বিশেষ প্রতিবেদক : নতুন অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটসহ তামাকজাত পণ্যের মূল্যস্তর ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে সব ধরনের সিগারেট ও তামাকজাত পণ্যের দাম বাড়তে পারে। ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’ শিরোনামে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
প্রস্তাবিত বাজেটে সিগারেটের নি¤œ স্তরের দশ শলাকার দাম ৩৯ টাকা ও তার বেশি এবং সম্পূরক শুল্ক ৫৭ শতাংশ ধার্যের প্রস্তাব করা হয়েছে। মধ্যম স্তরের দশ শলাকার দাম ৬৩ টাকা ও তার বেশি, উচ্চ স্তরের দশ শলাকার দাম ৯৭ টাকা ও তার বেশি এবং অতি উচ্চ স্তরের দশ শলাকার দাম ১২৮ টাকা ও তার বেশি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এ তিন স্তরের সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক ৬৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে যন্ত্রের সাহায্য ব্যতীত হাতে তৈরি ফিল্টারবিহীন বিড়ির পঁচিশ শলাকার দাম ১৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮ টাকা কারার প্রস্তাব করা হয়েছে। বারো শলাকার দাম ছয় টাকা ৭২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৯ টাকা এবং আট শলাকার দাম চার টাকা ৪৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ছয় টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
ফিল্টার সংযুক্ত বিড়ির বিশ শলাকার দাম ১৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯ টাকা এবং দশ শলাকার দাম আট টাকা ৫০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সম্পূরক শুল্ক ৪০ শতাংশের প্রস্তাব করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতি দশ গ্রাম জর্দার দাম ৪০ টাকা ও সম্পূরক শুল্ক ৫৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর দশ গ্রাম গুলের দাম ২০ টাকা এবং ৫৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।
১০০ টাকার মোবাইল রিচার্জে ৭৩ টাকার সেবা : নতুন অর্থবছরের বাজেটে মোবাইলে সব ধরনের সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে ১০০ টাকা রিচার্জ কর ৭৮ টাকা ২৭ পয়সার সেবা পাওয়া যায়। বাকি ২২ টাকা ৭২ পয়সা ট্যাক্স-ভ্যাট হিসেবে সরকার পায়। এবারের বাজেটে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর কারণে গ্রাহক ৭৩ টাকার সেবা পাবেন। বাকি ২৭ টাকা সরকার কর হিসেবে পাবে।
বাড়ছে গাড়ি রেজিস্ট্রেশন ফি বাড়ছে : সিসিভেদে ব্যক্তিগত গাড়ি রেজিস্ট্রেশনে অগ্রিম আয়কর বাড়ানো হচ্ছে। ১৫০০ সিসির কম ক্ষমতাসম্পন্ন গাড়ির অগ্রিম কর ১৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। ১৫০০ থেকে ২০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির কর ৩০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা এবং ২০০০ থেকে ২৫০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে।
এছাড়া ২৫০০ থেকে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির ৭৫ হাজার টাকা থেকে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা, ৩০০০ থেকে ৩৫০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির এক লাখ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৩৫০০ সিসি বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন গাড়ির এক লাখ ২৫ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা এবং মাইক্রোবাসের অগ্রিম কর ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করা হচ্ছে।
৫ কোটি টাকার বেশি থাকা ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক বাড়ছে : বড় লোকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের আবগারি শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। তবে ছোট সঞ্চয়কারী বা ব্যাংক আমানতধারীদের কর আগের মতো থাকছে। যেসব ব্যাংক অ্যাকাউন্টের স্থিতি বছরে ৫ কোটি টাকার বেশি সেসব অ্যাকাউন্টের আবগারি শুল্ক ২৫ হাজার টাকা দিতে হয়। এটা বাড়িয়ে প্রায় দ্বিগুণ করা হচ্ছে।
গার্মেন্টের উৎসে কর বাড়ছে : করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত তৈরি পোশাক খাতের উৎসে করও বাড়ানো হচ্ছে। চলতি অর্থবছর রফতানিমুখী পোশাক শিল্পকে মোট রফতানি আয়ের বিপরীতে দশমিক ২৫ শতাংশ হারে উৎসে কর দিতে হতো। আগামী বাজেটে সেটি বাড়িয়ে দশমিক ৫০ শতাংশ করা হচ্ছে। তবে পোশাক খাতের করপোরেট কর আগের অবস্থানেই রাখা হচ্ছে।
ভার্চুয়াল বিজ্ঞাপনে খরচ বাড়বে : ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদি) বিজ্ঞাপনের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়। এবারের বাজেটে এ ধরনের বিজ্ঞাপনের ওপর ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর আরোপ করা হচ্ছে। বিজ্ঞাপনের বিল পরিশোধের সময় ব্যাংককে ভ্যাট ও উৎসে কর কেটে রাখার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।
ধূমপায়ীদের বাড়তি কর দিতে হবে : রাজস্ব আয় বাড়াতে প্রথাগতভাবে এবারও সিগারেটের মূলস্থর ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। এতে সিগারেট ফুকতে ধূমপায়ীদের বাড়তি কর দিতে হবে। আর সরকার মোটা অঙ্কের রাজস্ব পাবে।
মিথ্যা ঘোষণা ধরা পড়লে জরিমানা : আন্ডার ইনভয়েসিং-ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচার রোধে আয়কর অধ্যাদেশে নতুন ধারা (১৬এইচ) যুক্ত করা হচ্ছে। এ ধারা অনুযায়ী, আয়কর রিটার্ন পর্যালোচনা করে পণ্য আমদানিতে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আন্ডার ইনভয়েসিং বা ওভার ইনভয়েসিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেলে গোপনকৃত বা পাচারকৃত অর্থের ৫০ ভাগ জরিমানা আদায় করা হবে।