নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘সমস্ত সমালোচনাকে অসাড় প্রমাণিত করে গত ১১ বছর ধরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাজেট বাস্তবায়িত হয়েছে। দেশ এগিয়ে গেছে। দারিদ্রতা কমে অর্ধেকে নেমেছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে সাড়ে তিনগুণ। জিডিপি গ্রোথ রেট পৃথিবীর অন্যতম বেশি গ্রোথ রেটের দেশে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছে। এবারের বাজেটও বাস্তবায়িত হবে।’
শুক্রবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সাইফ পাওয়ার টেকের উদ্যোগে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ১০০ অক্সিজেন সিলিন্ডার বিতরণ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি সামাজিক কল্যাণ রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে চান। সেজন্য তিনি বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা, পঙ্গুভাতাসহ নানা ধরনের ভাতা চালু করেছেন। বাংলাদেশের মেয়েরা কখনও ভাবেনি স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা পাবেন, ইউরোপের দেশেও স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা পায় না। এই ধরনের ভাতায় বর্তমানে ৮৮ লাখ সুবিধাভোগী আছে। এইবার আরও ১১ লাখ মানুষকে নতুন করে সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে রাখা হয়েছে। এই বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের জন্য গত বাজেটের তুলনায় ১৪ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে এবার বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এই বাজেটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আট দশমিক দুই শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছেন। পত্রপত্রিকায় দেখলাম, এত বেশি লক্ষ্যমাত্রা কেন স্থির করা হলো তা নিয়ে সমালোচনা করা হচ্ছে। ক’দিন আগে আইএমএফ বলেছে যদি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব খুব সহসা কেটে যায় এবং বৈশ্বিক মন্দাও যদি সহসা কেটে যায় তাহলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার নয় শতাংশের বেশি হতে পারে। এটি হচ্ছে আইএমএফের প্রাক্কলন। সুতরাং সেটি যদি বিবেচনায় নিই তাহলে ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চয়ই উচ্চবিলাসী নয়।’
তিনি বলেন, ‘এই করোনা ভাইরাসের মহামারির মধ্যেও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অর্থমন্ত্রী একটি সাহসী বাজেট ঘোষণা করেছেন। পত্রপত্রিকায় অনেক মন্তব্য ও বিশ্লেষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি। অনেক বিশেষজ্ঞরা তাদের মতামত দিচ্ছেন। এদের কিছু চিহ্নিত বিশেষজ্ঞ আছে। তারা সবসময় মতামত দেন। আমরা গত ১১ বছর ধরে যখনই বাজেট ঘোষণা হয়েছে ততবারই সিপিডি কোনোদিন বাজেটের প্রশংসা করতে পারেনি। প্রতিবারই তারা বলেছেন, এই বাজেট উচ্চাকাঙ্ক্ষী,এটি বাস্তবায়নযোগ্য নয়।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু গত ১১ বছরের আমরা যদি হিসেব নিয়ে থাকি, তাহলে দেখতে পাই- প্রতিবার বাজেট ৯৩ থেকে ৯৬ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। এইবারও তাদের একই কথার ধারাবাহিকতা আমরা লক্ষ্য করছি। একইভাবে তারা সমালোচনা করছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে এ ধরনের উচ্চবিলাসী বাজেট কেন দেয়া হলো। এ ধরনের কথাবার্তা তারা বলছে।’
তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যখন সরকার গঠন করা হয়। তখন ২০০৮-০৯ সালের বাজেট ছিল ৮৮ হাজার কোটি টাকা। এবার যে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে এটি ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি হাজার কোটি টাকা। ১১ বছরে বাজেটের অঙ্ক সাড়ে ৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৯ সালে আমরা যখন সরকার গঠন করি, তখন বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৬০০ ডলার। আজকে সেটি দুই হাজার ৮০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ মানুষের মাথাপিছু আয় সাড়ে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘোষিত বাজেট বাস্তবায়নের পর মানুষের জনপ্রতি উপার্জন হবে প্রতিবছর প্রায় দুই লাখ টাকা।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে, এমন দাবির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘কালো টাকা সাদা করার সিস্টেম চালু করেছিলেন বিএনপির অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান। তিনি নিজেও কালো টাকা সাদা করেছিলেন, তাদের নেত্রী খালেদা জিয়া নিজেও কালো টাকা সাদা করেছিলেন। অর্থনীতির স্বার্থে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই ধরনের অপ্রদর্শিত টাকাকে বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়।’ বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদের উচিত সেই তথ্য ও উপাত্ত যাচাই বাছাই করা এবং আয়নায় নিজেদের চেহারাটাও একটু দেখার জন্য বলেন -তথ্যমন্ত্রী।
চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের ভর্তি করা হচ্ছে না এবং চিকিৎসা না দিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রামে এ নিয়ে কয়েকটি সমন্বয় সভা হয়েছে। কয়েকটি হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। তবে চট্টগ্রামে নয় শুধু সারা দেশ এবং পৃথিবীজুড়েই আইসিইউ সংকট আছে। ইতালি নিউইয়র্কের মতো দেশে বহু বয়স্ক মানুষকে আইসিইউ সেবা দিতে না পারার কারণে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তবে এভাবে রোগী ফেরত দেয়া কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান এভাবে রোগী ফেরত দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। হয়তো তারা মনে করছেন, সরকার তাকিয়ে আছেন, সরকার এটি ধর্তব্যের মধ্যে নিচ্ছে। সময়মতো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শনিবার থেকে প্রশাসন মোবাইল কোর্ট শুরু করবে। প্রয়োজনে তাদের লাইসেন্সও বাতিল হবে।’
এ সময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদ, জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন, বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মোস্তফা খালেদ আহমদ, সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি, সাইফ পাওয়ার টেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিন উপস্থিত ছিলেন।