নিজস্ব প্রতিনিধি : আংটির ভেতর দিয়ে গলে গেল আস্ত একটি শাড়ি! ঢাকাই মসলিন ফিরিয়ে আনলেন বাংলাদেশের গবেষক-এক্সপার্টরা, এর চেয়ে আনন্দের দৃশ্য আর কী হতে পারে!
পুরো গল্পটিই রুদ্ধশ্বাস দুর্দান্ত। ঢাকাই মসলিনের তুলাগাছ ঠিক কোনটা, কোথায় সেই গাছের বীজ পাওয়া যাবে, কীভাবে তুলা থেকে সুতা হবে, সেই সুতা কীভাবে বুনতে হবে, সেই স্কিল কাদের আছে, কোনরকম তথ্যই শুরুতে ছিল না! এক্সপার্টরা ঘাঁটাঘাঁটি করে একটি স্কেচ তৈরি করলেন তুলাগাছ দেখতে কীরকম, সেই স্কেচ প্রচার করা হল, যদি বন্য অবস্থায় হলেও তুলাগাছটি খুঁজে পাওয়া যায়! কাপাসিয়ায় এক ভদ্রলোক জানালেন এরকম গাছ আছে ওখানে, গবেষকরা নমুনা আনলেন। কিন্তু এটাই যে ঠিক গাছ শিওর হবেন কীভাবে? অরিজিনাল ঢাকাই মসলিনের স্যাম্পল তো হাতের কাছে নেই। বহু যন্ত্রণার পর লন্ডনের মিউজিয়াম থেকে নমুনা আনা হল, ডিএনএ তুলনা করে শিওর হওয়া গেল যে গাছ ঠিকঠাক, সেই গাছ চাষও করা হল রাজশাহীতে। ভালো কথা, কিন্তু তুলা থেকে সুতা হবে কী করে? কুমিল্লায় কারিগর পাওয়া গেল যারা ১০ ‘কাউন্টের’ মোটা সুতা তৈরি করেন, অথচ দরকার ৫০০ কাউন্ট! সেই সুতা তৈরিতে তিন আঙুলের কারিশমা প্রয়োজন, আর সেই আঙুল হতে হবে একেবারে নমনীয়। কারিগরদের আঙুলে সারারাত লোশন মেখে সকালে সুতা কাটার কাজ করা হল, ধীরে ধীরে একটি দল দাঁড়িয়ে গেল যারা ৩০০ কাউন্টের সুতা তৈরি করতে পারছেন। একেবারে হয়তো মিললো না, কিন্তু কিছু তো এগুলো। এবার শাড়ি বুনবেন কীভাবে? এক্সপার্ট তাঁতি খুঁজে বের করা হল, আর্দ্রতা ঠিক রাখার জন্য মাটির গর্তে তাঁত বসানো হল, সুতা বারবার ছিঁড়ে যাওয়া রোধ করার জন্য বালতিতে পানি রেখেও কাজ করা হল। তৈরি হল মসলিনের শাড়ি!
চারদিকে লুটপাট ছাড়া আর কোন খবর শুনি না, এদিকে এই প্রজেক্ট ১৪ কোটি টাকা বাজেট নিয়ে শুরু করে মাত্র সোয়া চার কোটিতে পুরোটা এগিয়ে নিতে পেরেছে, বাকি টাকার সিংহভাগ সরকারকে ফেরতও দিয়েছে। পুরো টিমের সবার জন্য আন্তরিক অভিনন্দন, ভালোবাসা!