স্বল্প মূল্যে পাওয়া যাবে করোনার ভ্যাকসিন

স্বাস্থ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ে গোটা বিশ্ব এখনো হিমশিম খাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এই ভাইরাস রুখতে নানা দেশের গবেষকরা ভ্যাকসিন বা টিকা তৈরির কাজ করছে।
বিশ্বে এ পর্যন্ত অন্তত ১২০টি ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চলছে। এ তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে। বাংলাদেশের গ্লোব ফার্মার ভ্যাকসিন দ্বিতীয় ধাপে এনিম্যাল ট্রায়ালে রয়েছে। তবে সবচেয়ে এগিয়ে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিন। আগামী অক্টোবর থেকে ভ্যাকসিনটি উন্মুক্ত করা হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শীর্ষ বিজ্ঞানীও অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটিকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। তাদের তৈরি ভ্যাকসিনটি চূড়ান্ত পর্যায়ে বাজারে আসলে দামও কম থাকবে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ তাদের এক বিশেষ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটির তৃতীয় ধাপের ফলাফল আগস্ট মাসের মধ্যে জানা যাবে। এই ফলাফলে সফল হলেই ভ্যাকসিনটি জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পাওয়া যাবে।
এদিকে, ভ্যাকসিনটি তৈরি হলে সেটি বাজারজাতের জন্য ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা ইতোমধ্যে সাপ্লাই চেইন তৈরি করছে বলে খবর প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়ার নিউজ ডটকম ডটএইউ।
খবরে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে সম্ভাব্য এই ভ্যাকসিনের ২০০ কোটি ডোজ প্রাথমিক অর্ডার পেয়েছে। কোম্পানির তথ্য অনুযায়ী, ভ্যাকসিনটির দাম থাকবে খুবই কম। তাদের মতে, এটি এক কাপ কফির দামের সমান বা তার চেয়ে কম হতে পারে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রধান নির্বাহী প্যাসকল সারিওট বলেন, তাঁদের ভ্যাকসিন এক বছর পর্যন্ত কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে সক্ষম হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগস্ট বা সেপ্টেম্বরে এর ফল জানা যাবে। ভ্যাকসিনের ফলের জন্য অপেক্ষার পাশাপাশি ভ্যাকসিন উৎপাদন চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে অক্টোবরেই ভ্যাকসিন সরবরাহ শুরু করা যাবে।
করোনাভাইরাসে বিশ্বে এ পর্যন্ত এক কোটি ২৬ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৫ লাখ ৬২ হাজার। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৭৩ লাখ মানুষ।
এদিকে, বাংলাদেশে শুক্রবার পর্যন্ত সবশেষ ২৪ ঘণ্টার তথ্যে দেখা যায়, দেশে শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে।
দেশে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল দুই হাজার ৩০৫ জনে। একই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও দুই হাজার ৬৮৬ জন। ফলে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ৮১ হাজার ১২৯ জনে।
করোনাভাইরাস বিষয়ে শনিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১১ হাজার ৪৭৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষা করা হয়েছে ১১ হাজার ১৯৩টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো নয় লাখ ২৯ হাজার ৪৬৫টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে আরও দুই হাজার ৬৮৬ জনের মধ্যে। ফলে শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ৮১ হাজার ১২৯ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৩০ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে দুই হাজার ৩০৫ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও এক হাজার ৬২৮ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৮৮ হাজার ৩৪ জনে।
গত ২৪ ঘণ্টায় যে ৩৭ জন মারা গেছেন তাদের মধ্যে পুরুষ ২৫ জন এবং নারী পাঁচজন। এদের মধ্যে ত্রিশোর্ধ্ব তিনজন, চল্লিশোর্ধ্ব তিনজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব আটজন, ষাটোর্ধ্ব ১২ জন, সত্তরোর্ধ্ব তিনজন ও ৮০ বছরের বেশি বয়সী একজন ছিলেন। এদের ১৩ জন ঢাকা বিভাগের, ১০ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, তিনজন রাজশাহী বিভাগের, তিনজন খুলনা বিভাগের এবং একজন বরিশাল বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।
বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হলেও প্রথম মৃত্যুর খবর আসে ১৮ মার্চ। দিন দিন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার। ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব সরকারি-বেসরকারি অফিস। কয়েক দফা বাড়িয়ে এ ছুটি ৩০ মে পর্যন্ত করা হয়।
ছুটি শেষে করোনার বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেই ৩১ মে থেকে দেশের সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেয়া হয়। তবে বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।


বিজ্ঞাপন