নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তৃণমূল এখনও অনেকটাই অগোছালো। দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন করার আগে বেশ কয়েকটি জেলা সম্মেলন করা হয়েছিল। সেখানে জেলা কমিটিগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নাম ঘোষণা করা হয়। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি আর করা হয়নি। দলীয়ভাবে উদ্যোগ নিলেও মার্চ থেকে মহামারী করোনার কারণে থমকে যায় সব ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম। তবে করোনা, ঘূর্ণিঝড় আমফান ও বন্যায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন দলটির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা। চলতি আগস্টে কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম না করলে এই শোকের মাসকে ঘিরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেছে আওয়ামী লীগ।
এদিকে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে মহানগর ও জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ নিয়ে লবিং-গ্রুপিং নিয়ে সকাল-সন্ধ্যা ব্যস্ত সময় পার করছেন নেতারা। লক্ষ্য করা যাচ্ছে নতুন কমিটিতে স্থান পেতে অনেকেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। পছন্দের পদ বাগিয়ে নিতে ধরনা দিচ্ছেন জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে।
সিলেট আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা এ প্রতিবেদককে জানান, দলে পছন্দের পদ পেতে কেউ ছুটছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খানের কাছে। কেউ যাচ্ছেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেনের কাছে। এদিকে কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একাধিক বৈঠক করেছেন। দলের দুর্দিনের পরীক্ষিত নেতাদের বাছাই করে তালিকা করা হয়েছে।
সিলেট নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন জানান, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি প্রায় প্রস্তুত। এখন শুধু যাচাই-বাছাই করে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা কেন্দ্রে পাঠানোর অপেক্ষা। গত ৫ ডিসেম্বর নগরীর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক পদে অধ্যাপক জাকির হোসেনের নাম ঘোষণা করা হয়। আর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক পদে সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খানের নাম ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি ৩ মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু ৯ মাসেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি।
দলীয় সূত্র জানায়, করোনা পরিস্থিতিসহ নানা কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে দেরি হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় কেন্দ্র থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি পাঠাতে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রের এই নির্দেশনা পেয়েই দুই ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। নতুন ও পুরনোদের নিয়েই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হচ্ছে। এবার কিমিটিতে ত্যাগী ও তরুণদের প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। কমিটিতে হাইব্রিড ও অনুপ্রবেশকারীদের জায়গা দেয়া হবে না।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান জানান, ২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় দলের দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সম্পাদকম-লীর সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ কমিটি তৈরির কাজ চলছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে কেন্দ্রে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, আগের কমিটি ছিল ৭১ সদস্যবিশিষ্ট। নতুন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৭৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হবে।
সূত্র জানায়, পদে থাকলেও অনেকে জাতীয় ও স্থানীয় কোনো দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেননি। করোনাকালেও দলীয় প্রধানের নির্দেশনামতে মানুষের পাশে দাঁড়াননি। তাদের ব্যাপারে এবার দলের সজাগ ও সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান বলেন, পুরনোদের রেখেই কমিটি হবে। যদিও সব পদেই রদবদলের সম্ভাবনা রয়েছে। যুগ্ম-সম্পাদক ও সম্পাদকীয় পদবিধারীদের পদোন্নতি দেয়া হতে পারে। নতুন-পুরনোদের সমন্বয়ে মেধাবীদের দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দেয়া হবে।
দলীয় একটি সূত্র জানায়, সিনিয়র অনেক নেতার পদ না দিয়ে সম্মান রক্ষার্থে কমিটিতে সদস্য রাখা হতে পারে। বাদ পড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিনকে পদোন্নতি দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যারা অন্য দল থেকে এসে আওয়ামী লীগে ভিড়েছেন তাদের কারোরই এবার পদ পাওয়ার সুযোগ নেই।
আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন জানিয়েছেন, করোনার কারণে যারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেননি, তাদেরকে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কেন্দ্রে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিতে বলা হয়েছে। করোনাপরবর্তী রাজনৈতিক কর্মকা- সচলের অংশ হিসেবেই কমিটিগুলো যাচাই-বাছাই শেষে দ্রুত অনুমোদন দেয়া হবে।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কেন্দ্রে জমা দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরই আলোকে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হচ্ছে। যারা সক্রিয় তারা যেন কমিটি থেকে বাদ না পড়েন সেদিকে নজর রাখতে সংশ্লিষ্ট নেতাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ না কমলেও অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে সারা দেশের জনজীবন। ধীরে ধীরে সরব হচ্ছে রাজনীতির মাঠও। দলীয় কার্যক্রমে ফিরছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সেপ্টেম্বর মাস থেকেই সংগঠনের স্থগিত কার্যক্রম আবার সচল করতে যাচ্ছে দলটি।
দলের শূন্য পদগুলো পূরণ, সংসদীয় শূন্য পাঁচ আসনে দলীয় মনোনয়ন দেয়াসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশেরও জোর আলোচনা চলছে। সাংগঠনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি দলটি সরকারে থাকায় এরই মধ্যে সেপ্টেম্বরে মন্ত্রিসভায় রদবদলের গুঞ্জনও রয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, করোনার কারণে থমকে থাকা রাজনীতির চাকা সচল হবে সেপ্টেম্বর থেকে। জেলা-উপজেলা সম্মেলন শুরু করার আগে ১০ সেপ্টেম্বর দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত আসবে। ঘোষণা করা হবে আওয়ামী লীগের পাঁচ সহযোগী সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটিও। আর যেসব জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই সেটাও পূরণ করা হবে। এর মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ শূন্য পদগুলোও পূরণ করা হতে পারে বলে জানা গেছে।