মাহাবুবা লাকি
সেই সেদিনের কথা বলছি—–
লোকে-লোকারণ্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান,
যেখানে বসে আছে কৃষক শ্রমিক মুচি ঋষি
ও মুক্তিকামী বাংলার দামাল ছেলেরা।
এ যেনো জনতার ঢেউ —–
নিষ্পলক তাকিয়ে আছে মহানায়কের পথ চেয়ে
তিনি আসবেন,নির্দেশ করবেন তর্জনী উঁচু করে।
সবাই উৎসুক তাকিয়ে ওই তর্জনীর দিকে
কি আদেশ আসবে সেই অপেক্ষায়।
তিনি শোনাবেন মা মাটি দেশ ভাষা শোষণ ও
শাসনের বিরুদ্ধে শেকল ভাঙা গানের কথা।
সেই গানের সুরে বাঙালির হৃদয় খুঁজে নেবে
পদ্মা মেঘনা যমুনায় তাদের নির্ভরতার ঠিকানা।
অবশেষে বিস্ময় ভরা সেই মহানায়ক এলেন!
তীর্ব ঝাঁঝালো কন্ঠে নির্দেশ দিলেন,
“ভাইয়েরা আমার ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোল
ওদের টুটি চেপে ধরে পিষে দাও—।
এ মাটিতে সহ্য করা হবেনা আর কোন অন্যায়
সেদিন ওই তর্জনীর নির্দেশই সংবিধান হয়ে গেলো,
লাখো লাখো হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে
জয়বাংলা জয়বাংলায় মুখোরিত হলো।
বাঙালি অদম্য শক্তি পেয়েছিল ওই তর্জনীর কাছে
এরপর সবটাই ইতিহাস —–!
সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সন্তানের স্থান হলো কারাগারে।
বন্দী থেকেই নেতৃত্ব দিলেন জাতিকে,
অকুতোভয় বাঙালি সেই তর্জনীকে লক্ষ করে
লড়ে গেলেন রক্তক্ষয়ী করুন নয়মাস।
ত্রিশ লক্ষ প্রাণের দামে এলো সোনার বাংলা
জাতি ফিরে পেলো এই মহান নেতাকে।
বিশ্বের বুক আলোকিত করা এই মানুষটিকে দেখে
স্বার্থান্বেষী দেশদ্রোহীরা ভীত হয়ে পড়লো,
তাই শুক্রবারের এক নিষ্পাপ ভোরে চুপিচুপি
নির্মমভাবে হত্যা করলো নির্যাতিত শোষিত বাঙালির
স্বপ্ন দেখানো সেই মহামানবকে।
যে ছিল এই জাতির কাছে একটি সংবিধান!
৬৭৭দাগের ৩২ নাম্বারে তারই রক্তেভেজা সিঁড়িতে
কি অসহায় করুণ ভাবে ঢলে পড়ল সেই তর্জনী।
স্বাধীনতাকামী হাজার যোদ্ধারা—–
এই দৃশ্যে নির্বাক বিস্ময়ে হতবাক হয়েছিলো,
ক্ষতবিক্ষত হৃদয় চেপে কেঁদেছিলো বাঙালিরা
এ লজ্জা এ কলংক তারা কোথায় লুকাবে?
যে মানুষটি দেশও দেশের মানুষের কথা ভেবে
সারাজীবন জেলে কাটালো,
যার চাওয়া পাওয়া ছিলো বাংলার মানুষ যেনো
দু-বেলা ভাত খাওয়ার নিশ্চয়তা পায়।
অথচ সেই মানুষটিকে বিশ্বাসঘাতক ও
পাকিস্তানপ্রেমি নিমকহারামদের হাতেই
করুণভাবে মরতে হলো।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগাস্টে শায়িত হলো সেই তর্জনী,
এ লজ্জার দায়ভারে সারাজীবন কাঁদবে বাঙালি
কাঁদবে সোহরাওয়ার্দী, কাঁদবে লাল-সবুজ পতাকাও।