলছে সেটি কিছুটা হলেও মোকাবেলা করতে পারতাম।
সবচে বেশি বেকায়দায় পড়েছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা। চাহিদার একাংশকেও সুবিধা দিতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চলতি সপ্তাহের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ শয্যার আইসিইউ সুবিধা নিশ্চিত করা না গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবদুর রব।
তিনি বলেন, পরিস্থিতি এখন আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছে বলে আমি বলবো। কারণ এখন ঘরে ঘরে জ্বর আসছে। ঘরে ঘরে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।
করোনা রোগীদের সুবিধার্থে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, হলি ক্রিসেন্ট ক্লিনিক, ইউএসটিসি বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল এবং ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা নিশ্চিতের কথা বলা হলেও গত দু’মাসেও এসবের কোনো সুরাহা হয়নি।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, আইসিইউ নিয়ে আমরা যে সুবিধার কথা বলেছিলাম, আসলে নার্সদের প্রশিক্ষণের ব্যাপার আছে। চিকিৎসক যারা আছেন তারাও পরীক্ষামূলক কাজ শুরু করেছেন। সব আইসিইউগুলো কার্যকরী হতে আরো দুয়েকদিন সময় লাগবে।
শুধু করোনা আক্রান্ত রোগীরা অক্সিজেন কিংবা আইসিইউ সংকটে ভুগছেন, তা নয়। স্বাভাবিক শ্বাসকষ্টের রোগীরাও প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে এই সুবিধা পাচ্ছে না। দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার সাথে সাথে এখানকার ছোট-বড় ৫০টি প্রাইভেট ক্লিনিক চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেয়। অথচ অন্তত ২০টি ক্লিনিকে আইসিইউ সুবিধা রয়েছে।


বিজ্ঞাপন