আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম!

রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক : আবাসিক এলাকা হলেও বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যবহার বেড়েছে রাজধানীর মেরুল বাড্ডার ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকায়। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। ডিআইটি প্রজেক্ট নামে পরিচিত আবাসিক এলাকাটি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতাধীন। এখানে ভবনের নকশাবহির্ভূত অংশ ও অননুমোদিত বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য অভিযানের আয়োজন করেও থেমে যায় রাজউক। তিন বছর ধরে বিভিন্ন সময় অবৈধ স্থাপনা অপসারণে এখানকার শতাধিক ভবন মালিককে নোটিশ দেয়া হয় কিন্তু তারা আমলে নেননি।
বর্তমানে এলাকাটির চিত্র দেখে বোঝাই যাবে না যে, এটি একটি আবাসিক এলাকা। বিভিন্ন ধরনের ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে এবং নিরিবিলি পরিবেশে বসবাসের জন্য যারা এই আবাসিক এলাকায় এসেছিলেন তারা এখন পড়েছেন সীমাহীন দুর্ভোগে।
কারণ, আবাসিক এলাকার মতো নীরবতা এখন সেখানে নেই। বাড়ির নিচতলায় গড়ে উঠেছে মার্কেট, দোকান। বলতে গেলে প্রায় প্রতিটি বাড়ির নিচতলায় রয়েছে বাণিজ্যিক দোকান, শোরুম, এমনকি মার্কেটও। শুধু তাই নয়, পাশেই গড়ে উঠেছে একটি বড় পাইকারি ও খুচরা মাছের বাজার। মাছ বাজারের কারণে প্রতিদিনই সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ফলে স্থানীয়দের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এছাড়া পাশের প্রধান সড়ক ঘিরে গড়ে উঠেছে বড় বড় কাঠের দোকান, করাতকল (স’মিল), স্টিলের ওয়ার্কশপ, গাড়ির ওয়ার্কশপ, বড় বড় হার্ডওয়ার ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওয়ার্কশপ। বাণিজ্যিক এমন ব্যবহারের কারণে আবাসিকের কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না এ এলাকার মানুষ।
শুধু তা-ই নয়, ডিআইটি প্রজেক্টের মধ্যে সিরাজ মিয়া মেমোরিয়াল স্কুল সংলগ্ন মাঠে প্রভাবশালীদের মদদে বসানো হয়েছে অস্থায়ী দোকান। ভ্যান ছাড়াও ত্রিপল টাঙিয়ে বেচাবিক্রি হচ্ছে সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় উপকরণ। ফলে এলাকার শিশু-কিশোর ও তরুণরা খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাঠের বেশকিছু এলাকাজুড়ে অস্থায়ী দোকান বসানো হয়েছে। এসব দোকানের কারণে শিশু-কিশোররা অল্প জায়গা ব্যবহার করে খেলাধুলা করছে। যেটা তাদের জন্য পর্যাপ্ত নয়। মাঠটির বাকি স্থানে জমে আছে কাদাপানি।
রাজউক সূত্র জানায়, ডিআইটি প্রজেক্টের এই অংশে আবাসিক প্লটের সংখ্যা এক হাজার ২০০’র কাছাকাছি। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে এ এলাকায় ভবনের নকশাবহির্ভূত অংশ ও অননুমোদিত বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য অভিযানের আয়োজন করে রাজউক। হাইড্রোলিক এক্সকাভেটর, হাতুড়ি-শাবল নিয়ে শ্রমিকরাও প্রস্তুতি নেন। অননুমোদিত স্থাপনার মালিকদের দ্রুত জায়গা খালি করার জন্য বলা হয়। পরক্ষণেই আসে অভিযান স্থগিতের ঘোষণা।
উচ্ছেদ অভিযানের জন্য সবধরনের প্রস্তুতি নিলেও স্থগিত কেন হয়েছিল এমন প্রশ্নে রাজউকের সেই সময়কার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার অলিউর রহমান বলেন, ‘অনিবার্য কারণে এই অভিযান স্থগিত করা হয়েছে। প্রজেক্ট এলাকার লে-আউট ম্যাপ নিয়ে মামলা আছে। আইনগতভাবে বিষয়টি সুরাহার পর আবার অভিযান চালানো হবে।’
কিন্তু পরে আর অভিযান পরিচালিত হয়নি। এ সুযোগে ডিআইটি প্রজেক্টের আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক ব্যবহার বাড়তে শুরু করে। রাজউকের নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে প্রায় প্রতিটি বাসার নিচতলায় দোকান, মার্কেট বসানো হয়। পাশেই গড়ে ওঠে কাঠের দোকান, মাছের বড় বাজার, টিম্বার, ইঞ্জিনিয়ারিং ও গাড়ির ওয়ার্কশপ, শোরুমসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।
ডিআইটি প্রজেক্টে বসবাসকারী বেসরকারি চাকরিজীবী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘নিরিবিলি বসবাসের জন্য ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকায় এসে উঠেছিলাম। কিন্তু আবাসিক এলাকাটিতে এখন নিয়মবহির্ভূতভাবে বাণিজ্যিক ব্যবহার হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি বাড়ির নিচে দোকান, মার্কেট বসেছে। নামে আবাসিক হলেও ব্যবহারের দিক থেকে বলা চলে এটি বাণিজ্যিক এলাকা। প্রতিনিয়ত এলাকাবাসী নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, অস্বস্তিতে দিন পার করতে হচ্ছে। অভিযোগ দিয়েও কোনো সমাধান মিলছে না কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।’
এলাকার বাসিন্দা সোবহান শিকদার বলেন, ‘এলাকাটি দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এটি কোনো আবাসিক এলাকা। এখানেই গড়ে উঠেছে বড় পাইকারি মাছের বাজার, যা থেকে প্রতিদিন দুর্গন্ধ ছড়ায়। আছে ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, কাঠের মিল, গাড়ির ওয়ার্কশপ। সব মিলিয়ে খুবই ভোগান্তিতে আছেন এলাকার মানুষ। শুধু তা-ই নয়, প্রতিটি বাড়ির নিচতলায় একটি করে মার্কেট বা দোকান বসানো হয়েছে। শিশুদের খেলাধুলার জন্য বরাদ্দ মাঠেও বসানো হয়েছে অস্থায়ী বাজার, দোকান। এসব দেখার যেন কেউ নেই!’
‘আবাসিক এলাকার পরিবেশ তো আবাসিকের মতোই হওয়া উচিত। এটা ভেবেই এখানে যারা বসবাস করতে এসেছেন তারাই পড়েছেন বিপদে। কারণ, আবাসিক এলাকা এখন বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত হয়েছে’ যোগ করেন তিনি।


বিজ্ঞাপন