আরো ভয়াবহ হবে

আন্তর্জাতিক এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

দেশে করোনায় সুস্থ লক্ষাধিক

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বাড়ছে। এমন সময়েই ফের সতর্ক বার্তা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটি বলছে, সব দেশ কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে না পারলে বিশ্বে করোনা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। সোমবার সংস্থাটির প্রধান ট্রেডস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলেন, আমরা সেসব দেশে রোগের ভয়াবহ বিস্তার লক্ষ করছি যেখানে প্রমাণিত পদক্ষেপগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন বা অনুসরণ করা হচ্ছে না।
ট্রেডস বলেন, বহু দেশ করোনা পরিস্থিতি ঠেকাতে ভুল পথে চলছে। এই ভাইরাস এখনো মানুষের এক নম্বর শত্রু। কিন্তু অনেক দেশের সরকার এবং জনগণের আচরণে তা মনে হয় না।
তিনি আরও বলেন, করোনা নিয়ে ‘নেতাদের পাঁচমিশালী বার্তা’র কারণে মহামারিটি নিয়ন্ত্রণে আনার প্রয়াসের ওপর আস্থা হারাচ্ছে মানুষ।
তবে ট্রেডস কারও নাম উল্লেখ না করলেও অনেকের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং যেসব নেতা মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে সমালোচিত হচ্ছেন তিনি মূলত তাদের কথাই বলেছেন।
এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৩২ লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছে। মৃত্যু হয়েছে পৌনে ছয় লাখ মানুষের। করোনায় সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে রয়েছে আমেরিকা ও ব্রাজিল। এরপরেই আক্রান্তের বিচারে তালিকায় রয়েছে ভারতের নাম। মৃতের পরিসংখ্যানে আবার ইতালিকে ছাপিয়ে চতুর্থ স্থান দখল করেছে মেক্সিকো।
এ দিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী বর্তমানে দেশে সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ১ লাখ ৩ হাজার ২২৭ জনে। এ দিকে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৩ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল দুই হাজার ৪২৪ জনে। একই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও তিন হাজার ১৬৩ জন। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ৯০ হাজার ৫৭ জনে।
করোনাভাইরাস বিষয়ে মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ হাজার ৯৮৮টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৩ হাজার ৪৫৩টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নয় লাখ ৬৬ হাজার ৪০০টি নমুনা পরীক্ষা করা হলো। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ১৬৩ জনের মধ্যে। ফলে শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ৯০ হাজার ৫৭ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৩৩ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে দুই হাজার ৪২৪ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও চার হাজার ৯১০ জন। ফলে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ তিন হাজার ২২৭ জনে।
গত ২৪ ঘণ্টায় যারা মারা গেছেন তাদের ২৩ জন পুরুষ এবং ১০ জন নারী। এদের মধ্যে ত্রিশোর্ধ্ব দুইজন, চল্লিশোর্ধ্ব চারজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ছয়জন, ষাটোর্ধ্ব নয়জন, সত্তরোর্ধ্ব ১১ জন এবং ৮০ বছরের বেশি বয়সী একজন ছিলেন। ১৩ জন ছিলেন ঢাকা বিভাগের, তিনজন চট্টগ্রাম বিভাগের, চারজন রাজশাহী বিভাগের, পাঁচজন সিলেট বিভাগের, পাঁচজন খুলনা বিভাগের, দুইজন রংপুর বিভাগের এবং একজন ছিলেন বরিশাল বিভাগের। হাসপাতালে মারা গেছেন ২৯ জন এবং বাসায় মৃত্যু হয়েছে চারজনের।
গত সোমবারের (১৩ জুলাই) বুলেটিনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা গেছেন ৩৯ জন। ১২ হাজার ৪২৩টি নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ৯৯ জনের মধ্যে। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু কমলেও বেড়েছে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা। দেশে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ৬৪ জনের। সে তথ্য জানানো হয়, ৩০ জুনের বুলেটিনে। সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড চার হাজার ১৯ জনের, যা জানানো হয় ২ জুলাইয়ের বুলেটিনে।
মঙ্গলবারের বুলেটিনে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টা নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এখন পর্যন্ত শনাক্ত রোগী বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৪ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৮ শতাংশ।
বুলেটিনে বরাবরের মতোই ডা. নাসিমা করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হলেও প্রথম মৃত্যুর খবর আসে ১৮ মার্চ। দিন দিন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার। ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব সরকারি-বেসরকারি অফিস। কয়েক দফা বাড়িয়ে এ ছুটি ৩০ মে পর্যন্ত করা হয়। ছুটি শেষে করোনার বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেই ৩১ মে থেকে দেশের সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেয়া হয়। তবে বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
এদিকে ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্যমতে, প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সারাবিশ্বে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ১ কোটি ৩২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭২ জনের শরীরে। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৮৪১ জন। অপরদিকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭৭ লাখ ১৭ হাজার ৯৮৭ জন।


বিজ্ঞাপন