সারাদেশে লকডাউন

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন জীবনী সারাদেশ স্বাস্থ্য

খোলা থাকবে শিল্প কারখানা
বন্ধ থাকবে বইমেলা
কার্যকরে কঠোর হবে পুলিশ

 

বিশেষ প্রতিবেদক : করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় আগামী সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে ৭ দিনের জন্য সারা দেশে লকডাউন ঘোষণা করছে সরকার।
শনিবার এ তথ্য জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
কাদের বলেন, আগামী সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে লকডাউন ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, দ্রুত বেড়ে যাওয়া করোনা সংক্রমণ রোধ করতে সরকার ২-৩ দিনের মধ্যে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউনের চিন্তা করছে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান জরুরি সেবা দেয় সেই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো লকডাউন চলাকালে খোলা থাকবে। এছাড়া শিল্প-কলকারখানাও খোলা থাকবে, যাতে করে শ্রমিকরা শিফটিংয়ের মাধ্যমে কাজ করতে পারে।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। সবশেষ চলতি বছরের ২ এপ্রিল পর্যন্ত প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে নয় হাজার ১৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা ছয় লাখ ২৪ হাজার ৫৯৪ জন।
বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আজকে পর্যন্ত (৩ এপ্রিল) ২৮ লাখ ৫১ হাজার ২৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছে দশ কোটি ৫৩ লাখ ৪৩ হাজার ২৬৮ জন।
লকডাউন কার্যকরে কঠোর হবে পুলিশ : হঠাৎ করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আগামী সোমবার থেকে সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। দেশব্যাপী নতুন লকডাউন কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে ও লকডাউনের নির্দেশনা পালনে পুলিশ আরও কঠোর হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। শনিবার ডিএমপি কমিশনার সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, গত বছর কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই পুলিশ মাঠে থেকে কাজ করেছে। গতবারের অভিজ্ঞতা সঙ্গে নিয়ে এবার পুলিশ কাউকেই লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি বিধি লঙ্ঘনে ছাড় দেবে না। গত বছর লকডাউন চলাকালে অনেকেই বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ঢাকা ছেড়েছিল। এবার তা হতে দেয়া হবে না। কোভিড-১৯ এর নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ মাঠে থেকে কাজ করবে।
তিনি আরও বলেন, গত বছরের লকডাউন পর্যালোচনা করে অভিজ্ঞতা বাস্তবায়নের বিষয়ে পরিকল্পনা করার জন্য রোববার পুলিশ এ বিষয়ে একটি সভা করবে।
প্রজ্ঞাপন জারির পর শ্রম ব্যবস্থাপনা : সরকার লকডাউনের ঘোষণা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর শ্রম ব্যবস্থাপনার বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনা করবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপন জারির আগে এর কোনও সুযোগ নেই বলে মনে করে শ্রম মন্ত্রণালয়।
এদিকে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলছে, অর্ধেক জনবল দিয়ে কারখানা চালানো সম্ভব নয়। বিষয়টি জানিয়ে তারা সরকারকে চিঠিও দিয়েছে। এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলেছে, লকডাউন চলাকালীন দেশের শিল্প কারখানা খোলা থাকবে। সবকিছু চূড়ান্ত করতে সকল মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিবদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব।
করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের ৫০ শতাংশ জনবল দিয়ে কারখানা চালানোর নির্দেশনার পর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। বিজিএমইএ বলেছে, অর্ধেক জনবল দিয়ে কারখানা চালানো সম্ভব নয়। দেশের অর্থনীতির কথা চিন্তা করে সকল কারখানায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা গাইডলাইন যথাযথভাবে অনুসরণ করে কারখানা চালু রাখার পক্ষে মত দিয়েছে সংগঠনটি।
সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লেখা চিঠিতে বিজিএমইএ’র সভাপতি ড. রুবানা হক জানিয়েছেন, অর্ধেক শ্রমিক দিয়ে গার্মেন্টস কারখানা চালানো সম্ভব নয়। তবে কারখানাগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালন করা হচ্ছে।
এদিকে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার আগামী দু-একদিনের মধ্যে এক সপ্তাহের জন্য সারাদেশে একযোগে লকডাউনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি বলেন, লকডাউন চলাকালে জরুরি সেবা দেয় এমন প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। এছাড়া শিল্প কল-কারখানাও খোলা থাকবে। যাতে শ্রমিকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং বিভিন্ন শিফটিংয়ের মাধ্যমে তারা কাজ করতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুস সালাম জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা এখনও বসিনি। আগে লকডাউনের প্রজ্ঞাপন জারি হোক। সেটি দেখার পরই আমরা বিষয়টি নিয়ে আলাপ আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবো।
এদিকে লকডাউন বাস্তবায়নের উপায় বা কৌশল এবং করণীয় নির্ধারণে বিকালে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করছে সরকার। তবে দেশের অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখার লক্ষ্যে গার্মেন্টস কারখানা চালু রাখার প্রয়োজন হতে পারে। এ ব্যাপারে আজ শনিবার বিকালে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক।
লকডাউনে বন্ধ থাকবে বইমেলা : লকডাউনের সময় বন্ধ থাকবে বইমেলা। রোববার এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। শনিবার বিকেলে এ তথ্য জানিয়েছেন তিনি। এর আগে সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য সারা দেশে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। একই দিন সকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজ বাসভবনে এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। দুপুরে গণমাধ্যমকে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, লকডাউন চলাকালে জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান, কাঁচাবাজার ওষুধ ও খাবারের দোকানের পাশাপাশি পোশাক এবং অন্যান্য শিল্পকারখানা খোলা থাকবে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা চাচ্ছি লকডাউনে যেন মানুষের চলাচল যতটা সম্ভব বন্ধ করা যায়। কারণ, যেভাবে করোনা ছড়াচ্ছে তাতে মানুষের ঘরে থাকা জরুরি। তবে জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান, কাঁচাবাজার, খাবার ও ওষুধের দোকান লকডাউনের আওতামুক্ত থাকবে। তিনি জানান, এ ছাড়া পোশাক ও শিল্পকারখানাগুলো খোলা থাকবে। কারণ, কারখানা বন্ধ হলে শ্রমিকদের বাড়িতে ফেরার বিষয় থাকে। এতে করোনার ঝুঁকি আরও বাড়বে। তবে কারখানায় শ্রমিকদের একাধিক শিফটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করতে হবে। লকডাউনের বিষয়ে আজকালের (শনি ও রোববার) মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলেও জানান তিনি।
গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় এবং ১৮ মার্চ প্রথম কারো মৃত্যুর কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর মহামারি নিয়ন্ত্রণে গত বছরের ২৩ মার্চ প্রথমবারের মতো ‘সাধারণ ছুটির’ ঘোষণা দেয় সরকার। শুরুতে গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ‘ছুটি’ ঘোষণা হলেও পরে কয়েক দফা বাড়ানো হয়। টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষ হয় গত বছরের ৩০ মে।
এর আগে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কয়েক দিন আগে দুই সপ্তাহের জন্য ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করে সরকার। নির্দেশনায় সব ধরনের জনসমাগম (সামাজিক/রাজনৈতিক/ধর্মীয়/অন্যান্য) সীমিত, উচ্চ সংক্রমণযুক্ত এলাকায় সকল ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ, বিয়ে/জন্মদিনসহ যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে জনসমাগম নিরুৎসাহিত করার নির্দেশনা দেয় সরকার। ১৮ নির্দেশনায় রয়েছে- মসজিদসহ সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পালন নিশ্চিত করা, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের অধিক যাত্রী বহন না করা, যান চলাচল সীমিত করা, বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা, সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ৫০ ভাগ জনবল দ্বারা পরিচালনা করা।


বিজ্ঞাপন