সুমন হোসেন, অভয়নগর : অভয়নগরে রোপা আমন ধান চাষ করে ভালো ফলন উৎপাদন হয়েছে। সাধারন কৃষকদের ধান চাষ করতে আগ্রহ বেড়েছে বলে জানা গেছে। প্রতি বছরের ন্যায় এই বছরও রোপা আমন ধান চাষ করে আবহাওয়া ও জলবায়ু অনুকুলে থাকায় ভালো ফলন হয়েছে। ধানের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে বেশি দামে ধান বিক্রি করতে পারায় কৃষকেরা ধান চাষে আগ্রহ বেড়েছে। কৃষকরা কৃতজ্ঞতার সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কে ধন্যবাদ জানিয়েছে। এভাবে ধানের দাম ভালো পাওয়া গেলে এবং আবহাওয়া ও জলবায়ু অনূকুলে থাকলে অধিকাংশ কৃষক ধান চাষ করবে বলে জানা যায়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে যানা যায়, ২০২০/২১ অর্থবছরে ৩ প্রকার রোপা আমন ধান চাষ করা হয়েছে। রোপা আমন ধানের চাষে হাইব্রীড, উফশী ও স্থানীয় ধানের জাত নির্বাচন করা হয়। আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো হাইব্রীড জাত- ৯৮৫হেক্টর জমি, উফশী জাত- ৬হাজার ৪শ’ ৫৫হেক্টর জমি, স্থানীয় জাত- ২শ’ ৫হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। মোট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৭হাজার ৬শ’ ৪৫ হেক্টর জমি। আবাদ অর্জিত হয়েছে হাইব্রীড জাত- ৮১০ হেক্টরে, উফশী জাত- ৬হাজার ৬শ’ ৭০ হেক্টরে ও স্থানীয় জাত- ৭০ হেক্টরে। মোট আবাদ অর্জিত হয়েছে ৭হাজার ৫শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার থেকে ৯৫ হেক্টর কম জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করা হয়। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো হাইব্রীড জাত- ৫হাজার ৭৬৮ মেট্রিক টন, উফশী জাত- ২৭হাজার ১১৩ মেট্রিক টন ও স্থানীয় জাত- ৫শ’ ৩ মেট্রিক টন ধান। উৎপাদনের মোট লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩৩হাজার ৩শ’ ৮১ মেট্রিক টন ধান। মোট উৎপাদন অর্জিত হয়েছে ৩৩হাজার ৬শ’ ৭৮ মেট্রিক টন ধান। বেশি উৎপাদন অর্জিত হয়েছে ২শ’ ৯৭ মেট্রিক টন ধান। বিগত ২০১৯ সালের রোপা আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৭হাজার ৬শ’ ৪৫ হেক্টর জমি। উৎপাদন অর্জিত হয়েছিলো ৩৩হাজার ৩শ’ ৮১ মেট্রিক টন ধান। কিন্তু প্রতি বছরের তুলনায় এ বছর আবহাওয়া ও জলবায়ু অনূকুলে থাকায় ফসলের ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে ধানের দাম বেশি থাকায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
বাজারে ধান বিক্রি করতে আসা রাজঘাট এলাকার কৃষক উজ্জ্বল মন্ডল বলেন, আমি ৮০শতক জমিতে আমন ধান চাষ করে বেশ ভালো ফলন পেয়েছি। ৮০শতকে ২৬ মণ ধান উৎপাদন হয়েছে। আবহাওয়া ও জলবায়ু অনূকুলে থাকার কারনে ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে ১২ মণ গুটি স্বর্ণা ধান বিক্রি করেছি। প্রতি মণ ১হাজার ১শ’ টাকা দরে বিক্রি করতে পেরে ভালো লাগছে। প্রতি ১কাঠা জমিতে ১মণ হারে ধান উৎপাদন হয়েছে। প্রতি বছরের তুলনায় এই বছর ধানের দাম ভালো থাকার জন্যে অনেক কৃষক বিভিন্ন শাক-সবজী চাষ থেকে এসে ধান চাষ শুরু করেছে। ধানের বাজার দাম এভাবে ভালো থাকলে এবং কৃষক যদি স্বল্প খরচে সার, কিটনাশক পেতে পারে তাহলে বাইরের বিভিন্ন দেশ থেকে আর চাউল আমদানী করা লাগবে না।
নওয়াপাড়া বাজারের মেসার্স অহিদ ট্রেডার্সের স্বত্তাধিকারী অহিদ ইমাম বলেন, নতুন আমনের বালাম ধান- ১০, ৩০, ৩৯, বিনা-৭, ৪৯, ৫৮ জাতের ধান প্রতি মণ ১হাজার ১শ’ টাকা থেকে ১হাজার ১শ’ ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পুরাতন বালাম ধান মণ প্রতি ১হাজার ১শ’ ৮০টাকা থেকে ১হাজার ২শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। মোটা জাতের ধান- গুটি স্বর্ণা ও বিগত মৌসুমের হীরা ধান মণ প্রতি ১হাজার ২০টাকা থেকে ১হাজার ৩০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে প্রতি বছরের তুলনায় এ বছর আমন ধান চাষে ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকরা ধান চাষ করতে ব্যপক সাড়া দিয়েছে। বাজারে ধান বিক্রি করতে আসা কৃষকরা বর্তমান সরকারের উপর খুব খুশি হয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কৃষিবিদ গোলাম ছামদানী জানান, আবহাওয়া ও জলবায়ু অনূকুলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৬.১৫ মেট্রিক টণ ধান উৎপাদন হয়েছে। সাধারন কৃষকরা বাজার মূল্যে ভালো থাকায় এবং গরুর খাবার হিসাবে বিচুলী ভালো দামে বিক্রি করতে পারায় লাভবান হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কে কৃতজ্ঞতার সাথে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদেরকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং সঠিক সময়ে ব্লক সুপার ভাইজারের মাধ্যেমে যে কোনো সমস্যার সমাধান পূর্বক সঠিকভাবে তদারকি করা হয় বলে দাবী করেন। বিগত বছর রোপা আমন ধান চাষের তুলনায় এই বছর আবাদের পরিমান কম থাকলেও ফলন ২শ’ ৯৭ মেট্রিক টণ ধান বেশি উৎপাদন হয়েছে। এজন্যে কৃষকরা অন্যান্য ফসল আবাদের চেয়ে ধান চাষে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে।