বিশেষ প্রতিবেদক : স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরতে মরিয়া তারা। সড়কপথেও রাজধানীর ছাড়ার প্রবণতা ছিল চোখে পড়ার মতো।
যদিও রাজধানীতে অফিস খোলা রেখে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় গন্তব্যে পৌঁছুতে হয়রানির স্বীকার হন অফিসগামীরা।
এদিকে, করোনা সংক্রমণ রোধে সারাদেশে সকল সরকারি-বেসরকারি-স্বায়ত্তশাসিত অফিস বন্ধ করে সাত দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। লকডাউনে বন্ধ থাকবে গণপরিবহন-শপিংমল। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু থাকবে শিল্পকারখানা। সকালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে শুরু হচ্ছে এ বিধি নিষেধ।
দুপুরে সর্বাত্মক কঠোর লকডাউন ঘোষণার পর সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠে পুলিশের কড়া নজরদারি থাকবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম।
ডিএমপি জানিয়েছে, যুক্তিসংগত কারণ না দেখাতে মোবাইলে কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ৬ মাসের জেল ও জরিমানা করা হবে।
তবে, বৃহস্পতিবার থেকে লকডাউন মানাতে ছাড় দেবে না পুলিশ। সাফ জানিয়ে ডিএমপির হুঁশিয়ারি, অযথা ঘোরাঘুরি করলেই গ্রেপ্তার হতে হবে।
এবারের লকডাউনে মুভমেন্ট পাস যেমন থাকছে না তেমনি, অলিগলির দোকানপাটও খোলা রাখা যাবে না। এমন কি শিল্প-কারখানার কর্মকর্তা ও কর্মচারী যারা রাজধানীতে রয়েছেন তাদের নিজস্ব কর্মস্থলের চলে যাওয়ারও অনুরোধ জানান ডিএমপি কমিশনার।
কাঁচাবাজার খোলা স্থানে সরিয়ে আনার নির্দেশনার পাশাপাশি রিকশা চলাচলের অনুমতি থাকলেও ইচ্ছেমতো তা ব্যবহারেও কঠোর থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমনটাই জানিয়েছেন মহানগরের পুলিশ প্রধান।
‘লকডাউন’ বাস্তবায়নের জন্য গণপরিবহন চলাচল একেবারেই বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে অফিসগামী এবং জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়া মানুষ। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
এসময় দেখা যায় অফিসগামী এবং জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়া মানুষদের একটি বাইক দেখলেই নিয়ে যাওয়ার আকুতি করছেন। ভাড়া যাই হোক যেতে চান তাদের গন্তব্যে। একটি বাইক আসলেই সকলকেই ছুটে যেতে যায়। যখন একটি পিক-আপ আসে তখন গন্তব্যে যেতে মানুষগুলো পিক-আপের ওপর হুমড়ি খেয়ে পরছে।
লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ রেখে সীমিত পরিসরে অফিস খোলা থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামী মানুষ। তাই বাধ্য হয়েই অনেকে বেশি ভাড়ায় রিকশা, ভ্যান, রাইড শেয়ারিংয়ের বাইক, পিক-আপ বা পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।
মো. সুজন নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, লকডাউনে শুধু সমস্যা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের। যাদের গাড়ি আছে তারাতে ঠিকই চলছে। এখন জরুরি প্রয়োজনে কোথাও যেতে হলে তিন চার গুন ভাড়া দিতে হচ্ছে। এর থেকে ভোগান্তি কষ্ট আর কিছু হতে পারে না।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মো. আল আমিন। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি জানান, ‘সড়কে গাড়ি নেই, সিএনজি ভাড়াও বেশি। কি করবো আমরা সাধারণ মানুষ। আমাদের মরণ ছাড়া উপায় নাই।’
মো. সাদ্দাম হোসেন বলেন, যাদের নিজস্ব গাড়ি আছে, তাদের জন্য লকডাউন নেই। দেখেন রাস্তায় কি পরিমান প্রাইভেট কার চলছে। তাদের কোথাও যেতেও বাধা নাই। কিন্তু আমার মত যারা বাসে যাতায়াত করি, তারা কিভাবে অফিসে যাব, এটা কেউ ভাবেন না।
বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। বুধবার বিধিনিষেধ আরোপ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এ সময়ে জরুরি সেবা দেয়া দফতর-সংস্থা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিস, যন্ত্রচালিত যানবাহন, শপিংমল-দোকানপাট বন্ধ থাকবে। খোলা থাকবে শিল্প-কারখানা, জনসমাবেশ হয় এমন কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না এই সময়ে। বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে করোনাভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯) সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ২১টি শর্ত যুক্ত করে ১ জুলাই (বৃহস্পতিবার) সকাল ৬টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ হয়েছে বলে জানানো হয়।
![](https://ajkerdesh.com/wp-content/uploads/2021/06/তবুও-রাজধানী-ছাড়ছে-মানুষ.jpg)