সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড

জাতীয় জীবন-যাপন স্বাস্থ্য

*অনলাইনে সংগ্রহ হবে করোনার নমুনা

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্বব্যাপী মহামারি রূপ নেয়া করোনাভাইরাসে প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। বাংলাদেশেও প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় রেকর্ড ভাঙছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ২ হাজার ৭৪৩ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৬৫ হাজার ৭৬৯ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ ৪২ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮৮৮ জনে।
রোববার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন।
তিনি ৫২টি ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১২ হাজার ৮৪২টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় আগের কিছু মিলিয়ে ১৩ হাজার ১৩৬টি। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো তিন লাখ ৯৭ হাজার ৯৮৭টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে আরও দুই হাজার ৭৪৩ জনের দেহে। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৬৫ হাজার ৭৬৯ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৪২ জন, যা একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হলো ৮৮৮ জনের। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৫৭৮ জন। ফলে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন মোট ১৩ হাজার ৯০৩ জন।
নতুন করে যারা মারা গেছেন তাদের ৩৫ জন পুরুষ এবং সাতজন নারী। এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে আটজন, সিলেট, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে দুজন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের ৩০ জন মারা গেছেন হাসপাতালে এবং ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে বাড়িতে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর ও ব্র্যাক পরিচালিত করোনা নমুনা সংগ্রহ বুথ থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এই বুথগুলোতে কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন না করার জন্য সবাইকে আহ্বান জানানো হয়েছে। এখন থেকে অনলাইন নিবন্ধনের মাধ্যমে করোনার নমুনা সংগ্রহ করা হবে। নিবন্ধনের লিংক: পড়ৎড়হধঃবংঃ.নৎধপ.হবঃ। রোববার দুপুরে করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া নতুন তথ্য তুলে ধরে এসব জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (মহাপরিচালকের দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
গত শনিবারের (৬ জুন) বুলেটিনে জানানো হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৫ জন মারা গেছেন। ১২ হাজার ৪৮৬টি নমুনা পরীক্ষায় করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে আরও দুই হাজার ৬৩৫ জনের দেহে। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ তো বেড়েছেই, মৃত্যুর ক্ষেত্রে হয়েছে সর্বোচ্চ রেকর্ড। এর আগে দেশে একদিনে সর্বোচ্চ ৪০ জনের মৃত্যুর ছিল। এ তথ্য জানানো হয় ৩১ মে’র বুলেটিনে। সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড আছে দুই হাজার ৯১১ জনের, যা গত ২ জুনের বুলেটিনে জানানো হয়। রোববারের বুলেটিনে জানানো হয়, এখন পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং সুস্থতার হার ২১ দশমিক ১৪ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরও ৪৬৭ জনকে এবং বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন সাত হাজার ৩৯৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ২৩০ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন চার হাজার ১৭৫ জন।
দেশে মোট আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ১৩ হাজার ২৮৪টি। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় সাত হাজার ২৫০টি এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ছয় হাজার ৩৪টি শয্যা রয়েছে। সারাদেশে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৩৯৯টি এবং ডায়ালাইসিস ইউনিট রয়েছে ১১২।
গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে এক হাজার ৯৭৫ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে তিন লাখ এক হাজার ১৯৭ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন দুই হাজার ৫৭৬ জন। এ পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন দুই লাখ ৪৫ হাজার ৫০১ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৫৫ হাজার ৬৯৬ জন।
দেশের ৬৪ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।
বরাবরের মতোই করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে সবাইকে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, মুখে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান ডা. নাসিমা।
একদিন আগে শনিবার (৬ জুন) দেশে নতুন করে আরও ২ হাজার ৬৩৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া আরও ৩৫ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর।
এর আগে শুক্রবার ২ হাজার ৮২৮ জনের আক্রান্ত ও ৩০ জনের মৃত্যুর তথ্য দেয় স্বাস্ব্য অধিদপ্তর। এই সংখ্যার মাধ্যমে বাংলাদেশ শনাক্তের সংখ্যা বিবেচনায় বিশ্বের শীর্ষ ২০টি দেশের মধ্যে ঢুকে পড়ে।
এদিকে বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট মৃতের সংখ্যা চার লাখ অতিক্রম করেছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের সর্বশেষ তথ্য মতে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট ৪ লাখ ২ হাজার ৯৪ জন মানুষ মারা গেছেন। আর এ মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৯ লাখ ৭৪ হাজার ৭২১ জন। সুস্থ হয়েছেন ৩৪ লাখ ১১ হাজার ২৮১ জন।
মহাদেশভিত্তিক বিভাজনে দেখা গেছে, করোনা মহামারিতে সারাবিশ্বে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে তাদের এক চতুর্থাংশ হয়েছে আমেরিকায়। তবে দক্ষিণ আমেরিকায়ও মৃতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। করোনাভাইরাস দেখা দেয়ার পর ৫ মাসে এই রোগে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে তা বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংক্রামক ব্যধির একটি ম্যালেরিয়ায় বছরে মোট মৃত্যুর সমান।
করোনা ভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে। সেখানে এরই মধ্যে ১ লাখ ১১ হাজার ৬৮৮ জন মানুষ মারা গেছে। এখন ব্রাজিলে মৃত্যুর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে এবং প্রাণহানিতে দেশটি যুক্তরাজ্যকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে যেতে পারে। যুক্তরাজ্যে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৪০ হাজার ৪৬৫ জন। আর ব্রজিলে মৃতের সংখ্যা ৩৫ হাজার ২১১ জন।


বিজ্ঞাপন