মৃত্যু দেড় সহস্রাধিক

আন্তর্জাতিক এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন জীবনী ঢাকা সারাদেশ স্বাস্থ্য

মহসীন আহমেদ স্বপন : সারাবিশ্বে আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। এদিকে দেশে মহামারি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৮ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মোট মারা গেলেন এক হাজার ৫০২ জন। একই সময়ে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ৪৮০ জনের দেহে। ফলে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল এক লাখ ১৫ হাজার ৭৮৬ জনে।
সোমবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানান অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
দেশজুড়ে ৬২টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে বুলেটিনে বলা হয়, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৬ হাজার ২৮৭টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৫ হাজার ৫৫৫টি। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো ছয় লাখ ২৭ হাজার ৭১৯টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ৪৮০ জনের মধ্যে। ফলে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ১৫ হাজার ৭৮৬ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৩৮ জন। এ নিয়ে মোট মারা গেলেন এক হাজার ৫০২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও এক হাজার ৬৭৮ জন। সব মিলিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা এখন ৪৬ হাজার ৭৫৫ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় যারা মারা গেছেন তাদের ৩৩ জন পুরুষ ও পাঁচজন নারী। এদের ১৫ জন ঢাকা বিভাগের, ১২ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, চারজন বরিশাল বিভাগের, দুজন করে খুলনা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের এবং একজন সিলেট বিভাগের। এদের মধ্যে ১১ থেকে ২০ বছরের একজন, ২১ থেকে ৩০ বছরের তিনজন, ত্রিশোর্ধ্ব একজন, চল্লিশোর্ধ্ব তিনজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ১৬ জন, ষাটোর্ধ্ব ১০ জন, সত্তরোর্ধ্ব তিনজন এবং ৮০ বছরের বেশি বয়সী একজন মারা গেছেন। হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ২৫ জনের, বাসায় ১২ জনের এবং হাসপাতালে আনার পর একজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
গত রোববারের (২১ জুন) বুলেটিনে জানানো হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৫ হাজার ৫৮৫টি নমুনা পরীক্ষায় করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ৫৩১ জনের মধ্যে। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু এবং রোগী শনাক্ত- উভয় সংখ্যাই কমেছে। দেশে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড আছে ৫৩ জনের। সে তথ্য জানানো হয় ১৬ জুনের বুলেটিনে। আর সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড আছে চার হাজার আট জনের। এ তথ্য জানানো হয় ১৭ জুনের বুলেটিনে।
সোমবারের বুলেটিনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এ পর্যন্ত রোগী শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪০ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩০ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরও ৬১৮ জনকে এবং এ পর্যন্ত আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ২০ হাজার ৪৩২ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৩৪১ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন সাত হাজার ৯৬৫ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন ১২ হাজার ৪৬৭ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই হাজার ৬৬৩ জনকে, এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে তিন লাখ ৪৩ হাজার ২৪৬ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন এক হাজার ৯৭২ জন, এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইন থেকে মোট ছাড় পেয়েছেন দুই লাখ ৭৮ হাজার ৩৫০ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৬৩ হাজার ৮৯৬ জন।
দেশে কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।
ডা. নাসিমা সুলতানা বরাবরের মতো করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান বুলেটিনে।
সোমবার সকাল পর্যন্ত করোনার সার্বক্ষণিক পরিসংখ্যান প্রদানকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের সবশেষ হিসাবে এই তথ্য জানা গেছে।
আক্রান্ত ও মৃত্যু উভয় সংখ্যার দিক থেকেই বিশ্বে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২৩ লাখ ৫৬ হাজার ৬৫৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ২৪৭ জনের।
আক্রান্ত ও মৃতের হিসাবে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছে ব্রাজিল। দেশটিতে করোনায় মোট মৃত্যু হয়েছে ৫০ হাজার ৬৫৯ জনের। আর আক্রান্ত হয়েছে ১০ লাখ ৮৬ হাজার ৯৯০ জন।
আক্রান্ত বিবেচনায় তৃতীয় ও চতুর্থস্থানে রয়েছে যথাক্রমে রাশিয়া ও ভারত। এখন পর্যন্ত রাশিয়াতে মোট আক্রান্ত ৫ লাখ ৮৪ হাজার ৬৮০ জন। আর ভারতে মোট আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ৪ লাখ ২৬ হাজার ৬১০ জন।
মৃতের হিসেবে তৃতীয় স্থানে এবং আক্রান্ত বিবেচনায় বিশ্বে ৫ম ও ইউরোপের শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৪২ হাজার ৬৩২ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৪ হাজার ৩৩১ জন।
এছাড়া ইতালিতে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৩৪ হাজার ৬৩৪ জনে দাঁড়িয়েছে। আর মোট আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৯৯ জন।
বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হলেও প্রথম মৃত্যুর খবর আসে ১৮ মার্চ। দিন দিন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার। ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব সরকারি-বেসরকারি অফিস। কয়েক দফা বাড়িয়ে এ ছুটি ৩০ মে পর্যন্ত করা হয়। ছুটি শেষে করোনার বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেই ৩১ মে থেকে দেশের সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেয়া হয়। তবে বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।


বিজ্ঞাপন