বিজিবি-বিএসএফ রেষারেষি চরমে!

অপরাধ আইন ও আদালত এইমাত্র জাতীয়

‘ইন্ডিয়ান গরু পাচার’

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : পবিত্র-ঈদ-উল আয্হাকে সামনে রেখে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বিএসএফ এর মধ্যে রেষারেষি চরম পর্যায়ে। প্রতি বছরই এই ঈদের সময় বাংলাদেশে ভারতীয় গরু পাচার নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয়ে থাকে।
অভিযোগের মধ্যে বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে অবৈধ পথে গরু এসে বাংলাদেশের হাটবাজারগুলো ভরে যায়। আর এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুই দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় গত কয়েক বছর গুরু পাচারের ঘটনা অনেকটা হ্রাস পায়।
কিন্তু এবছর গরু চোরাচালান নিয়ে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী যেভাবে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে এক বাহিনী অপর বাহিনীকে গরু চোরাচালানের অংশীদার বলে দায়ী করা হচ্ছে। যা ভারতীয় গণমাধ্যমসহ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমেও প্রকাশ পেয়েছে। আর ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিতবাদ করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
ওই প্রতিবাদে বলা হয়েছে, গত ১৩ জুলাই ভারতীয় একটি ইংরেজী প্রত্রিকায় বাংলাদেশে গরু পাচার নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদে গত ৬ জুলাই বিএসএফ সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার এর ডিআইজি এস এস গুলেরিয়া স্বাক্ষরিত হিন্দি ভাষায় লিখিত এক সংবাদ বিবৃতির কথা উল্লেখ করে বলা হয়, বিএসএফ দাবি করছে ভারত থেকে গরু পাচারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সম্পূর্ণভাবে সমর্থন জানাচ্ছে। ভারতীয় ‘দা ইন্ডিয়ান’ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও বিবৃতিটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। বিজিবি বলেছে, প্রকৃতপক্ষে ভারতীয় চোরাকারবারীদের মাধ্যমে সীমান্ত এলাকায় ভারতের মাটিতে গরু সমাগম ও নদীপথে গরু পাচারে বিএসএফ এর নিষ্ক্রিয়তা, তৎপরতার অভাব নি:সন্দেহে বিভিন্ন প্রশ্নের অবতারনা করে। আর ভারতীয় গরু পাচারকারীরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় বাংলাদেশে এভাবে গরু পাচার করার কাজে অতি উৎসাহী হয়। এতে করে দেশীয় খামারিগুলো প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এ প্রেক্ষিতে গরু চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে এবং বিজিবি কর্তৃক সীমান্তে গবাদিপশু চোরাচালান রোধে সীমান্ত এলাকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, পুলিশ, সমাজের গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ ও সর্বস্তরের জনগনকে নিয়ে জনসচেতনতামূলক সভা আয়োজন, সীমান্তবর্তী জনগণকে সাথে নিয়ে রাত্রিকালীন পাহারা ও সীমান্তে বিজিবি’র টহল বৃদ্ধিসহ কঠোর নজরদারি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। আর গরু চোরাচালান প্রতিরোধে বিএসএফ এর ব্যর্থতাকে ঢাকার জন্যই ভারতীয় গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশ হতে পারে বলে বিজিবি মনে করছে।
ওই সংবাদে আরও বলা হয়েছে, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গরু চোরাচালান বেড়েছে। অথাৎ গরু পাচারের পিছনে ধর্মীয় কারণের উপস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কোরবানির ঈদে পশুর চাহিদার কথা উল্লেখ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে জানা গেছে বিগত বছরে ১ কোটির সামান্য কিছু বেশি পশু কোরবানির জন্য সারাদেশে ব্যবহৃত হয়েছে। এবছর বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে ধারণা করা হচ্ছে এ সংখ্যা ১ কোটির কিছু কম হবে। আসন্ন কোরবানির ঈদের জন্য আমাদের দেশে ১ কোটি ১৮ লক্ষ ৯৭ হাজার ৫০০টি পশু মজুদ রয়েছে যা প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত। এজন্য দেশীয় খামারীরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, সে জন্য বিদেশী গরু হতে নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশীয় খামার থেকেই কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণ করা হবে। এ প্রেক্ষিতে বিজিবির পক্ষ থেকে দেশের সীমান্তে গবাদী পশু চোরাচালানরোধে কঠোর নজরদারী বৃদ্ধি করেছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বিএসএফ সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার এর ডিআইজি এস এস গুলেরিয়ার বিবৃতি দিয়ে আরো বলেছে, প্রাণীগুলোকে পরম যতেœর সঙ্গে লালন-পালন করা হয়, কিন্তু কোরবানি ঈদের নামে উৎসর্গ করে জবাই করার অর্থ হলো নির্যাতন করা। এ কথাটি ইসলাম ধর্মের বৃহত্তর ধর্মীয় উৎসব ‘ঈদ-উল-আজহা’ এর জন্য অবমাননাকর এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম আঘাত হানার সামিল বলে প্রতিবাদ করেছে বিজিবি।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ‘বিবিসি’ বাংলায় বলা হয়েছে, পাচার করা গরু দিয়ে কোরবানি হয় কিনা, সে ধরণের কোরবানি পশু নির্যাতনের সামিল কিনা- বিবৃতি দিয়ে বিএসএফের মত একটি ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে সেই প্রশ্ন তোলার নজিরবিহীন ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশে বিস্ময় তৈরি হয়েছে। এনিয়ে বাংলাদেশের সীমাতরক্ষা বাহিনী বিজিবির সাবেক প্রধান লে. জে. (অব) মইনুল ইসলাম বিবিসিকে জানিয়েছেন, প্রকাশ্যে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে এক বাহিনী আরেকটি বাহিনীকে চোরাচালানে জড়িত থাকার জন্য দায়ী করার এই ঘটনায় তিনি বিস্মিত।
তিনি বিবিসিকে আরো বলেছেন, বিএসএফ কিন্তু কোনো ব্যক্তিকে দায়ী করেনি, প্রতিবেশী দেশের একটি পুরো বাহিনীকে দায়ী করেছে। এটা যেমন অস্বাভাবিক তেমনি অন্যায়। ফলে বিজিবির পক্ষ থেকে পাল্টা বিবৃতি জারি করা যথাযথ হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।


বিজ্ঞাপন