আরও ৫৫ মৃত্যু
বিশেষ প্রতিবেদক : গত পাঁচ দিনের কোভিড-১৯ আক্রান্তের পরিসংখ্যান তুলে ধরে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনাভাইরাস ট্র্যাকার বলছে, মহামারীর প্রকোপ কমে আসতে শুরু করেছে বাংলাদেশে। ঠিক এ সময়ে ব্রাজিল, মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পেরু, ইরানসহ বিভিন্ন দেশে করোনা মহামারীর প্রকোপ বেড়েছ। বাংলাদেশ ছাড়াও করোনার প্রকোপ কমে এসেছে রাশিয়া, চিলি, যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশে।
জনস হপকিন্সের তথ্যচিত্র অনুযায়ী: বাংলাদেশে কোভিড-১৯’র প্রথম সংক্রমণ ১১৯ দিন আগে মার্চের ৮ তারিখে ধরা পড়ে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ১,৬২,৪১৭ জন করোনায় আক্রান্ত এবং ২,০৫২ জন মারা গেছেন। তাদের তথ্যচিত্র ট্র্যাক করে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে স্থানীয় সংক্রমণের ১৪, ১৫, ১৬ ও ১৭তম সপ্তাহজুড়ে আক্রান্ত ও মৃত্যু সমান্তরালভাবে চূড়ায় ওঠে। ১৮তম সপ্তাহে এসে এ দুটির রেখাচিত্র নি¤œমুখী হতে শুরু করে।
এ দিকে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫৫ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল দুই হাজার ১৫১ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও তিন হাজার ২৭ জন। এ নিয়ে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ৬৮ হাজার ৬৪৫ জনে।
করোনাভাইরাস বিষয়ে মঙ্গলবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি নতুন যুক্ত একটিসহ মোট ৭৪টি ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩ হাজার ৪৯১টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৩ হাজার ১৭৩টি। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো আট লাখ ৭৩ হাজার ৪৮০টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ২৭ জনের মধ্যে। ফলে শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ৬৮ হাজার ৬৪৫ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৫৫ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে দুই হাজার ১৫১ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও এক হাজার ৯৫৩ জন। এতে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৭৮ হাজার ১০২ জনে।
গত ২৪ ঘণ্টায় যে ৫৫জন মারা গেছেন তাদের মধ্যে পুরুষ ৪৬ জন এবং নারী নয়জন। এদের মধ্যে ১০ বছরের বেশি বয়সী একজন, ত্রিশোর্ধ্ব দুজন, চল্লিশোর্ধ্ব ছয়জন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ১৮ জন, ষাটোর্ধ্ব ২১ জন, সত্তরোর্ধ্ব ছয়জন এবং ৮০ বছরের বেশি বয়সী একজন রয়েছেন। তাদের ২৭ জন ঢাকা বিভাগের, ১২ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, দুজন রাজশাহী বিভাগের, সাতজন খুলনা বিভাগের, দুজন রংপুর বিভাগের, দুজন সিলেট বিভাগের, দুজন বরিশাল বিভাগের এবং একজন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। ৩৯ জন মারা গেছেন হাসপাতালে, ১৫ জন বাসায় এবং একজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়।
গত সোমবারের বুলেটিনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা রোগীদের মধ্যে আরও ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৪ হাজার ২৪৫টি নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ২০১ জনের মধ্যে। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমলেও বেড়েছে মৃত্যু। দেশে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড আছে ৬৪ জনের। সে তথ্য জানানো হয়, ৩০ জুনের বুলেটিনে। সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড চার হাজার ১৯ জনের, যা জানানো হয় ২ জুলাইয়ের বুলেটিনে।
মঙ্গলবারের বুলেটিনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৯১ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। আর রোগী শনাক্ত তুলনায় সুস্থতার হার ৪৬ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৮ শতাংশ।
বুলেটিনে ডা. নাসিমা করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের আহ্বান জানান।
করোনাভাইরাসের ছোবলে গোটা বিশ্ব এখন মৃত্যুপুরী। বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হলেও প্রথম মৃত্যুর খবর আসে ১৮ মার্চ। দিন দিন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার। ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব সরকারি-বেসরকারি অফিস। কয়েক দফা বাড়িয়ে এ ছুটি ৩০ মে পর্যন্ত করা হয়।
ছুটি শেষে করোনার বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেই ৩১ মে থেকে দেশের সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেয়া হয়। তবে বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
অন্যদিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১৫ লাখ ৯২ হাজার ২৫৯ জন। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫ লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৭ জন।