ওয়াসার পিপিআই প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতকারি মিজানের পেনশোনত্তর বেনিফিট বন্ধের দাবি

অপরাধ অর্থনীতি জাতীয় জীবন-যাপন রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিলুপ্ত ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লি. পরিচালিত ঢাকা ওয়াসার সাতটি রাজস্ব জোনের (রাজস্ব জোন-৩,৪,৫,৬,৮,৯ ও ১০) সমন্বয়ে গঠিত পিপিআই প্রকল্পে দুর্নীতির মাধ্যমে কো-চেয়ারম্যান ও সদ্য অবসরপ্রাপ্ত রাজস্ব পরিদর্শক মিঞা মিজানুর রহমান দীর্ঘ ২২বছর পিপিআই প্রকল্পে লুটপাট করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। পিপিআই বিলুপ্তের পর সংরক্ষিত ও উদ্বৃত্ত অর্থ তারা যোগসাজস করে আত্মসাৎ করছেন।
ঢাকা ওয়াসার পিপিআই প্রকল্পে ২২বছরের লুটপাট, ওয়াসার এমডি কর্তৃক তলবকৃত ৪৪৫কোটি টাকার হিসাব প্রদান না করা পর্যন্ত মিজানের পেনশনোত্তর সকল বেনিফিট বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন সমবায় সমিতির সাধারণ সদস্যগণ।


বিজ্ঞাপন

জানাগেছে, ঢাকা ওয়াসার পিপিআই প্রকল্পের কো-চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, সমবায় সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. সামসুজ্জামান, সেক্রেটারী মো. জাকির হোসেন, সদস্য (অর্থ) ও সাবেক কো-চেয়ারম্যান হাসিবুল হাসান ও ক্যাশিয়ার হাবিব উল্লার পিপিআই প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্যে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদকে ২৯ জানুয়ারী-১৯ তারিখে ঢাকা ওয়াসার এক সিবিএ নেতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১ এপ্রিল এ আদেশ দিয়েছেন বলে জানাগেছে। অন্যদিকে ৩০এপ্রিল ওয়াসার এমডি স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে পিপিআই কর্তৃপক্ষের কাছে ২২ বছরের আয়-ব্যয়,পরিসম্পদ ও দায়ের তথ্য প্রেরনের জন্যে আদেশ দেয়া হয়েছে। পত্রে বলা হয়েছে ২০১০-১১ অর্থ বছর থেকে ১৮-১৯অর্থ বছর পর্যন্ত ৪৪৫কোটি টাকা টাকা ওয়াসা থেকে পিপিআই প্রকল্পের জনতা ব্যাংকের কারওয়ান বাজার কর্পোরেট শাখার চলতি হিসাব নং-২০০০২৬৩৪৬ এ দেয়া হয়েছে। এই হিসাব থেকে নিয়মিত লাইফলাইন শ্রমজীবী সমবায় সমিতি লি: এর এক্সিম ব্যাংকের চলতি হিসাব নং-০৮৮১১১০০০১৬৮৪১ একাউন্টে এবং বনলতা কর্মদক্ষতা উন্নয়ন শ্রমজীবী সমিতির এনবিএল একাউন্টে টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে বলে পত্রে দাবি করা হয়েছে। স্থানান্তরিত টাকা পিপিআই প্রকল্পের কো-চেয়ারম্যান মিজান ও অন্যান্য কর্মকর্তাগণ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। উক্ত ৫জনসহ পিপিআই’র পরিচালনা ও উপদেষ্টা পরিষদের সকল সদস্য এবং সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা পরিষদের সব সদস ও ৭ জোনের প্রকল্প ব্যবস্থাপকদেরও দুর্নীতির তদন্ত করার দাবি জানিয়েছেন সাধারন সদস্যগণ। ওয়াসা’র এমডি হিসাব চাইলেও পিপিআই কর্তৃপক্ষ এখনো হিসাব দাখিল করেননি। ৯৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আয়-ব্যয়ের হিসাব না দেয়া পর্যন্ত পিপিআই’র লুটের অন্যতম হোতা মিজানের পেনশন বন্ধ রাখার জন্যে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের প্রতি তিনি আহবান জানান।

এদিকে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং পিপিআই প্রকল্পের কো-চেয়ারম্যান ও ওয়াসার রাজস্ব জোন-১ এর সদ্য অবসরপ্রাপ্ত রাজস্ব পরিদর্শক মিঞা মিজানুর রহমান পিপিআই লুটপাট করে বিলাশী জীবন যাপন করছেন। নিজে ও পরিবারের সদস্যরা দামি প্রাইভেট কার ব্যবহার করছেন। নিজস্ব অভিজাত ফ্লাটে বাস করছেন। ছেলে-মেয়েরা ব্যয় বহুল প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে লেখা পড়া করছেন। নিয়মিত চিকিৎসা করান সিঙ্গাপুরে। রাজস্ব পরিদর্শক হিসেবে সাইটে কখনো ডিউটি করেন নি। ব্যক্তিগত সহকারী নিয়োগ করে ডিউটি করিয়েছেন। মাসে একবার অফিসে গিয়ে পুরো মাসের স্বাক্ষর করেছেন। সিবিএ নেতা ও শ্রমিক লীগের ছত্র ছায়ায় থাকায় তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে পারতেন না জোনের রাজস্ব কর্মকর্তা। তার সর্বসাকুল্যে বেতন ছিল ৩৫হাজার টাকা অথচ তার ড্রাইভারের বেতন ২৫হাজার টাকা ও সহকারির বেতন ২০হাজার টাকা। তার ড্রাইভারের বেতন অবৈধভাবে পিপিআই থেকে দেয়া হত।

আয়-ব্যয়ের হিসাব, প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা, নিয়োগ-বদলী মুলত: তিনি করতেন। তার বেতনের সঙ্গে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তিনি এই পিপিআই জোনে তার অনেক আত্মীয়-স্বজনকে চাকুরী দিয়েছিলেন। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকুরী পাওয়ার কথা থাকলেও সে নিয়ম কানুনের কোন তোয়াক্কা করা হয় নি।
তিনি যে পদে থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন সেই পদে থেকে পিপিআই’র কোন গাড়ী ব্যবহার করতে পারেন না। অথচ তিনি পিপিআই’র গাড়ী ব্যবহার করেছেন।
নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে কোটি কোটি টাকা জমা রেখেছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে। তার পরিবারের সদস্য ও আত্বীয়জনদের সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব তদন্ত করলেই সত্যতা মিলবে বলে সমবায় সমিতির সাধারণ সদস্যগণ মনে করেন।