পেঁয়াজে ব্যাপক ঝাঁজ, মরিচে কড়া ঝাল

অর্থনীতি জাতীয় রাজধানী

দ্রব্যমূল্যে বাঁধা নিম্ন আয়ের হাসি-কান্না

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : মহামারি করোনার প্রভাব, সঙ্গে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখিতায় কোন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে এ নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের। তারা প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সংসার চালাতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। চাকরি করা তিনজন জানিয়েছেন, করোনার কারণে বেতন কমে গেছে। ১০ রিকশাচালক জানান, তাদের আয় কমে গেছে। ফলে খাওয়া-দাওয়াও কমিয়ে দিয়েছেন। খরচের লাগাম টানতে না পেরে মাঝে মধ্যে দুপুরে না খেয়ে থাকেন কয়েকজন।
মধুবাগের বাসিন্দা রিকশাচালক মো. হাফিজুর বলেন, পরিবার গ্রামে থাকে। ঢাকায় মেসে থাকি। সকাল ও রাতের খাওয়া আর থাকার ভাড়াবাবদ মাসে দিতে হয় পাঁচ হাজার টাকা। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে আয় হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। রিকশার ভাড়াবাবদ গ্যারেজে দিতে হয় ৮০ টাকা। গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী, দুই সন্তান এবং মা থাকেন। তাদের জন্য মাসে পাঠান তিন হাজার টাকার মতো।
হাফিজুর বলেন, সবকিছুর দাম বাড়ার কারণে গত মাস থেকে মেস ভাড়া বাড়ার কথা বলেছে। অনেক অনুরোধ করে এ মাস পর্যন্ত সময় নিয়েছি। সামনের মাস থেকে ৫০০ টাকা বেশি দিতে হবে। এখনই যে খরচ তাতে বেশিরভাগ দিন দুপুরে না খেয়ে থাকতে হয়। আগামী মাস থেকে ৫০০ টাকা বেশি দিতে হলে কষ্ট আরও বেড়ে যাবে। জিনিসপত্রের দাম কম থাকলে হয়তো মেস ভাড়া একটু কম দেয়া যেত।
বেসরকারি একটি কোম্পানিতে মার্কেটিংয়ের কাজ করেন মোখলেছুর রহমান। তিনি বলেন, বাজারে গিয়ে যেকোনো পণ্যের দাম শুনলে মন খারাপ হয়ে যায়। করোনার কারণে একদিকে আয় বাড়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে, অন্যদিকে সবকিছুর দাম বাড়তি। কোনোভাবেই আয়-ব্যয়ের হিসাব মিলাতে পারছি না। এখন নতুন করে চাল, পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। এতে কষ্ট আরও বাড়বে, বুঝতে পারছি। এ দুর্দিনে খাদ্যপণ্যের দাম যদি কম থাকত, তাহলেও কিছু খরচ বাঁচানো যেত। কিন্তু চাল, ডাল, সবজির বাড়তি দাম ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে আমাদের ওপর পড়েছে।
১৮ শতাংশ বেড়েছে চালের দাম : সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় বর্তমানে গরিবের মোটা চালের দাম ১৮ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়তি। তুলনামূলক কম বেড়েছে চিকন চালের দাম। গত বছরের তুলনায় চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি দামে।
তেলে অশান্তি : টিসিবি’র হিসাবে, গত বছরের তুলনায় এখন সুপার পাম অয়েল ২৬ দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। লুজ সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৩ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশি দামে। লুজ পাম অয়েলের দাম বেড়েছে ২৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। পাঁচ লিটার বোতলের সয়াবিন তেলের ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং এক লিটারের ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ দাম বেড়েছে।
ভোগাচ্ছে আলু-ডাল : গরিবের খাদ্য হিসেবে পরিচিত আলু এখন আর গরিবের জন্য নয়। এক কেজি আলু ৪০ টাকার নিচে মিলছে না কোথাও। টিসিবি বলছে, গত বছরের তুলনায় আলু এখন ৬৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সারাদিন পরিশ্রম করে নি¤œ আয়ের একজন মানুষ ডাল আর আলুভর্তা দিয়ে শান্তি করে দু’মুঠো ভাত খাবেন, তারও উপায় নেই। মাঝারি দানার মসুর ডালের দাম গত বছরের তুলনায় ৩৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বড় দানার মসুর ডাল ২১ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং ছোট দানার ডালের দাম ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়েছে।
পেঁয়াজে ব্যাপক ঝাঁজ, মরিচে কড়া ঝাল : আগের চেয়ে কিছুটা দাম কমলেও ৮০ টাকার নিচে এক কেজি দেশি পেঁয়াজ মিলছে না। আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ কিনতে লাগছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। টিসিবি বলছেন, গত বছরের তুলনায় বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে আমদানি করা পেঁয়াজ ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ কম দামে পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে বাজারে ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ কিনতে গুনতে হচ্ছে ৫০ টাকা। শুকনা মরিচের কেজি ২২০ টাকার নিচে নেই। টিসিবির হিসাবে, গত বছরের তুলনায় দেশি শুকনা মরিচের দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া আমদানি করা আদার দাম বেড়েছে ৪২ দশমিক ৪২ শতাংশ। হলুদ, এলাচ, দারুচিনির পেছনেও বাড়তি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে ভোক্তাদের।
সবজি ছুঁতে মানা : সুস্থ থাকার জন্য বিশেষজ্ঞরা বাড়তি সবজি খাওয়ার পরামর্শ দেন। নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য সেই সবজি এখন ছুঁতে মানা! দু-একটি বাদে বেশিরভাগ সবজির কেজি ৫০ টাকার ওপরে। এমনকি ১০০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে একাধিক সবজি। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, তিনজনের পরিবারের জন্য ১০০ টাকার সবজি এখন একদিনও চলে না।
এছাড়া বাজারে শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকায়, পেঁপে ৪০-৬০ টাকা, করলা ৫০-৭০ টাকা, পাকা টমেটো ১২০-১৪০ টাকা, শিম ১২০-১৪০ টাকা, গাজর ৮০-১০০ টাকা, বরবটি ৬০-৮০ টাকা, বেগুন ৫০-৭০ টাকা, ঝিঙে ৫০-৬০ টাকা, পটল ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শীতের আগাম সবজি ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকায়।


বিজ্ঞাপন