সাংবাদিকের বেশ ধরে হুজিবি’র জঙ্গি তৎপরতা

অপরাধ

নিজস্ব প্রতিবেদক: নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজিবি) অপারেশন শাখার প্রধানসহ তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মাইনুল ইসলাম ওরফে মাহিন ওরফে মিঠু ওরফে হাসান (৪২), শেখ সোহান স্বাদ ওরফে বারা আব্দুল্লাহ (২৫) ও মুরাদ হোসেন কবির (৪৩)।
গ্রেফতারকৃত নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামির (হুজি) প্রধান সমন্বয়কসহ ৩ জনের ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শুক্রবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ার মো. নোমান এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার তদন্ত সংস্থা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট গ্রেফতারকৃতদের আদালতে হাজির করে যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা মামলায় প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন। আদালতে শুনানি শেষে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সিটিটিসি জানায়, গ্রেফতারকৃত মাইনুল ইসলাম সাংবাদিকের বেশ ধরে নির্বিঘেœ জঙ্গি তৎপরতা চালিয়েছে। তারা দেশের ৬৪ জেলায় সংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা করেছিল। কারাগার থেকে মাইনুলকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডাক্তার জাফর এবং ২০০০ সালের কোটালিপাড়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টা মামলার যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত আসামি মেহেদী হাসান ওরফে আব্দুল ওয়াদুদ ওরফে গাজী খানের নির্দেশে সংগঠনকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছিল।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে এই তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেটকার, ৫টি মোবাইল ফোন, একটি মাইক্রোফোন, একটি চাপাতি, দু’টি ছোরা, ১০টি ডেটোনেটর, ১৭০টি বিয়ারিং লোহার বল, একটি স্কচটেপ, ৫ লিটার এসিড, তিনটি আইডি কার্ড, একটি জিহাদি উগ্রবাদী বার্তা সম্বলিত পুস্তক উদ্ধার করা হয়েছে।
সিটিটিসির উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, হুজিবি’র অপারেশন শাখার প্রধান মাইনুলের নেতৃত্বে তারা সংগঠনকে পুনরায় সংগঠিত করার চেষ্টা করছিল। এজন্য সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ শুরা কমিটি প্রস্তুত করা, সংগঠনের অর্থদাতা এবং সদস্যদের কাছ থেকে অর্থের জোগান নিশ্চিতের পাশাপাশি ব্যাপকহারে সংগঠনের রিক্রুটমেন্ট করছিল। একইসঙ্গে নাশকতার জন্য অস্ত্র সংগ্রহ, বোমা তৈরির সরঞ্জাম সংগ্রহ, কারাগারে আটক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের জামিনের ব্যবস্থা করা, বান্দরবান-নাইক্ষ্যংছড়ি পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় জমি লিজ নিয়ে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করার কাজে নিয়োজিত ছিল। আর গ্রেফতারকৃত মইনুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে হুজি’র প্রধান অপারেশন সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। তার পরিকল্পনা ছিলো রাজধানী ঢাকা শহরে বড় ধরনের নাশকতা করে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা। এর আগে সে ২০১৫ সালে হুজির শীর্ষ নেতা কারাবন্দি মুফতি মঈনউদ্দিন ওরফে আবু জান্দালকে ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিল।
এছাড়া, শেখ সোহান সুনামগঞ্জের বিবিয়ানা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে রাজধানী ঢাকার মিরপুর বাংলা কলেজে পড়ার পাশাপাশি একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। গত ২০১৬ সালে ঢাকায় একুশে বই মেলায় নাশকতার ঘটনায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাছাড়া ২০১৭ সালে সে আরেকটি বিস্ফোরক মামলায় এবং ২০১৯ সালে সন্ত্রাস বিরোধী আইনের একটি মামলা গ্রেফতার হয়েছিল। জামিনে বের হয়ে সে মাইনুলের নেতৃত্বে হুজি সংগঠনে সক্রিয়ভাবে কাজ করছিল। আর মুরাদ হোসেন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী’র সক্রিয় সদস্য। সে ব্যবসার আড়ালে হুজি সংগঠনের দাওয়াতি ও বায়তুল মালের দেখভালের দায়িত্ব পালন করতো। গ্রেফাতরকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।


বিজ্ঞাপন