করোনা ভয়ে হাসপাতালে যাচ্ছে না সাধারণ রোগী

স্বাস্থ্য

আল-আমিন: বাংলাদেশে আশঙ্কাজনকভাবে করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সকল হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালু করে সরকার। এমন সীদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকে হাসপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছে সাধারণ রোগী। তারা বলছে, বাংলাদেশের সকল হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালু হয়েছে। চিকিৎসক করোনা রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার পর অন্যান্য রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে। ফলে আমাদের মত সাধারণ রোগীদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এজন্য সাধারণ রোগে আক্রান্ত হলেও হাসপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছি।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছে, হাসপাতালে করোনা ইউনিট আছে বলেই যে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তা না। যদি ডাক্তারদের সুরক্ষব্যবস্থা ভালো থাকে তাহলে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। কিন্তু হাসপাতালে ডাক্তারদের সুরক্ষাব্যবস্থা যদি না থাকে তাহলে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য ডাক্তারদের সুরক্ষাব্যবস্থাটা ভালো করতে হবে। এছাড়া সামাজিক বিভিন্ন মাধ্যমে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার ফলে মানুষ আতঙ্কগ্রস্থ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।
এদিকে বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে কমেছে রোগীর সংখ্যা। করোনার আগে প্রতিদিন যেখানে ৭০০-৮০০ জন রোগী হাসপাতালে ভীড় করত সেখানে এখন আসছে মাত্র ১০০-১৫০ জন। চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য কর্মীরা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ফলে এমনটা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ডায়াবেটিস এবং পেশারের রোগী সেলিনা বেগম সকালের সময়কে বলেন, আমি গত ২ বছর আগে ব্রেন স্ট্রোক করি। এজন্য আমাকে নিয়মিত ডাক্তার দেখাতে হয়। এছাড়া প্রতি মাসে অন্তত একবার ডায়াবেটিস ডাক্তার দেখাতে হয়। কিন্তু করোনার কারণে ৩/৪ মাস আমার ডাক্তার দেখানো বন্ধ রয়েছে। আগের প্রেসক্রিপশন দেখে ফার্মেসী থেকে টানা দুই মাসের ওষুধ নিয়ে এসে খাচ্ছি। কিন্তু মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়ছি।
তিনি আরো বলেন, ঢাকা শহরে অশঙ্কাজনকহারে মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। এজন্য বাহিরে যেতেই খুব ভয় পাচ্ছি। এছাড়া আমি যতদুর জানি সরকারি ও বেসরকারি সব হাসপাতালেই করোনা ইউনিট চালু করা হয়েছে। যেহেতু ডায়াবেটিসসহ সকল রোগীদের জন্য করোনা আরও বিপদজনক সেহেতু এসকল বিষয় বিবেচনা করে অসুস্থ বোধ করলেও হাসপাতালে যাচ্ছি না।
আরেক রোগী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী রুহুল ইমতিয়াজ সকালের সময়কে বলেন, চলমান করোনা সঙ্কটের কারণে এমনিতেই বাহিরে যাওয়াটা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। হাসপাতালে যাওয়াটা আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা সকল হাসপাতালেই করোনা ইউনিট চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে ডাক্তারদের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অনেক। এছাড়া আপনি দেখবেন যে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত অনেক ডাক্তার করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এবং তাদের থেকে সংক্রমিত হয়ে আক্রান্ত হয়েছে সাধারণ রোগীরাও। এমন পরিস্থিতিতে আমি ডাক্তারের কাছে ফোন দিয়ে পরামর্শ নিয়েছি কিন্তু হাসপাতালে যায়নি। সরকারের উচিত ছিল সকল হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালু না করে জেলা শহরের বড় হাসপাতালগুলো করোনা রোগীদের জন্য ব্যবহার করা।
এ বিষয়ে ডা. হোসনে আরা সকালের সময়কে বলেন, বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী ১৭ জুন পর্যন্ত সারা দেশে ১ হাজার ১৬০ জন নার্স আক্রান্ত হয়েছেন। এতে দেখা যাচ্ছে, চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্টসহ মোট ৩ হাজার ৫০২ জন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন এবং ১৭ জুন পর্যন্ত ৪১ জন চিকিৎসক করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে এবং করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এর মধ্যে করোনায় সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩৬ জনের। ৫ জন মারা গেছেন করোনার লক্ষণ নিয়ে।
এত বিপুল সংখ্যাক স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে সুরক্ষা ব্যবস্থার ঘাটতি। এমন পরিস্থিতিতে ডাক্তারের মাধ্যমে অন্যান্য রোগী সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকাটা সাভাবিক। এজন্য হইত সাধারণ রোগী হাসপাতালে আসতে ভয় পাচ্ছে।


বিজ্ঞাপন