সত্যিকারই আন্তর্জাতিক মানের হবে শাহজালাল বিমানবন্দর

জাতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে সত্যিকার অর্থেই আন্তর্জাতিক মানের একটা বিমানবন্দর করা হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৩য় টার্মিনাল ভবনের ফাউন্ডেশনের স্টিল পাইলের পরিবর্তে বোর্ড পাইলস ব্যবহারের ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এটি নির্মাণ হলে সারা বিশ্বের কাছে বলতে পারবো আমাদেরও আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর আছে।
বুধবার সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এ সংক্রান্ত দুটি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়। কমিটির আহ্বায়ক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দেশের বাইরে থাকায় সভায় সভাপতিত্ব করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। বৈঠকে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে জুম প্লাটফর্মের মাধ্যমে এসব তথ্য জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দুইটি প্রস্তাবের মধ্যে একটি হলো, কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগের লক্ষ্যে ক্রয়প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ প্রস্তাবটি অনেক বড় একটি প্রস্তাব। আমাদের প্রাধিকার প্রকল্পের একটি। প্রধানমন্ত্রী বার বার বলেছেন কক্সবাজারকে একটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে রূপান্তর করে পর্যটকদের আকষর্ণের স্থান হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে চাই। এ লক্ষ্য ১৮৬৮ কোটি ৫২ লাখ ৬৯ হাজার ৪৫০ টাকার একটি প্রকল্পে সুপারিশ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের ঠিকাদারির কাজটি পেয়েছে চায়নার সিআরসি কোম্পানি।
বৈঠকে দ্বিতীয় প্রস্তাবটি হচ্ছে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন ৩য় টার্মিনাল ভবনের ফাউন্ডেশনের স্টিল পাইলের পরিবর্তে বোর্ড পাইলস ব্যবহারের ভেরিয়েশন বা কার্যবিধি পরিবর্তনের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের অহংকারের একটি প্রকল্প। আমরা চাচ্ছি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সত্যিকার অর্থেই আন্তর্জাতিক মানের একটা বিমানবন্দর হোক। এই বিমান বন্দরটির ৩য় টার্মিনালটি নির্মাণ হলে সারা বিশ্বের কাছে বলতে পারবো আমাদেরও আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর রয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৫ সালে শাহজালাল বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ ও সম্প্রসারণের প্রাথমিক সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন ও খসড়া মাস্টার প্ল্যান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যায়। ২০১৭ সালে ২৪ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় একনেক। এ প্রকল্পে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় ১৩ হাজার ৬১০ কোটি ৪৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। নির্মাণ কাজে অর্থায়ন করবে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। এছাড়া সব ধরনের সাপোর্ট দেবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শেষ হতে সময় লাগবে ৪ বছর। থার্ড টার্মিনালের ভবন হবে তিন তলা। ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের এই ভবনটির নকশা করেছেন স্থপতি রোহানি বাহারিন। তিনি এনওসিডি-জেভি জয়েন্ট বেঞ্চার পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সিপিজি কর্পোরেশন (প্রাইভেট) লিমিটেডের (সিঙ্গাপুর) স্থপতি। থার্ড টার্মিনালের বহির্গমনের জন্য ১৫টি সেলফ সার্ভিস (স্ব-সেবা) চেক ইন কাউন্টারসহ মোট ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার থাকবে।
এছাড়া, ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারসহ মোট ৬৬টি ডিপারচার ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে। আগমনীর ক্ষেত্রে ৫টি স্বয়ংক্রিয় চেক-ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি পাসপোর্ট এবং ১৯টি চেক-ইন অ্যারাইভেল কাউন্টার থাকবে। টার্মিনালে ১৬টি আগমনী ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে।
অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য ৪টি পৃথক বেল্ট স্থাপন করা হবে। তৃতীয় টার্মিনালে সঙ্গে বর্তমান টার্মিনাল ভবনগুলোর সঙ্গে প্রকল্পের প্রথম ধাপে কোনও যোগযোগ ব্যবস্থা থাকবে না। তবে প্রকল্পের ২য় ধাপে কানেকটিং কোরিডোরের মাধ্যমে পুরোনো টার্মিনাল ভবনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হবে। গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য তৃতীয় টার্মিনালে সঙ্গে মাল্টিলেভেল কার পার্কিং বিল্ডিং ভবন নির্মাণ করা হবে, সেখানে ১ হাজার ৪৪টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে।
বর্তমানে ভিভিআইপিদের জন্য শাহজালালে পৃথক ভিভিআইপি কমপ্লেক্স রয়েছে, সেটি ভেঙে ফেলা হবে। তবে, তৃতীয় টার্মিনালে পৃথকভাবে স্বতন্ত্র কোনো ভিভিআইপি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে না। তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের অভ্যন্তরে দক্ষিণ পাশে সর্বাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ভিভিআইপি স্পেস থাকবে।


বিজ্ঞাপন