নিজস্ব প্রতিনিধি : বাড়ির নকশা এবং প্লান পাশ করাতে ভোগান্তিতে নাগরিকরা এ জন্য সেবার মান বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন আইএসও হোল্ডিংস লিমিটেডের চেয়ারম্যান, কামাল মাহমুদ।
বাড়ির নকশা এবং প্লান পাশ করানোর জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এ গিয়ে নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়ছেন রাজধানীবাসী। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় থাকা এলাকায় বাড়ি নির্মাণে নকশা অনুমোদনের ভোগান্তি কমাতে ১৬ স্তরের পরিবর্তে মাত্র চার স্তরে নামানো হলেও ভোগান্তি পিছু ছাড়ছে না নগরবাসীর। ঢাকা শহরের বাড়ী নির্মানের জন্য দিনের পর দিন ঘুরতে হচ্ছে বাড়ি নির্মাতাদের। ভোগান্তি কমাতে ডিজিটালাইড করা হলেও সেখানেও সুফল মিলছে না বলে অভিযোগ অনেকের।
সাধারণত নকশা অনুমোদনের একটি ফাইল অনলাইনে জমা হওয়ার পরে যায় অথরাইজড অফিসারের আইডিতে। সেখান থেকে ডাউনলোড করে সহকারী অথরাইজড অফিসারের হয়ে আবার চীফ ইন্সপেক্টর এর কাছে যায়। তারপর ইন্সপেক্টর (ইমারত) এর নিকটে প্রেরিত হয়।
২য় পর্যায়ে নিচ থেকে উপরের দিকে নিচের ক্রম অনুযায়ী ফাইলটি প্রেরিত হয়-
মতামত সহ ইমারত পরিদর্শক–চীফ ইন্সপেক্টর–সহকারী অথরাইজড অফিসার–অথরাইজড অফিসারের নিকটে রির্পোট প্রেরণ করা হয়। তারপর নকশা অনুমোদনের মিটিং আয়োজন করা হয়।
যদি ইমারত পরিদর্শকের রির্পোট পজিটিভ অর্থাৎ ছাড়পত্রের শর্ত মোতাবেক পরিপূর্ণ করা হয় তাহলে ফাইলটি নকশা অনুমোদনের জন্য বিসি কমিটিরি মিটিং এ যায়। বিসি কমিটিতে নকশাটি যদি অনুমোদিত হয় তাহলে বিসি কমিটির সদস্য সচিব অর্থাৎ অথরাইজড অফিসার অনলাইনে অনুমোদন পত্র এবং অনুমোদিত নকশা অনলাইনে আপলোড করেন। তখন যার যার ফাইল বা ফ্ল্যাটের মালিকগণ নিজ ইমেইলে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।
কিন্তু ফাইলটি জমা হওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট সকল সদস্য বা অথরাইজড অফিসার/ সহকারী অথরাইজড অফিসার/ প্রধান ইমারত পরিদর্শক/ ইমারত পরিদর্শক যতক্ষণ পর্যন্ত একে অন্যোর নিকট ফাইলটি প্রেরণ না করেন ততক্ষণ পর্যন্ত ফাইলটি অনুমোদনের জন্য মিটিং এ উঠানো সম্ভব হয় না। যদি কোন নকশা অনুমোদনের ফাইল কোন ত্রুটির কারণে নেগেটিভ হয় সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ঠ অথরাইজড অফিসার রিসাবমিট না দেওয়া পর্যন্ত ফাইলের কাযক্রম বন্ধ থাকে।
পুনরায় সকল বিসি কমিটির সদস্য/ অথরাইজড অফিসার/ সহ অথরাইজড অফিসার/ প্রধান ইমারত পরিদর্শক/ ইমারত পরিদর্শক এর মতামতের জন্য একই পক্রিয়ায় রিসাবমিট হয়।
ইহাতে সাবমিট/রিসাবমিট এর অনলাইন পক্রিয়া শেষ করে আসতে প্রায় ৬০/৯০ দিন সময় লেগে যায়। যদি কোন কারনে রিসাবমিট হয় তাহলে আবারও ৫০/৬০ দিন সময় লেগে যেতে পারে।
রাজউকের সকল নিয়ম কানুন মেনে ও ছাড়পত্র অনুযায়ী যদি কোন প্ল্যান বিসি কমিটিতে পাশ হয়ে যায় তারপরে প্লান পাশের অনলাইন অনুমোদন পত্র ও নকশার হার্ডকপি পেতে ৪০/৫০ দিন লেগে যায়।
সবমিলে একটা লম্বা প্রক্রিয়া। যখন কোন ল্যান্ড ওনার/ কোন ডেভেলপার কোম্পানী জানতে চায় তখন বলা হয় অনলাইন সার্ভার ও জনবল স্বল্পতার কারণে যথাসময়ে দেওয়া সম্ভবপর নয়। আবার জানায় একাধিক জোনের দায়িত্বে একজন অথরাইজড অফিসার দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার কাজের বিলম্ব ঘটে।
উল্লেখ্য যে অনলাইন এর মাধ্যমে বিসি কমিটির একজন সদস্যও যদি ভোটদানে বিরত থাকেন তাহলেও সেই ফাইল নিয়ে কয়েক মাসের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। আরো উল্লেখ্য যে বর্তমানে কোন প্ল্যানই চার/পাঁচ মাসের পূর্বে অনুমোদন পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
কয়েকজন ভোগান্তির অভিজ্ঞতা থেকে জানান- পূর্বের নন ডিজিলাইজড অবস্থায় কাজের গতি বরং এখনকার চেয়ে ভালো ছিল। সেখানে দেশের সবর্ত্র অনলাইন সার্ভিসের দিকে ধাবিত হচ্ছে তখন রাজউকের অনলাইন সার্ভিস ও সার্ভার নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা অজুহাত তৈরি করা হচ্ছে। আবাসন ব্যসায়ী ও ব্যক্তি মালিকানায় নকশা অনুমোদনের জন্য জটিলতায় সময় বেশি লেগে যাচ্ছে মূলত নানা অজুহাতে।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, হয়রানি কমাতে যে ডিজিটালাইজেশন পদ্ধতি চালু করেছে সরকার, সেটিকে পুরোদমে কার্যকর না হওয়ায় সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী। নগরবাসী এসব ভোগান্তি থেকে দ্রুত নিস্তার চায় ।
রাজধানী ঢাকার পরিকল্পিত উন্নয়নে গুরুত্বপূণ অবদান রয়েছে রাজউকের। নগর সেবায় তাদের একক ভূমিকা রয়েছে। উন্নতমানের নগর সেবায় তাদের আরো সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। যারা বাড়ি করতে চায় তাদের প্লান পাশ যেন আরো সহজে হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। একই সাথে নগরবাসীকেও যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে সরকারের বিল্ডিং কোড মেনে ভবন তৈরি করতে হবে।