রেহাই নেই ধর্ষকদের, হুঁশিয়ারি পুলিশের

অপরাধ আইন ও আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ পুলিশের উদ্যোগে ঢাকাসহ সারাদেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে সমাবেশ হয়েছে। শনিবার একযোগে ৬ হাজার ৯১২টি বিট পুলিশিং এলাকায় এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পুলিশ কর্মকর্তারা ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।


বিজ্ঞাপন

দেশে পুলিশের মোট ৬৪৭টি থানা আছে। এই থানাগুলোতে পুলিশের মোট বিট ছয় হাজার ৯১২টি৷ পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, সবগুলো বিটেই শনিবার ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনবিরোধী সমাবেশ হয়েছে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে অনুষ্ঠিত সমাবেশগুলোতে নারী-পুরুষ জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, মসজিদের ইমামসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।

একইসঙ্গে সমাবেশ থেকে নির্যাতন বিরোধী পোস্টার, লিফলেট, প্ল্যাকার্ড প্রদর্শনের মাধ্যমে জনসাধারণকে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানানো হয়।

প্রতিটি সমাবেশ স্ব স্ব বি‌টের ফেসবুক পেইজে সরাস‌রি সম্প্রচার করা হয়।

রাজধানীর শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকার সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ধর্ষণ এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনায়। মানুষ ধর্ষণের বিরুদ্ধে সচেতন হচ্ছে। আমরা ধর্ষণের শিকার নারীদের পাশে আাছি। আমাদের কথা হলো কোনো নারী ধর্ষণের শিকার হবে না। আর কোনো মায়ের সন্তান যেন ধর্ষক না হয়।’

‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে’ উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর বলেন, ‘ধর্ষণ একটি জঘন্যতম অপরাধ। ধর্ষণের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সবাই সচেতন হয়ে ধর্ষকদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।’

‘ভুক্তভোগীদের নির্ভয়ে থানায় অভিযোগ করার আহ্বান’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সারাদেশে এই সমাবেশের আয়োজন করেছি একটি বার্তা দিতে, তা হল ধর্ষণ করে রেহাই পাওয়া যাবে না। ধর্ষককে শাস্তির আওতায় আসতেই হবে।’

এই সমাবেশে অংশ নেয়া রেহানা পারভীন নামে একজন বলেন, ‘ধর্ষণের শিকার যারা হন তারা ঠিকমত পুলিশের সহযোগিতা পান না। সহযোগিতা পেলে ধর্ষণ কমবে।’

রেহানা পারভীনের মতে, ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করায় ধর্ষকরা এখন ভয় পাবে। ফলে ধর্ষণ কমে আসবে। তবে মানুষের মানসিকতায়ও পরির্বতন আনতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

এসময় সমাজের পুরুষদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা তো আপনাদেরই মা-বোন-স্বজন। আপনারা যদি আমাদের পাশে থাকেন তাহলে ধর্ষকরা আর অপরাধ করতে সাহস পাবে না।’

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের থানা এলাকাতেও পুলিশের উদ্যোগে ধর্ষণবিরোধী সমাবেশ হয়েছে। ফরিদপুরের চরভদ্রাসনের চারটি ইউনিয়নে চারটি সমাবেশ হয়েছে। এই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজনীন খানম।

তিনি বলেন, ‘সমাবেশে আমরা সবাইকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি যে তাদের ভয় নেই। আমরা পাশে আছি। ধর্ষককে আমরা ছাড়বো না।’

তবে তিনি মনে করেন, সারাদেশে ধর্ষণ বাড়েনি। শুধুমাত্র কিছু এলাকায় বেড়েছে।

একইসঙ্গে তিনি দাবি করেন, ধর্ষণের শিকার নারীদের থানা থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা করা হয়। তাদের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া হয়। তিনি বলেন, ‘ধর্ষণ মামলায় বিচার হয় না কেন তা যারা বিচার করেন তারাই বলতে পারবেন। আমরা বলতে পারব না।’

এদিকে পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে এই ধরনের কর্মসূচি এখন থেকে অব্যাহত থাকবে।