ভ্রাম্যমান দোকান বসতে দেবে না ডিএমপি
নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদে কোরবানীর পশুর হাট ও পশু ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের টার্গেট করে অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা মাঠে নেমেছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েজনকে গ্রেফতারও করেছে।
পশু ক্রেতা-বিক্রাদের বিভিন্ন কৌশলে অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে তা খাওয়াইয়ে অজ্ঞান করে। আর এক্ষেত্রে হাট ইজারাদাররা হাটে স্থায়ী খাবার দোকান ও টি স্টল বসানোর কারণেই বেশী হয়ে থাকে।
তাই রাজধানীর সকল পশুর হাটে কোন প্রকার ভ্রাম্যমান দোকান বা হকার হাটের মধ্যে বসতে দেওয়া হবে না। আর যে ব্যক্তিকে হাটে স্থায়ী খাবার দোকান দেওয়া হচ্ছে, তার পরিচয় থানায় জমা দিতে ইজারাদারদের নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। গত বুধবার সকাল ১১ টায় ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সে আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে সার্বিক আইন শৃঙ্খলা রক্ষা এবং ট্রাফিক ব্যবস্থা সংক্রান্তে সমন্বয় সভায় একথা ডিএমপি কমিশনার বলেছেন বলে জানা গেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তিন হাজারের অধিক সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ডিএমপির ২১ জন সদস্য মারা গেছেন। পশুর হাটের চৌহদ্দির আশপাশে আমাদের নিরাপত্তা থাকবে। আর প্রতিটি হাটের নামে অনলাইনে পশুর হাটে কুরবানির পশু বিক্রি করতে পারলে ভালো হয়। এতে নিরাপদে পশু কেনা যাবে। হাট কর্তৃপক্ষ অনলাইনে বিক্রির মাধ্যমে আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা এড়াতে পারবেন। হাট ছাড়া কেউ বাহির থেকে অনলাইনে গরু কিনে আনলে তার থেকে কোন প্রকার হাসিল নেওয়া যাবে না।
ডিএমপি কমিশনার আরো বলেন, পশু বেচাকেনার টাকা নিরাপদ রাখতে হাটে ব্যাংকের অস্থায়ী বুথ স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জালটাকা সনাক্তকরণে হাটে অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোল রুমে জালটাকা সনাক্তকরণ মেশিন বসানো হবে।
আর গরু বহনকারী ট্রাকগুলোকে একটি শৃংখলার মধ্যে আনতে ক্রাইম বিভাগের সকল উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) কে নির্দেশ প্রদান করেন কমিশনার। তিনি বলেন, গরু নিয়ে হাটে আগত ট্রাকগুলো শৃংখলার মধ্যে রাখতে হবে। আর গাড়ির নম্বর ও ড্রাইভারের নাম পরিচয় এবং তার ছবি তুলে পুলিশের কাছে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। যাতে করে ড্রাইভারকে দ্রুত সনাক্ত করা যায়।
তিনি বাস মালিকদের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে বলেন, দেখা যায় করোনায় আক্রান্তরা ঢাকা থেকে যাচ্ছেন ও আসছেন। এতে করোনা সংক্রমন ছড়িয়ে পড়ছে। কোন যাত্রীর কাশি ও জ্বর থাকলে গাড়িতে উঠতে দিবেন না। যাত্রী সাধারণকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যাতায়াত করার জন্য পরামর্শ দেন।
তাছাড়া, রাজধানীর মার্কেটে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমরা আশা করি সবাই চেষ্টা করলে ভালোভাবে ঈদুল আযহার সকল আয়োজন শেষ করতে পারবো। ঈদ ও তার পরবর্তী সময় বাসা-বাড়ি, দোকান, মার্কেট, স্বর্ণের দাকান ও ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঈদ-উল-আযহা ২০২০ উপলক্ষে পশুর হাট কেন্দ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, কোরবানির হাটের জন্য স্বাস্থ্য বিধিমালা, কাঁচা চামড়া পাচার রোধ এবং ক্রয়-বিক্রয়কালে ব্যবস্থা, বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল এবং রেলওয়ে স্টেশন কেন্দ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ঈদ পরবর্তী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, পশুর হাট কেন্দ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে থাকবে-কোরবানির পশুর হাট কেন্দ্রিক নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পশুর হাট কেন্দ্রিক সাদা পোশাকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। প্রতিটি পশুর হাটে ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হবে। প্রতিটি পশুর হাটে অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হবে। পশুর হাট কেন্দ্রিক মানি এস্কর্ট ব্যবস্থা থাকবে। আর কন্ট্রোলরুম এবং প্রতিটি থানায় মানি এস্কর্ট টিম স্ট্যান্ডবাই থাকবে। কোরবানির পশুর হাটে জাল নোট সনাক্তকরণ মেশিন স্থাপন করা হবে।
তাছাড়া, পশুর হাটের চৌহদ্দির বাহিরে হাট বসতে দেয়া হবে না বলপূর্বক পশুবাহী ট্রাক, পনৗকা আটকিয়ে অন্য হাটে নামানো যাবে না। নির্ধারিত হারে হাসিল আদায় নিশ্চিত করতে হবে। হাসিলের হার বড় ব্যানার, ফেস্টুনের মাধ্যমে দৃশ্যমান রাখতে হবে। জাল টাকার বিস্তার রোধ ও পশুর হাটে অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, পকেটমার ও অন্যান্য অপরাধীদের তৎপরতা বন্ধ করতে কার্যকারী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর পশুর বিক্রয়লব্ধ টাকা ছিনতাই প্রতিরোধে পুলিশ তৎপর থাকবে। অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোলরুম ও ওয়াচ টাওয়ারে জন সচেতনতামূলক ব্যানার স্থাপন করা হবে। পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং প্রবেশ মুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা ও জীবাণুনাশক চেম্বার স্থাপন করা। করোনা সংক্রমন ঝুঁকি এড়াতে অনলাইন ভিত্তিক বিক্রয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে নিবন্ধিত হয়ে পশু বিক্রির জন্য উৎসাহিত করা। সার্বক্ষণিক মেডিকেল টিম ও ভেটেরিনারী অফিসার (পশুর ডাক্তার) নিয়োজিত রাখতে হবে। হাট এলাকার পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। পশুর হাট কেন্দ্রিক নিরাবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা এবং ফায়ার টেন্ডার মোতায়েন রাখতে হবে।
আবার ইজারাদারদের প্রতি কিছু দায়িত্ব পালনে নির্দেশনা দেওয়া হয়। তার মধ্যে- নির্ধারিত তারিখের পূর্বে হাটে পশু না আনা, চৌহদ্দির বাঁশ দিয়ে ঘিরে রাখা, চৌহদ্দির বাহিরে হাট না বসানো, পশু বহনকারী ট্রাকের সামনে হাটের নাম ব্যানারে লিখে রাখতে হবে। আর এক হাটের পশু অন্য হাটে না নামানো, নির্ধারিত হারের অতিরিক্ত হাসিল আদায় না করা, হাট এলাকায় সিসিটিভি স্থাপন ও মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা, ক্রেতা ও বিক্রেতাদের স্বাস্থবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করা, জেনারেটরের ব্যবস্থা রাখা, পর্যাপ্ত সংখ্যক সেচ্ছাসেবক দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ নিয়োগ করা, টাকা পরিবহনে পুলিশের মানি এস্কর্ট সেবা গ্রহণ করা, হাটের মধ্যে স্থায়ী খাবারের দোকান স্থাপন করা এবং কোরবানির পশু ব্যবসায়ীগণকে মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টি সম্পর্কে সচেতন করতে লিফলেট দেওয়া ও মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করা।
কোরবানির হাটের জন্য স্বাস্থ্য বিধিমালা : প্রতিটি হাটের প্রবেশ পথ ও প্রস্থানের পথ পৃথক করতে হবে। হাটে প্রবেশের মুখে প্রয়োজনীয় সংখ্যক হাত ধোয়ার জন্য বেসিন, পানির ট্যাংক ও সাবান এবং পৃথকভাবে হ্যান্ড সেনিটাইজার রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। হাটে প্রবেশের মুখে প্রয়োজনীয় সংখ্যক তাপমাত্রা মাপার যন্ত্রসহ লোক রাখতে হবে। আবার কোনক্রমেই ফেস মাস্ক ছাড়া কোন লোককে হাটে ঢুকতে দেয়া যাবে না। হাটে সামাজিক দূরত্ব কমপক্ষে ৩ ফুট কঠোরভাবে বজায় রাখতে হবে। করোনার সন্দেহজন উপসর্গ যেমন জ্বর, সর্দি-কাশি, শরীর ব্যাথা ইত্যাদি নিয়ে কোন ব্যক্তি কোনক্রমেই হাটে প্রবেশ করতে পারবে না।
কাঁচা চামড়া পাচার রোধ এবং ক্রয়-বিক্রয়কালে ব্যবস্থা: ডিএমপির সূত্র জানায়, নগদ অর্থ বহনকালে যানবাহন সরবরাহ সাপেক্ষে মানি এস্কর্ট প্রদান করা হবে। চামড়া ব্যবসায়ীদের নগদ অর্থ নিয়ে নিরাপদ স্থানে রাত্রি যাপনের পরামর্শ দেয়া হয়। কাঁচা চামড়া পাচার রোধে ঢাকা হতে বহিঃগমন পথগুলো থাকবে চেকপোস্ট এবং নদী পথে থাকবে নৌ-টহলের ব্যবস্থা রাখা হবে। ঢাকার বাহির থেকে শুধু মাত্র কাঁচা চামড়াবাহী যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ করবে। কোন কাঁচা চামড়াবাহী যানবাহন ঢাকা থেকে বাহিরে যেতে পারবে না।
বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল এবং রেলওয়ে স্টেশনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা : ডিএমপি কমিশনার বলেছেন, চালক, হেলপার ও যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ এবং সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। যানবাহনের ফিটনেস, ড্রাইভিং লাইসেন্স, রেজিস্ট্রেশন ইত্যাদি টার্মিনাল ছাড়ার পূর্বে যাচাই করতে হবে। অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল পরিবহন রোধ, পণ্যবাহী ট্রাকে যাত্রী পরিবহন বন্ধ, বাস ও ট্রেনের ছাদে ভ্রমন নিষেধ।
ঈদ পরবর্তী ঢাকা মহানগরীর নিরাপত্তা : ঢাকা মহানগরীর প্রতিটি আবাসিক ও বানিজ্যিক এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। স্বর্ণের দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসা-বাড়ি, ভাড়াটিয়াদের নিরাপত্তা সংক্রান্তে সচেতনতামূলক পরামর্শ প্রদান করা হবে। বাসা, এ্যাপার্টমেন্ট, প্রতিষ্ঠান মালিকদের সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং প্রাইভেট নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করতে হবে। আর ঈদের ছুটিকালীন আবাসিক ও বানিজ্যিক এলাকায় অপরাধমূলক কর্মকান্ড প্রতিরোধের লক্ষ্যে দৃশ্যমান পুলিশিং (মোবাইল পেট্রোল, ফুট পেট্রোল, চেকপোস্ট) বৃদ্ধি করা হবে।