মহাদুর্যোগে গোটা দেশ

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

সব রেকর্ড ভেঙে দেশে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত
ভারতে ৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ সংক্রমণ

 

 

এমএ স্বপন : দেশে প্রতিদিন মহামারি করোনাভাইরাসে শনাক্তের নতুন রেকর্ড হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। গত বছরের মার্চে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি আর দেখা যায়নি। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মহামারি তাড়া করে ফিরলেও, সম্প্রতি এ ভাইরাস ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে দেশের ৩১টি জেলায় আবারও ছড়িয়ে পড়েছে করোনা সংক্রমণ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরের ২ আগস্ট একদিনে সর্বোচ্চ চার হাজার ১৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এরপর বৃহস্পতিবার একদিনে সর্বোচ্চ ছয় হাজার ৪৬৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, যা আগের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। এদিকে গত বছরের ৩০ জুন একদিনে সর্বোচ্চ ৬৪ জন করোনায় মারা যান।
এদিকে মহামারি করোনা ভাইরাসে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৫০ জন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯ হাজার ১৫৫ জনে। এছাড়া দেশের ইতিহাসে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৮৩০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ২৪ হাজার ৫৯৪ জনে। করোনাভাইরাস নিয়ে শুক্রবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এদিন সুস্থ হয়েছেন আরও ২ হাজার ৪৭৩ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৪১১ জন।
স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণের সাথে জড়িত শীর্ষ দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব, সংসদ সদস্য, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, সাংবাদিক, চিকিৎসক ও নার্সসহ সকল শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে কেউই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর কবল থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
গত কিছু দিন ধরে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। রোগতত্ত্ববিদ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বর্তমান অবস্থাকে ‘জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা’ উল্লেখ করে দেশের শতভাগ মানুষকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি (প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়া, ঘরের বাইরে গেলেই শতভাগ মানুষের মাস্ক পরিধান করা, ঘন ঘন সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া, জনসমাগম এড়িয়ে চলা) মেনে চলার পরামর্শ দিলেও সেদিকে অধিকাংশ মানুষেরই ভ্রুক্ষেপ নেই।
এমন পরিস্থিতিতে কেউ কেউ দুই তিন সপ্তাহের জন্য সারাদেশে লকডাউন ঘোষণারও পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু সরকার জীবন ও জীবিকার কথা ভেবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। করোনা সংক্রমণ রোধে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সরকার ঘোষিত ১৮ দফা বাস্তবায়নে পাঁচ দফা সুপারিশ পেশ করেছে।
দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগীর মৃত্যু হয় এর ঠিক ১০ দিন পর, ১৮ মার্চ। এরপর দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৫০ জন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯ হাজার ১৫৫ জনে। এছাড়া দেশের ইতিহাসে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৮৩০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ২৪ হাজার ৫৯৪ জনে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক করোনা পরিস্থিতি ক্রমাবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সরকারের ১৮ নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের বেখেয়ালি চলাফেরা আগামীতে আরও বিপর্যয় নিয়ে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যতই হাসপাতালগুলোতে বেড বৃদ্ধি করি এতে কোভিড আক্রান্ত রোগী কমাতে পারবো না। আমাদের আক্রান্তের উৎপত্তিতে আরও সচেতন হতে হবে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নবনিয্ক্তু উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বর্তমান করোনা পরিস্থিতিকে ‘জাতীয় স্বাস্থ্য দুর্যোগ’ বলে মন্তব্য করে বলেছেন, করোনার সংক্রমণ রোধে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে আপনি ও আমি কেউ নিরাপদ নই। তিনি করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার্থে বিএসএমএমইউতে দ্রুততম সময়ে শতাধিক সাধারণ শয্যা ও ১০টি আইসিইউ শয্যার বৃদ্ধি করা হবে বলে জানান।


বিজ্ঞাপন

ভারতে ৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ সংক্রমণ : ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ক্রমেই বেসামাল হচ্ছে করোনা পরিস্থিতি। বৃহস্পতিবার দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭২ হাজার। শুক্রবার তা প্রায় সাড়ে ৮১ হাজার। গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বরের পর একদিনে দেশটিতে এটিই আক্রান্তের সর্বোচ্চ সংখ্যা।
এর মধ্যে মহারাষ্ট্রের পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা গোটা করোনার সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। সেখানে একদিনে আক্রান্ত ৪৩ হাজার ছাড়িয়েছে।
ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮১ হাজার ৪৬৬ জন। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হলেন এক কোটি ২৩ লাখ ৩ হাজার ১৩১ জন। করোনার নতুন ধরনই এ জন্য দায়ী বলে মতপ্রকাশ করেন দিল্লি এমসের প্রধান রণদীপ গুলেরিয়া। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ একলাফে বাড়িয়ে দিয়েছে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও।
দেশের দৈনিক মৃত্যু এক মাস আগেও ছিল ১০০-এর আশপাশে। গত ২৪ ঘণ্টায় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬৯ জনে। মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ২৪৯ জনের। কর্নাটক, দিল্লি, পাঞ্জাব ও ছত্তীসগড়েও গত কয়েক দিনে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে।