নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপির এক নেতার বক্তব্যের সূত্র ধরে ওবায়দুল কাদের এ অভিযোগ করেন।
১৫ আগস্ট আর ২১ আগস্ট একই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা বলে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি নেতার বক্তব্য তাদের খুনের রাজনীতির স্বরূপ উন্মোচিত করেছে। এ বক্তব্য থেকে বোঝা যায় বিএনপি এখন আন্দোলন এবং নির্বাচনে ব্যর্থ হয়ে বাংলাদেশ জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। এ ষড়যন্ত্রের জাল দেশে-বিদেশে বিস্তৃত। বিএনপি নেতাদের বক্তব্য লন্ডনের ছক অনুযায়ী গোপন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার।’ শুক্রবার সংসদ ভবনের সরকারি বাসভবন থেকে নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে তিনি এসব অভিযোগ তোলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপির এক নেতা দেশে আরেকটি ১৫ আগস্ট ঘটানোর ইঙ্গিতপূর্ণ ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। তাতে দেশবাসী বিক্ষুব্ধ। ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছিলেন। আমরা ভেবেছিলাম এটা ব্যক্তিগত কোনও বক্তব্য। কিন্তু গত তিন দিনেও বিএনপির দলীয় কোনও বক্তব্য না আসায় আমরা কী ধরে নেব এটা তাদের দলীয় বক্তব্য? যদি দলীয় বক্তব্যই হয় তাহলে আবারও বিএনপি’র ফ্যাসিবাদী মানসিকতা, ষড়যন্ত্র ও খুনের রাজনীতির চরিত্র স্পষ্ট উঠেছে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। আমরা আবারও স্পষ্টভাবে জানতে চাই বিএনপি নেতার প্রকাশ্যে হুমকি, এটা তাদের দলীয় বক্তব্য কিনা এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতাদের অবস্থান জনগণ আশা করে।’
বিএনপির আন্দোলন ভাবনায় জনগণের কোনও ইস্যু নেই
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এক বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, ‘বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন সরকার নির্বাচিত নয়, জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে সরকারের পতন হবে। বিএনপি এসব হুমকি-ধামকি বছরের পর দিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি’র আন্দোলন ও সরকার পতনের ঘোষণার ইতোমধ্যে যুগ পূর্তি হয়ে গেছে। কিন্তু জনগণ কোনও আন্দোলনে দেখতে পায়নি রাজপথে। নির্বাচনে তাদের কোনও সাফল্য নেই। ক্ষমতায় থাকাকালে তারা সরকার পরিচালনায় একাধিক বিকল্প ক্ষমতাকেন্দ্র তৈরি করেছিল। এখনও তাদের আন্দোলনের ডাক আসে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ক্ষমতা কেন্দ্র থেকে। তাদের আন্দোলন ভাবনায় জনগণের কোনও ইস্যু নেই। আছে ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার উদগ্র বাসনা। বিএনপি ক্ষমতা ফিরে পেলে দেশকে আবারও সাম্প্রদায়িকতার নিকষ অন্ধকারে ডুবিয়ে দেবে। তাদের রাজনীতি বহু ধারায় বিভক্ত। আর এই বিভক্ত রাজনীতি জনগণের কল্যাণের চেয়ে হুমকি ডেকে আনবে।’
বিএনপি কীভাবে আইনে শাসনের কথা বলে
ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে বিএনপি’র বিরোধিতার জবাবে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী কাদের বলেন, ‘কোনও আইনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এর সুষ্ঠু ও যথাযথ প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনও ব্যত্যয় ঘটেছে কিনা। এই বিষয়টির দিকে সরকার কড়া নজর রাখছে। প্রযুক্তির এ বিশ্বে জনস্বার্থেই এ আইন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তাও প্রয়োজন। আইনের অপপ্রয়োগ যেন না হয় সে বিষয়ে উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপি আজ এ নিয়ে মানবাধিকারের কথা বলছে। সমালোচনা করছে। অথচ পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে খুনিদের বিচার চাওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছিল তারা। পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে রক্ত মূল্যে অর্জিত সংবিধানকে কলঙ্কিত করেছে। অপারেশন ক্লিনহার্টে যাদের হত্যা করা হয়েছিল তাদের পরিবার যাতে বিচার চাইতে না পারে সে পথও বন্ধ করে করতে খুনিদের দায়মুক্তি দিয়েছিল সংসদে আইন পাসের মধ্য দিয়ে। অথচ আজ তারা আইনের শাসনের কথা বলে।’
বিএনপির প্রার্থীরা কি জালিয়াতির মাধ্যমে নির্বাচিত
বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের সমালোচনা করে তাদের আরও বলেন, ‘ফখরুল সাহেব কথায় কথায় বলেন সরকার নাকি অনির্বাচিত, জনগণ ভোট দেয়নি। আমি, আমরা প্রশ্ন রাখতে চাই আপনি নিজেও তো সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে আবার কোনও অদৃশ্য ইশারায় শপথ গ্রহণ করলেন না। অন্যদিকে আপনার দলের সাংসদরা সংসদে আছেন। তাদের কি আপনি এবং আপনার দলের প্রতিনিধিরা জালিয়াতির মাধ্যমে নির্বাচিত করেছিলেন? জনগণের ভোটে নির্বাচিত হননি? আপনাদের যেসব প্রার্থী পৌরসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল তারা কি ভোট ডাকাতি করে জয়ী হয়েছে? সত্য আড়াল করতে উট পাখির মতো মুখ লুকানো কি ঠিক হবে? বিএনপির বৈপরিত্যে ভরা স্বার্থান্বেষী রাজনীতির ষোল আনাই এখন জনগণের কাছে পরিষ্কার।’