রোগী বাড়ায় সংকটে আইসিইউ
ভারত থেকে আরো ২০-৩০ লাখ টিকা আসছে
এমএ স্বপন : মহামারি করোনা ভাইরাসে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৫৯ জন যা এ যাবতকালের ২য় সর্বোচ্চ মৃত্যু। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯ হাজার ১০৫ জনে। এছাড়া দেশের ইতিহাসে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৪৬৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ১৭ হাজার ৭৬৪ জনে।
করোনাভাইরাস নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংস্থার অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এদিন সুস্থ হয়েছেন আরও ২ হাজার ৫৩৯ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৪৪ হাজার ৯৩৮ জন।
এর আগে বুধবার (৩১ মার্চ) দেশে আরও ৫ হাজার ৩৫৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে মারা যান আরও ৫২ জন।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১২ হাজার ২৩৬ জন। এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন মোট ২৮ লাখ ২৭ হাজার ৪২৬ জন।
এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন আরও ছয় লাখ ৩৮ হাজার ২৫১ জন। এ নিয়ে করোনায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১২ কোটি ৯৪ লাখ ৫৪ হাজার ৪৪০ জন। এ ছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১০ কোটি ৪৪ লাখ ৭৯৪ জন।
করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ১১ লাখ ৬৬ হাজার ৩৪৪ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ২৫৬ জনের।
আক্রান্তে ও মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন এক কোটি ২৭ লাখ ৫৩ হাজার ২৫৮ জন এবং মারা গেছেন ৩ লাখ ২১ হাজার ৮৮৬ জন।
আক্রান্তে তৃতীয় এবং মৃত্যুতে চতুর্থ অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত করোনায় এক কোটি ২২ লাখ ২০ হাজার ৬৬৯ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ৬২ হাজার ৯৬০ জনের।
আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৬ লাখ ৪৪ হাজার ৪২৩ জন। ভাইরাসটিতে মারা গেছেন ৯৫ হাজার ৬৪০ জন।
আক্রান্তের দিক থেকে রাশিয়া রয়েছে পঞ্চম স্থানে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৪৫ লাখ ৪৫ হাজার ৯৫ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৯৮ হাজার ৮৫০ জন।
এদিকে আক্রান্তের তালিকায় যুক্তরাজ্য ষষ্ঠ, ইতালি সপ্তম, তুরস্ক অষ্টম, স্পেন নবম এবং জার্মানি দশম স্থানে আছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের অবস্থান ৩৪তম।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৮টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯।
রোগী বাড়ায় সংকটে আইসিইউ : সারাদেশে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। বিশেষ করে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড পরিমাণ করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণের এ উর্ধগতিতে সবচেয়ে বড় সংকটের নাম এখন আইসিইউ। এদিকে বাংলাদেশের ৩১টি জেলা করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সারাদেশে দ্বিতীয় দফায় ছড়িয়ে পড়ছে করোনা। যার ফলে আইসিইউ সংকটে পড়েছেন রোগী ও স্বজনেরা। ১০ মাস আগে প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এত দিনেও জেলা পর্যায়ে আইসিইউ ইউনিট তৈরি না হওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগের গাফিলতিকে দায়ী করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
অনেক ক্ষেত্রে করোনার জটিল রোগীদের আইসিইউর চেয়েও উচ্চমাত্রায় অক্সিজেন সরবরাহের প্রয়োজন বেশি হয়। এ জন্য জেলা হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্তসংখ্যক অক্সিজেন সরবরাহের যন্ত্র হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা থাকা প্রয়োজন।
সংক্রমণ ঝুঁকির ৩১ জেলার মধ্যে অন্তত ৪টি জেলায় কোনো হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা নেই। অধিকাংশ জেলায় ১ থেকে ৫টি করে নাজাল ক্যানুলা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ১৫ জেলায় আইসিইউ নেই। আর সারাদেশে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা রয়েছে ৭১৫টি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকায় করোনার জন্য নির্ধারিত সরকারি ব্যবস্থাপনার ১০টি হাসপাতালের ১০৮টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে বুধবার ১০৫টিতে রোগী ভর্তি ছিলেন। বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল কোনো আইসিইউ ফাঁকা ছিল না। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১টি এবং রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল এবং মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে ২টি আইসিইউ ফাঁকা ছিল।
ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলো হলো-মৌলভীবাজার, মুন্সীগঞ্জ, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, নরসিংদী, খুলনা, নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ি, ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুর, শরীয়তপুর, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, বরিশাল, রাজশাহী, বগুড়া, নড়াইল, নীলফামারী, গাজীপুর, ফরিদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যশোর, মাদারীপুর, নওগাঁ, রংপুর, কিশোরগঞ্জ, নাটোর, টাঙ্গাইল ও কক্সবাজার।
মহামারি করোনা ভাইরাসে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৫৯ জন যা এ যাবতকালের ২য় সর্বোচ্চ মৃত্যু। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯ হাজার ১০৫ জনে। এছাড়া দেশের ইতিহাসে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৪৬৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ১৭ হাজার ৭৬৪ জনে।
করোনাভাইরাস নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংস্থার অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এদিন সুস্থ হয়েছেন আরও ২ হাজার ৫৩৯ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৪৪ হাজার ৯৩৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও এনসিডিসির লাইন ডিরেক্টর রোবেদ আমিন বলেন, সপ্তাহখানেকের মধ্যে জেলা পর্যায়ে আইসিইউ ইউনিট করার মতো যন্ত্রপাতি, শয্যার ব্যবস্থা করা সম্ভব। কিন্তু আইসিইউ পরিচালনা করতে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, নার্স প্রয়োজন।
ভারত থেকে আরো ২০-৩০ লাখ টিকা আসছে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার পরবর্তী চালান দুয়েক দিনের মধ্যে দেশে আসবে। এবারের চালানে ২০ থেকে ৩০ লাখ ডোজ টিকা আসতে পারে। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
উল্লেখ্য, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে গত নভেম্বরের চুক্তি করে বাংলাদেশ।
চুক্তি অনুযায়ী ভারত থেকে ওই টিকা সরবরাহের দায়িত্বে আছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় মাসে তিন কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের।
জানুয়ারিতে ৫০ লাখ ডোজ দেশে এলেও বিপুল চাহিদা আর বিশ্বজুড়ে টিকার সরবরাহ সঙ্কটের মধ্যে ফেব্রুয়ারির চালানে আসে ২০ লাখ ডোজ টিকা। এর বাইরে ভারত সরকার দুই দফায় উপহার হিসেবে দিয়েছে মোট ৩২ লাখ ডোজ টিকা।
টিকার প্রথম চালান হাতে পাওয়ার পর গত ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে গণ টিকাদান শুরু হয়। আগামী ৮ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু করার কথা।