নতুন মাদকের গন্তব্য ছিল অস্ট্রেলিয়া
বিশেষ প্রতিবেদক : ইয়াবার চেয়ে শক্তিশালী অ্যামফিটামিন কীভাবে বাংলাদেশে এসেছে তা জানতে না পারলেও গন্তব্য জেনেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। বুধবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সমন্বিত অভিযানে জব্দ করা হয় কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়াগামী ১৪টি বড় প্যাকেট।
সেখানে ২৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা মূল্যের মাদক অ্যামফিটামিন জব্দ করা হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর বলছে, এসবের কিছুই বাংলাদেশে উৎপাদন হয় না। তবে এটি ইউরোপে বহুল ব্যবহৃত। এই মাদক কোনো না কোনোভাবে বাংলাদেশে এসেছে।
‘যার গন্তব্য ছিল হংকং হয়ে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন। প্রাপক, দাস সিং ৩৪ কলম্বিয়া রোড, মেলবোর্ন নারে ওয়ারেন লিআইসি ৩৮০৫। এই মাদকের চোরাচালানের পেছনে যে বা যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অ্যামফিটামিন পাউডার পাচারের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মোট ছয়জনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’
আটকরা হলেন- বাংলাদেশ এক্সপ্রেস লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (অর্থ) খন্দকার ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ (৫০) ও সিনিয়র ম্যানেজার (অপারেশন) রাসেল মাহমুদ (৩২)। ইউনাইটেড এক্সপ্রেসের জেনারেল ম্যানেজার গাজী শামসুল আলম (৪৩)। এক্সপোর্ট কার্গোর ভেতরে এমজিএইচ গ্রুপের লোডিং সুপারভাইজার কাজল থুটোকিশ গোমেজ, কার্গো হেলপার/লোডার মো. হামিদুল ইসলাম (৩০) ও মো. নজরুল ইসলাম। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচা সদর দফতরে এমন তথ্য জানান অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আহসানুল জব্বার। তিনি বলেন, হয়রত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রফতানি কার্গো ভিলেজে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কাস্টমস বাংলাদেশ বিমানের মাস্টার এয়ারওয়ে বিল নম্বর ৯৯৭-৬২৪৪-৯১৩৩ এর বিপরীতে ৩৪০ কার্টন পণ্য এসেসমেন্ট এবং বিধি মোতাবেক দৈবচয়নের ভিত্তিতে কায়িক পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়।
বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধির উপিস্থিতিতে সিভিল এভিয়েশনের ডুয়েল ভিউ সিকিউরিটি স্ক্যানিং ৩৪০ কার্টন পণ্যের মধ্যে সাতটি কার্টনে তল্লাশি করে জিন্সের প্যান্টের আড়ালে কার্টনের গায়ে ১৪টি বড় প্যাকেট ও ১৪টি ছোট প্যাকেটে মোট ২৮টি কার্বনের লেয়ার দ্বারা প্রস্তুত পাতলা অ্যালুমিনিয়াম প্যাকেট উদ্ধার করা হয়। সেখানে অভিনব কায়দায় লুকানো মোট ১২ কেজি ৩২০ গ্রাম সন্দেহজনক দ্রব্য পাওয়া যায়।
পরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারে নমুনা টেস্ট করে অ্যামফিটামিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়, যা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এর ক’ তফশিলভুক্ত মাদক।
যে সাতটি কার্টনে অ্যামফিটামিন পাওয়া যায় সেগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত রফতানি দলিলাদি প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বাংলাদেশ এক্সপ্রেস লিমিটেডের (ফেডেক্স) মাস্টারওয়ে বিল নং ৮১৫১৫৬০২৪৬২৬ এর ছয়টি কার্টন এবং মাস্টারওয়ে বিল নং ৮১৪৯২৬৯৫১৯৭০ এর একটি কার্টনসহ মোট সাতটি কার্টনে শিপারের নাম নেপচুন ফ্রেইট লি. বাড়ি ৫০১, রোড ১৪ কেরানীগঞ্জ।
এসব পণ্য রফতানিতে কাস্টমসের জন্য ম্যানুয়ালি বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল করেছে রফতানিকারকের পক্ষে মেসার্স ডিনামিক ট্রেডার্স (অওঘ:১০১-৯৬০৭২৮). বাংলাদেশ এক্সপ্রেস লি. (ঋবফবী) লোকাল এজেন্ট হলো ইউনাইটেড এক্সপ্রেস, ১৬৭, সার্কুলার রোড, ঢাকা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ডিজি বলেন, জব্দকৃত অ্যামফিটামিন পাউডারের আনুমানিক কেজিপ্রতি মূল্য দুই কোটি টাকা। সে হিসাবে জব্দ ১২ কেজি ৩২০ গ্রাম অ্যামফিটামিন পাউডারের প্রায় ২৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নেপচুন ফ্রেইট লিমিটেডের উত্তরার আশকোনায় একটি অফিস রয়েছে এবং ওই অফিসের রুবেল হোসেন নামের এক ব্যক্তি ওই সাত কার্টনে তৈরি পোশাক-জিন্সের প্যান্ট অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর জন্য ইউনাইটেড এক্সপ্রেস লিমিটেডে বুকিং দিয়ে যায়।
বনানীস্থ ইউনাইটেড ফ্রেইটের পরামর্শক্রমে ইউনাইটেড এক্সপ্রেস লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটি প্রথমবারের মতো নেপচুন ফ্রেইট লিমিটেডের ওই সাতটি কার্টন গ্রহণ করে বলে জানা যায়। পরবর্তীতে ইউনাইটেড এক্সপ্রেস লি. কার্টনগুলো বাংলাদেশ এক্সপ্রেস লিমিটেডে (ফেডেক্স) প্রেরণ করে। ফেডেক্স তার হাবে সংরক্ষণ করে এবং কার্গো ভিলেজে পাঠায়।
তিনি বলেন, মামলার কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পরে ব্যাপকভাবে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে এবং এই আন্তর্জাতিক পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এক্ষেত্রে কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আহসানুল জব্বার বলেন, আমরা বাংলাদেশে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর ওপর নজরদারি রাখছি। কেউ যাতে কোনোভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসকে ব্যবহার করে বিভিন্ন পণ্যের আড়ালে মাদকের চোরাচালান করতে না পারেন।
আরেক প্রশ্নের জবাবে অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন) ডিআইজি মাসুম রব্বানী বলেন, এই মাদক বাংলাদেশে উৎপাদন হয় না। পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার ও চীন উৎপাদন করে। সেখান থেকে কোনো না কোনোভাবে এটি বাংলাদেশে আসতে পারে।