ঘটিরাম

অন্যান্য

মোস্তাফিজুর রহমান : কেউ নিজ দৈহিক সৌন্দর্য নিয়ে অহমিকার শীর্ষে, কেউবা জ্ঞানগর্ভের সম্যকজ্ঞান ও বিদ্যার প্রতুলতা হজম করতে না পেরে জ্ঞানপাপী , কেউবা উপচে পড়া অর্থসম্পদের ভার বইতে না পেরে অহংকারী। দৈহিক সৌন্দর্য, জ্ঞানভাণ্ডার ও পর্যাপ্ত অর্থসম্পদের অধিকারী অধিকাংশ মানুষ শুধু নিজ অস্তিত্ববোধ নিয়েই বেশী খেয়ালী। যাদের আশীর্বাদে বা যে মাধ্যমের সানুগ্রহ ও সহযোগিতায় এই পরিপূর্ণতা, তাদের নাম উচ্চারণ করতে অনেকেরই বদহজম হয়, অর্থাৎ পুরনো কাদুন্দি ঘেটে নিজকে খাটো করতে বা সত্যটা সম্প্রচার করতে নারাজ। এমন বাতিক মানুষের জন্য অমনুষ্যত্ব হলেও উল্লেখিত ক্যাটাগরির মানুষগুলোর জীবনদর্শনের প্রধান দৃশ্যমাণ অংশ।


বিজ্ঞাপন

এ দেশের সমাজ ব্যবস্থার সংস্কারের দায়িত্ব এদের উপর বর্তালেও এরা নিজ গুণেই অষ্টাদশী ও আপনভূবন নিয়ে মত্ত বিধায় সমাজের অবহেলিত নাখান্দা ও কুৎসিত চেহারার মানুষ দিয়ে সমাজের সংস্কার হয়না। কারণ সাদা বর্নের রূপেরমোহে সকলেই দুর্বল। জ্ঞানী মানুষের নীরবতার জন্য সমাজের অপরাধপ্রবণতা মাথাচাড়া দিলেও সম্যকজ্ঞানহীন মানুষ দিয়ে এটার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব নয়। কারণ সকলেই ব্রাহ্মণকে পূজা করে, ব্রাহ্মণের শীর্ষকে নয়। অর্থসম্পদশালীরা তাদের সম্পদ বৃদ্ধির অন্বেষণে ব্যস্ত বিধায় তাদের অধিকাংশের সম্পদ দারিদ্র্য বিমোচন বা জনকল্যাণকর কর্মকাণ্ড থেকে বিরত।

এত হিংসা, বিদ্বেষ ও অহংকারে নিত্য ঝলসে গিয়েও টিকে আছে আমাদের রুগ্ন ও বৈষম্যসুলভ সমাজের সাধারণ মানুষগুলো। রুগ্ন সমাজ সহসাই অনিয়মের বস্তায় বন্দী হয়ে নিঃশেষ হয়ে যাবে। সাধারণ মানুষগুলোর অধিকারও বঞ্চিত হবে, ঠিক তখনই পুরো সমাজব্যবস্থায় অঞ্চলভেদে একক আধিপত্য বিস্তার করবে হাতেগোনা কিছু মানুষ, যারা দৈহিক সৌন্দর্যের অধিকারী, জ্ঞানগর্ভের জ্ঞানপাপী ও অঢেল বিত্তের অধিকারী। যদিও এমনটা হতে বেশী আর বাকী নেই।
দৈহিক সৌন্দর্যের অধিকারীদের খোলামেলা চলাফেরা আধুনিকতার বহিঃপ্রকাশ, জ্ঞানপাপীদের অমূলক সংলাপও চিরন্তন বাণী এবং সম্পদের দাপটে যাচ্ছেতাই আচরণ কানুন হিসেবেই সমাজে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে যুগযুগান্তর ধরে। পক্ষান্তরে কুৎসিত দেহের মানুষের খোলামেলা চলাফেরা বেলাল্লাপনা হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে , কম শিক্ষিত মানুষের মৌলিক সংলাপও পাগলের প্রলাপ হিসেবে বিবেচিত এবং মধ্যবিত্তের আনন্দের খোরাক অতি বিলাসিতার হাস্যকর সমালোচনার রসদ মাত্র।

বাহ্ চমৎকার আমাদের মানসিকতার নির্মাণশৈলী, যেখানে নিখাদে খাদ মিশিয়ে ইমিটেশনকে গোল্ড বলে নিত্য ঠকাচ্ছি সাধারণ মানুষকে। বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মানে এমন দুরবস্থার অবসান খুবই প্রয়োজন।