স্পোর্টস ডেস্ক : নিষেধাজ্ঞা শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছে সাকিব আল হাসান। আর ফিরেই ব্যাট বলে অসাধারণ পারফরম্যান্সে টাইগারদের সিরিজ জয়ে রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৭ উইকেটে জিতে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করলো টিম টাইগার্স। সিরিজের শেষ ওয়ানডে ম্যাচটি আগামী সোমবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে।
শুক্রবার টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে মোস্তাফিজুর রহমানের গতির পর মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে ১৪৮ রানে অলআউট হয় উইন্ডিজ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪১ রান করেন রোভম্যান পাওয়েল। মূলত তার ব্যাটেই দেড়শ’র কাছাকাছি স্কোর গড়তে সক্ষম হয় ক্যারিবীয়রা। বাংলাদেশ দলের হয়ে মিরাজ চার, মোস্তাফিজ-সাকিব দুটি করে উইকেট নেন।
১৪৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই সাবধানী তামিম-লিটন। দলীয় ৩০ রানে লিটন বিদায় নিলে বাংলাদেশ হারায় প্রথম উইকেট। আকেল হোসেনের বলে এলবির শিকার হন লিটন। রিভিও নিয়েও বাঁচতে পারেনি। ২৪ বলে ৪ বাউন্ডারিতে লিটনের সংগ্রহ ২২ রান।
টিম ম্যানেজমেন্টের নতুন পরিকল্পনায় তিনে ব্যাটিংয়ে নামেন নাজমুল হোসেন শান্ত। প্রথম ওয়ানডেতে রান না পাওয়া শান্তর ব্যাট আজও হাসেনি। ১৭ রানে তাকে সাজঘরের পথ দেখিয়েছেন জেসন মোহাম্মদ। ডানহাতি স্পিনারের শর্ট বল পুল করতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দেন শান্ত। ২৬ বলে ২ বাউন্ডারি হাঁকান তিনি।
৬৫.৭৯ স্ট্রাইক রেটে ৩ বাউন্ডারি ও ১ ওভার বাউন্ডারিতে ৭৬ বল খেলেছেন ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ৭৫ বলেই তুলে নিয়েছেন অর্ধশতক। অর্ধশতকের পরের বলেই রেইফ্রির বলে জশুয়ার তালুবন্দী হন তামিম।
দলীয় ১০৯ রানে লিটন-শান্ত-তামিমের বিদায়ের পর দলের হাল ধরেন সাকিব-মুশফিক। চতুর্থ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৪০ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন তারা। দলের ৭ উইকেটের জয়ে ৪৩ ও ৯ রান করে অপরাজিত থাকেন সাকিব-মুশফিক।
ক্যারিবীয়দের হয়ে ১টি করে উইকেট শিকার করেছেন আকেল হোসেন, জেসন মোহাম্মদ ও রেমন রেইফ্রি।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফিল্ডিংয়ে এসেই দুই পাশ থেকে বল শুরু করলেন রুবেল ও মোস্তাফিজ। শুরু থেকেই আটসাঁট বোলিংয়ে ক্যারিবীয় দুই ওপেনারকে চাপে রেখেছে টাইগার এই বোলিং জুটি। ৪.৫ ওভারে দলীয় ১০ রানে উইন্ডিজ শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন মোস্তাফিজ। ক্যারিবীয় ওপেনার এমব্রিসকে মিরাজের তালুবন্দী করে সাজঘরে পাঠান মোস্তাফিজ।
প্রথম উইকেট পতনের পর উইকেটে থিতু হতে চেয়েছিলেন কিরন ওটলে ও অ্যান্ড্রে ম্যাকার্থি। তবে এই জুটিকে বেশি বড় হতে দেননি মিরাজ। দলীয় ৩৬ রানে তামিমের ক্যাচ বানিয়ে কিরন ওটলে’কে(২৪) সাজঘরে পাঠান মিরাজ। দলের স্কোরে ১ রান যোগ হতেই উইন্ডিজ শিবিরে মিরাজের ফের আঘাত। এবার বোল্ড করে জশুয়া ডি সিলভাকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান মিরাজ। পরের ওভারে আরেকটি উইকেট তুলে নেন সাকিব আল হাসান। তাকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বল মিস করে বোল্ড হন আন্দ্রে ম্যাকার্থি (৩)।
দুই ওভার পর পঞ্চম উইকেট হারায় ক্যারিবীয়রা, মেহেদি মিরাজের আরেক ওভারে। ১৮তম ওভারের প্রথম তিন বলে রান নিতে না পারা ক্যারিবীয় অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদ মিরাজের চতুর্থ ডেলিভারিটি স্লোয়ার লেগে পাঠিয়েই দৌড় দিয়েছিলেন, কিন্তু রান আর সম্পন্ন হয়নি। কাইল মায়ের্স (০) স্ট্রাইকিং এন্ডে পৌঁছার আগেই নাজমুল হাসান শান্তর থ্রোতে উইকেট ভেঙে দেন মুশফিকুর রহীম।
সাকিব আল হাসানের কাছে অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদের উইকেট হারানোর পরের ওভারে হাসান মাহমুদ পান সফরকারীদের সপ্তম উইকেট। ২৫ বলে ২০ রান করে বোল্ড হন উইন্ডিজ ব্যাটসম্যান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্যাভিলিয়নে ফেরার মিছিলে এবার যোগ দিলেন রেমন রেইফার। ৩০তম ওভারের চতুর্থ বলে নিজের তৃতীয় উইকেট পেলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানের বিরুদ্ধে এলবিডাব্লিউর জোরালো আপিলে আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নেয় বাংলাদেশ এবং সিদ্ধান্ত যায় তাদের পক্ষে। ১২ বলে ২ রান করে অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠ ছাড়েন রেইফার।
বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে ১০০ রান করা নিয়ে সংশয়ে ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু রোভম্যান পাওয়েল ও আলজারি জোসেফ প্রতিরোধ গড়ে স্কোর একশ পার করেন। স্কোরবোর্ডে ১২০ রান তোলার পর তাদের বিচ্ছিন্ন করেন মোস্তাফিজুর রহমান। ৩২ রানের এই জুটি ভাঙে উইকেটকিপার লিটন দাশকে আলজারি ক্যাচ দিলে। ২১ বলে তিন চারে ১৭ রান করেন তিনি। শেষদিকে আকিলা-পাওয়ালের ৪০ বলে ২৮ রানের জুটিতে রান বাড়লেও ১৪৮ রানেই গুটিয়ে যায় ক্যারিবীয়দের ইনিংস।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ের সুবাদে ম্যাচসেরার পুরষ্কার উঠেছে মিরাজের হাতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মিরাজের শিকার ২৫ রানে ৪ উইকেট। তার ৪৩ ম্যাচের ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং।