চাঞ্চল্যকর নতুন দলিলের সন্ধান

অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয়

বঙ্গবন্ধু হত্যা

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার একটি নতুন চাঞ্চল্যকর দলিলের সন্ধান পাওয়া গেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকা-ে সরাসরি জড়িত এবং বিচারে মৃত্যুদ- প্রাপ্ত সৈয়দ ফারুক রহমানের লেখা এই দলিলটি ব্রিটেনের জাতীয় মহাফেজখানায় পাওয়া গেছে।
দেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা- নিয়ে গবেষণা ও অনুসন্ধানের কাজে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরেছেন। ব্রিটেনের জাতীয় মহাফেজখানায় তিনি ওই সময়কার নানা দলিল পাঠ করেছেন। সেখানেই ফারুকের সাত পৃষ্ঠার চিঠিটির বিস্তাতির তিনি উদ্ধার করেন। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ১৫ আগস্ট মিজানুর রহমানের এক লেখায় তিনি এসব তথ্য জানিয়েছেন।
মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, খুনি সৈয়দ ফারুক রহমান তার চিঠিতে নির্দিষ্টভাবে দাবি করেছেন যে, বাংলাদেশ ইসরামি প্রজাতন্ত্র হওয়ার প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তা করেননি। এজন্য ফারুক ‘আল্লাহর প্রেরিত বান্দা’ হিসেবেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছেন এবং এর জন্য তিনি আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করবেন।
মিজানুর রহমানের তথ্যে বলা হয়েছে, সৈয়দ ফারুক তার ওই চিঠিটি লিখেছেন ১৯৭৬ সালে। তার নিজের হাতে ইংরেজিতে লেখা চিঠিটি ওই বছরের ২৪ জুন। তার সাক্ষরটি বেশ অস্পষ্ট। সাক্ষরের নিচের পদবী লিখেছেন, লে. কর্নেল, দ্য বেঙ্গল ল্যান্সারস।
ফারুকের ওই চিঠি ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর কোন সূত্র থেকে সংগ্রহ করেছিলেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মকর্তার (এম ভি শ এবং মিসেস মার্শাল) কাছে এর অনুলিপি পাঠিয়েছিল পররাষ্ট্র দপ্তর।
ব্রিটেনের জাতীয় মহাফেজখানায় এসব দলিল এখন উন্মুক্ত করা রয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের থেকে দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের কর্মকর্তা এন ডব্লিউ ব্রাউনি ওই চিঠিটি ১৬ জুলাই ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের এ ই মন্টগোমারিকে পাঠিয়েছিলেন।
চিঠিতে যা আছে:
ফারুকের লেখা চিঠির শিরোনাম হলো, ‘দ্য ইসলামিক সোশ্যালিস্ট রেভল্যুশন ইন বাংলাদেশ’।
সেখানে লেখা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে বিশ্বাস করেছিল যে, শেখ মুজিব বাংলাদেশকে ইসলামিক রাষ্ট্র করবেন। এজন্য তাকে সব ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা না করেননি। এই বিশ্বাসঘাতকতার কারণেই তাঁকে ধ্বংস করেছি। কেউ তাঁকে বাঁচাতে পারেনি।’
চিঠিতে একটি স্থানে লিখেছেন, ‘পঁচাত্তরের ১৫আগস্ট ইসলামি বিপ্লবের প্রয়োজনে আমি সর্বশক্তিমান আল্লাহর নগণ্য হাতিয়ার (হাম্বল ইনস্ট্রুমেন্ট) হিসেবে শেখ মুজিবকে ধ্বংস করি। আর সেই মুহূর্তেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলাদেশে প্রকৃত পরিবর্তন তথা ইসলাম বাস্তবায়নের দায়িত্বভার গ্রহণ করি।’
এদিকে ৪৫ বছর দেশের বাইরে পলাতক থাকার পর গত ৬ এপ্রিল গভীর রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার দ-প্রাপ্ত আসামি আবদুল মাজেদ।
কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ১২ এপ্রিল ১২টা ১ মিনিটে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। তার মৃত্যুদ- কার্যকর করার আগে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সঙ্গে মেজর জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততা নিয়ে জবানবন্দি দিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) মাজেদ।
জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে জিয়াউর রহমান সাহেব ১০-১১টার দিকে ক্যান্টনমেন্ট অডিটোরিয়ামে সব অফিসার এবং জওয়ানদের এড্রেস করেন। ওখানে উনি মোটিভেট করেন, যে ঘটনা গত রাতে ঘটে গেছে তোমরা সে সব নিয়ে কোনো মাথা ঘামাবে না। তোমরা সব চেইন অব কমান্ডে ফিরে যাও। তোমরা সবাই ফিরে যাও, তোমরা কাজকর্ম কর। এটা জাতির ব্যাপার, আমাদের ব্যাপার না।’
মাজেদ আরও বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের সমর্থন আছে না হলে উনি আগ বাড়িয়ে এসব মোটিভেশন কেন করবেন? উনার সমর্থন ছিল তা পরিষ্কার কথা। রেগুলার ওরাই ডিরেক্ট করতো সবকিছু, হুকুম চালাতো ওখান থেকে। ওরা যা চাইতো জিয়াউর রহমান তাই করে দিতেন। এ ধরনের অবস্থা ছিল তখন। এতেই তো সব পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। এরা সব ভিআইপি অবস্থায় ছিল। প্রেসিডেন্টের গেট দিয়ে এরা প্রবেশ করতো। প্রেসিডেন্টের পাশের ভিআইপি স্যুটে মোশতাক সাহেব যে রুমে থাকতেন, সেই পাশে ওরা থাকতো। ওখানেই ওদের সাথে জিয়াউর রহমান সাহেবের কথোপকথন হতো।’


বিজ্ঞাপন