বৃষ্টিতে ছন্নছাড়া রংপুর নগরী

সারাদেশ

শত বছরের রেকর্ড

 

রংপুর প্রতিনিধি : টানা দশ ঘণ্টার বৃষ্টিতে রংপুর মহানগরীসহ জেলার অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরীর প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার অলিগলি সবখানেই পানিতে একাকার। বাদ পড়েনি বাড়িঘরও। কোথাও কোমর পানি, আবার কোথাও হাঁটু পানি। বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করায় নগরীর প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টা থেকে রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত ৪৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা গত একশ বছরেও হয়নি। এমন বৈরী আবহাওয়া ও বৃষ্টিপাত আরও দু’একদিন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে রাতভর অবিরাম বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের একমাত্র অবলম্বন শ্যামা সুন্দরী ও কেডি ক্যানেল। ভেঙে পড়েছে নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা। নিষ্কাশন সুযোগ না থাকায় পানিতেই চলছে যাতায়াত। নগরবাসী বলছেন ২৫-৩০ বছরেও এমন বৃষ্টিপাত দেখেননি। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যাতেও এমন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়নি।
এদিকে পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধারে সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ফায়ার সার্ভিস কাজ করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে সবেচেয়ে বেশি পানি প্রবেশ করেছে। বেশির ভাগ রাস্তা ৩-৪ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরীর শাপলা চত্বর, হাজীপাড়া, চামড়াপট্টি, করণজাই রেড, সেনপাড়া, নিউ সেনপাড়া, আদর্শপাড়া, বাবুখাঁ, কামার পাড়া, জুম্মাপাড়া, কেরানীপাড়া, আলমনগর, হনুমান তলা, মুন্সিপাড়া, মুলাটোল আমতলা, গণেশপুর, বাবুপাড়া, লালবাগ কেডিসি রোড, বাস টার্মিনাল, শালবন, মিস্ত্রিপাড়া, কামাল কাছনা, মাহিগঞ্জ, কলাবাড়ি দর্শনা, মর্ডান মোড়, মেডিকেল পাকার মাথা, জলকর, নিউ জুম্মাপাড়া, খটখটিয়াসহ অন্তত শতাধিক পাড়া-মহল্লার অলিগলিসহ প্রধান সড়কে পানি উঠেছে। নিচু এলাকার বাড়িতে পানি প্রবেশ করায় হাজার হাজার পরিবার বাড়ি ঘর ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। ছন্নছাড়া হয়েছে নগরবাসীর জীবন। নিজ বাড়িতে রান্না করতে না পারায় দুর্ভোগ উঠেছে চরমে। অধিকাংশ হোটেল বন্ধ থাকায় খাবার কিনে খেতেও হিমশিম খাচ্ছেন অনেকেই।
রাত থেকে অবিরাম বৃষ্টিতে বাড়ির ভেতরে পানি ঢুকে পড়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। বিভিন্ন স্থানে ভারি বর্ষণে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বিদুৎ সংযোগ। জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষজন সহসাই পাচ্ছে না যাতায়াতের বাহন। মিললেও গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।
এদিকে জেলার তিস্তা, করতোয়া, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী নদী বিধৌত নি¤œাঞ্চলে আবারও দেখা দিয়েছে বন্যা। তিস্তার ডালিয়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ভারি বর্ষণ ও আর বজ্রপাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কৃষি জমি, ফসল আর পুকুর-বিল তলিয়েছে পানিতে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, বৃষ্টি আরও দু’একদিন অব্যাহত থাকতে পারে। এভাবে বৃষ্টিপাত হলে নগরীর বেশির ভাগ এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সূত্র জানিয়েছে, নগরীর পানি নিষ্কাশনের অন্যতম শ্যামা সুন্দরী ক্যানেল বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানুষজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তবে ক্যানেলের পানি কমে আসলে ড্রেনেজ ব্যবস্থার মাধ্যমে পানিবন্দি এলাকাগুলো থেকে পানি নেমে যাবে।


বিজ্ঞাপন