নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ থেকে কুয়েতে কর্মী নেওয়ার জন্য দেশটির সরকারের একজন আমলাসহ তিনজনকে ঘুষ দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন আটক সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল। কুয়েতের গণমাধ্যম আরব টাইসের প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
কুয়েত সরকারের একজন আমলাসহ তিন জনকে প্রদেয় ঘুষের পরিমান ছিলো ২১ লাখ দিনার যার বাংলাদেশের মূদ্রায় ৫৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে কাজী শহিদ পাপুল ঘুষ গ্রহণকারীদের নামও জানিয়েছেন।
কাজী শহিদ কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তাকে ১০ লাখ দিনার বা ২৭ কোটি ৪০ লাখ টাকার চেক এবং এক লাখ দিনার বা ২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা নগদ দেওয়ার কথা তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে জানিয়েছেন। এসময় চেকের একটি কপি পাবলিক প্রসিকিউশনকে দেওয়া হয়েছে বলেও জানািন তিনি।
বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশিকে কুয়েত আনার ব্যবস্থা করে দেওয়ার শর্তে স্থানীয় এক নাগরিককে ২৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা বা ১০ লাখ কুয়েতি দিনার ঘুষ দেন আটক পাপুল।
এসময় তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে ঘুষ গ্রহণকারীদের পরিচয় হিসেবে একজন কুয়েতের একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত, অন্যজন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আমলা আর শেষজন দেশটির এক নাগরিক বলেও জানান পাপুল।
প্রতিবেদনে বলায়, তদন্ত কর্মকর্তারা নিশ্চিত হয়েছেন, বাংলাদেশের আটক সাংসদ সদস্যকে মদদ দিয়েছেন দেশটির অন্তত সাতজন বিশিষ্ট নাগরিক। ওই সাতজনের মধ্যে কুয়েতের সাবেক ও বর্তমান তিন সাংসদস্যও রয়েছেন।
এদিকে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে মদদদানকারীদের পরিচয় প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন কুয়েতের সাংসদস্যরা। এ প্রসঙ্গে কুয়েতের দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষ নাজাহা বলেন, মানব পাচার নিয়ে বাংলাদেশের সাংসদের বিরুদ্ধে পাবলিক প্রসিকিউশন যে তদন্ত চালাচ্ছে, তা নিয়ে সংস্থাটি পরের ধাপের তদন্ত চালাবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য জানিয়েছেন, কুয়েতের এক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই কর্মকর্তা তার মালিকানাধীন ক্লিনিং কোম্পানিতে গিয়ে দেখা করেছিলেন। তাদের বৈঠকের আগে কুয়েত সরকারের জ্যেষ্ঠ ওই কর্মকর্তা বাংলাদেশের সংসদ সদস্যকে স্থানীয় কর্মীদের ছুটিতে পাঠাতে বলেছিলেন। কারণ, ওই কর্মকর্তা চাননি কুয়েতের স্থানীয় লোকজন তাকে চিনে ফেলুক। তাই কুয়েতি কর্মকর্তার অনুরোধে বৈঠকের আগেই বাংলাদেশের সাংসদ সদস্য তার স্থানীয় কর্মীদের ছুটি দিয়ে দেন। মূলত, কুয়েতের ওই কর্মকর্তা বাংলাদেশের সংসদ সদস্যের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার সময় কাউকে সাক্ষী রাখতে চাননি।
এ দিকে এছাড়াও সিআইডির হাতে বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হওয়া মানবপাচারকারীদের কাছ থেকেও নেওয়া তথ্যে প্রমাণ মিললে তার বিরুদ্ধে মানবপাচার ও অর্থপাচার আইনে মামলা করা হবে বলেও জানিয়েছে সিআইডি।
মানবপাচার ও অর্থপাচারের অভিযোগে ৬ জুন কুয়েতে গ্রেপ্তার করা হয় লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলকে। গ্রেফতারের পর আট দিনের রিমান্ডে বেরিয়ে আসে নানা তথ্য। ইতিমধ্যে পাপুলের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়েছেন ৭ প্রবাসী বাংলাদেশি। সেখানেও উঠে আসে নানা তথ্য।
তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে কুয়েত সরকার কোন কিছু না জানালেও বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থা পাপুল এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে। পেয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও।
কুয়েতের সিআইডি এবং স্থানীয়ভাবে তথ্য সংগ্রহ করে মানবপাচারের ব্যাপারে এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশের সিআইডি। এছাড়াও বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হওয়া মানব পাচারকারীদের কাছ থেকেও নেওয়া হচ্ছে তথ্য।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, যেকোনো আদালতে অভিযোগ প্রমাণ হলে বাতিল হবে তার সংসদ সদস্য পদ।
এদিকে পাপুলের ঘটনা তদন্তে নেমেছে দুদক। ইতিমধ্যে এমপি পাপুল, তার স্ত্রী সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিনের ব্যক্তিগত বিভিন্ন নথিপত্র তলব করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী।
শহীদ ইসলাম পাপুল মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত বলে এর আগে দেশ বিদেশের কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছিলো।