চিকিৎসকের প্রেসক্রিশন করা এই পাঁচ ওষুধও মৃত্যুর কারণ হতে পারে

স্বাস্থ্য

আজকের দেশ রিপোর্ট : শুধু মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া ওষুধেই বিপদ ডেকে আনে না৷ অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপসন মেনে ওষুধও মৃত্যুর কারণ হতে পারে৷ এর মূল কারণ হল, ওষুধের ভুল ব্যবহার৷ সামান্য কাঁশি থেকে শুরু করে প্রেসক্রিপশনের ব্যাথার ওষুধের মাত্রা দেওয়া থাকে৷ কোন কোন সময় এই একই সঙ্গে দু’টি ওষুধ খাওয়ার ফলেও বিপদ ডেকে আনতে পারে৷
দু’টি ওষুধের ভুল ব্যবহারের কারণে পেট খারাপ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। ২০ থেকে ৫৯ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে প্রায় ২৮ শতাংশ প্রতি মাসেএকাধিক চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ফলো করেন। তাদের অনেকেরই অজানা যে, শরীরের কী মারাত্মক ক্ষতি তারা করছেন। তাই জেনে নিন কোন কোন ওষুধ এক সাথে খাওয়া কোন মতেই উচিত নয়-
১. রক্তজমাট বাঁধা রোধ করে এমন ওষুধ ও অ্যাসপিরিনঃ
আর্টারিতে রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করতে রোগীদের অ্যান্টিকগাল্যান্ট বা রক্তজমাটরোধী ওষুধ প্রেসক্রাইব করা হয়। এটি শরীরে রাসায়নিক বিক্রিয়াতে প্রভাব ফেলে বলে রক্ত জমাট বাঁধতে সময় বেশি লাগে। অ্যাসপিরিন সাধারণত ছোটখাটো ব্যথার জন্য দেওয়া হয়। কিন্তু অনেকেই হয়ত জানেন না, এটি শরীরের রক্ত পাতলা করে দেয়। ফলে যখন এই দু’টি ওষুধ একসঙ্গে গ্রহণ করা হয় তখন শরীরের অভ্যন্তরে ও বাইরে রক্তপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
২. অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট ও পেইনকিলারঃ
যে রোগীর জন্য পেইনকিলার বা ব্যথা কমানোর ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়, সাধারণত সেই রোগীকে অ্যন্টিডিপ্রেস্যান্ট বা বিষন্নতা দূর করার ওষুধ খেতে নিষেধ করেন ডাক্তাররা। উল্টোভাবে বিষণ্নতা দূর করার ওষুধ যিনি খাচ্ছেন তাকে নিষেধ করা হয় পেইনকিলার খেতে। কারণ একই সঙ্গে এ দু’টি ওষুধ খেলে আপনার শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট ও পেইনকিলার ওষুধ একসঙ্গে গ্রহণ করলে পাকস্থলী ও খাদ্যনালীতে প্রচণ্ড রক্তপাত হতে পারে।
একটি ডাচ গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এই ওষুধ দু’টি একসঙ্গে ব্যবহার করলে পরিপাকতন্ত্রে রক্তপাতের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এই ওষুধ দু’টি একসঙ্গে গ্রহণ করলে মস্তিষ্কের সেরেটোনিন হরমোনের মাত্রায়ও সমস্যা হতে পারে। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে অস্থির লাগতে পারে, হার্টবিট বেড়ে যেতে পারে, শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে পারে এবংশ্বাস-প্রশ্বাস ঘন হয়ে যেতে পারে।
৩. অ্যাসেটামিনোফেন ও অপিনয়েডসঃ
এই দু’টি ওষুধই খুব জনপ্রিয় ওষুধ। পাশাপাশি বিপজ্জনকও। যখন এই ওষুধ দু’টি নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি এক সঙ্গে গ্রহণ করা হয়, ফলাফল হয় ভয়াবহ। প্রায়ই দেখা যায় অনেকেই এই ওষুধের টাইলেনল-এর কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য এর সঙ্গে টাইলেনল থ্রি নিয়ে থাকেন। যখন এক সঙ্গে এই দু’টি গ্রহণ করা হয় তখন লিভারের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। ২০০৫ সালে ওয়াশিংটন মেডিকেল সেন্টারের একটি গবেষণায় দেখা যায়, ৩৮ শতাংশ মানুষের লিভার ফেইলিওর ঘটে৷ যারা একাধিক প্রকার ওষুধ গ্রহণ করেছে এবং এদের মধ্যে ৬৩ শতাংশ অ্যাসেটামিনোফেন ও অপিনয়েডস উভয় ধরনের ওষুধ গ্রহণ করেছে।
৪. পেইনকিলার ও অ্যান্টিএ্যাংজাইটি ওষুধঃ
অ্যান্টিএ্যাংজাইটি বা অস্থিরতা কমানোর ওষুধ এবং পেইনকিলার বা ব্যথানাশক উভয় ওষুধই বিষণ্ণতা দূর করতে সক্ষম। কিন্তু একসঙ্গে এই দু’টি ওষুধ গ্রহণ করলে প্রচণ্ডবিষক্রিয়া হতে পারে। এই দু’টি ওষুধ খেলে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি ও হার্টবিট কমে যেতে পারে, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
৫. সাধারণ কাঁশির ওষুধ ও অ্যান্টিহিসটামিনসঃ
এই দুই ওষুধে একই ধরনের উপাদান রয়েছে। যারা একসাথে দু’টি গ্রহণ করেন তারা আসলে একই ধরনের ওষুধ অতিরিক্ত গ্রহণ করে ফেলেন। এর ফলে ঘুম বা নিদ্রাভাব বেড়ে যেতে পারে। যারা ভারি মেশিন বা যানবাহন চালান তাদের ওপর এই ওষুধের প্রভাব বিপজ্জনক হতে পারে। এমনকি এই দু’টি ওষুধ একসাথে গ্রহণ করলে সারারাত সম্পূর্ণ ঘুমের পরও পরদিন সকালে তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব রয়ে যায়।


বিজ্ঞাপন