নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনা দেখিয়ে দিল টাকা-পয়সা কোনো কিছুরই মূল্য নেই। দুর্নীতি-অনিয়ম করে আয় করা টাকা মহামারির এ সময়ে জীবন বাঁচাতে কাজে আসেনি। মনে হয় করোনাভাইরাস এসেছে মানুষকে শিক্ষা দিতে।
বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির সম্পাদকম-লীর বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রাপ্তির জন্য রাজনীতি নয়, দলীয় নেতাকর্মীদেরকে জনগণের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, একটা সময় দেখা যেত একটু থেকে আরেকটু হলেই চিকিৎসার জন্য বিদেশ চলে যেতো। কিন্তু করোনা বুঝিয়ে দিয়ে গেল টাকা-পয়সার কোনো মূল্য নেই। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ যেখানে করোনা সামলাতে হিমশিম খেয়েছে, সেখানে আমরা আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম একদিনের জন্যও থামতে দেইনি। অনেক উন্নত দেশের প্রবৃদ্ধি যেখানে মাইনাস গ্রেডে, সেখানে আমরা প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য হয়তো ধরে রাখতে পারিনি। কিন্তু পাঁচের ওপরে আমাদের প্রবৃদ্ধি থাকবে বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেশি করে খাদ্য উৎপাদনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। করোনায় অর্থনীতির গতি ধরে রাখতে সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, করোনাভাইরাস এসে সারা দুনিয়া স্থবির করে দিয়েছে। আমাদের দল, আমাদের সরকার কিন্তু থেমে থাকেনি। জনগণের জন্য কাজ করে চলছি। অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে প্রণোদনা দিয়েছি। আমার করোনা মহামারিতে মৃত্যুর হার কম রাখতে সক্ষম হয়েছি। কারণ ঘাবড়ে না গিয়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি। করোনা সংক্রমণ শুরুর পরই দুই হাজার ডাক্তার নিয়োগ করেছি, নার্স নিয়োগ দিয়েছি।
করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা সামলাতে সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার আবার একটা ধাক্কা আসছে। সচেতন হলে কিন্তু সুস্থ থাকা যায়। মাস্ক পরতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, এখন এর বিকল্প নেই। ভ্যাকসিন আসছে, তা নিয়ে নানা গবেষণা চলছে। আমরা আগাম টাকা দিয়ে রাখছি। যখনই বাজারে আসবে আমরাও পাবো। এখন মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই।
সরকারের নানামুখী সমালোচনার জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, আমার জানতে ইচ্ছে হয়, যারা বলেন দেশে গণতন্ত্র নেই, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, জিয়া যখন হত্যা-ক্যু করে ক্ষমতা দখল করেছিল, ’৯৬ সালে দ্বিতীয় বার যখন খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এলো, ২০০১ এ বিএনপি-জামায়াত জোট মেয়েদের ওপর যখন অমানবিক নির্যাতন করলো তখন কী গণতন্ত্র ছিল?
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, এখন তারা কী করে? ভোটে প্রার্থী দেয়, পরে ভোটের মাঝামাঝি সরে দাঁড়ায়। এটা তাদের প্ল্যান বি। তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। তারা নির্বাচনের দিনে বাসে আগুন দিয়ে আবার সংসদে দাঁড়িয়ে সরকারের সমালোচনা করে। বিএনপির মিথ্যাচার থেকে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হতো মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করেনি। তার নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করেছে। হত্যা-খুন-ক্যু এসব করে মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করেছে। আর আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করেছে।
আওয়ামী লীগ আগামীর চিন্তা করে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ এমন একটি সংগঠন যাদের একটি লক্ষ্য আছে, দেশ নিয়ে পরিকল্পনা আছে। আমাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য জনগণের কল্যাণে এবং দেশের উন্নয়নে রাজনীতি করা। কিছু পাওয়া নয়, মানুষের জন্য কিছু করতে পারাই আমাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য।
সম্পাদকম-লীর সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এসএম কামাল, মির্জা আজম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ সম্পাদকম-লীর অন্যান্য সদস্য উপস্থিত ছিলেন।