অলিগলিতে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত

এইমাত্র জাতীয়

*মাস্কবিহীন কাউকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না
*তৃতীয় দিনে সড়কে বেড়েছে যানবাহনের চাপ


বিজ্ঞাপন

বিশেষ প্রতিবেদক : দুই সপ্তাহের কঠোর লকডাউনের তৃতীয় দিন কারণে-অকারণে লোকজনের বাইরে বের হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কেউ নিয়ম না মানলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। অলিগলির চিত্র একেবারেই ভিন্ন। প্রধান সড়কের বাইরে অলিগলিতে খোলা আছে সব ধরনের দোকানপাট।
রোববার মিরপুর-১০, ১১ ও ১২ নম্বর ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান ও অভ্যন্তরীণ সড়কে মানুষের চলাচল অনেকাংশেই বেড়েছে। নিয়ম ও স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মামলা দেয়া ও জরিমানা করা হচ্ছে।
রোববার দুপুর ১টার পরে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে বিজিবির তত্ত্বাবধানে মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম শুরু হয়। এ সময় মাস্ক না পরা ও বিনা প্রয়োজনে বাইরে বের হয়ে লকডাউনের আইন অমান্য করায় ২২ জনকে জরিমানা করা হয়। কত টাকা জরিমানা করা হয়েছে তা জানাননি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খায়রুন নাহার।
তিনি বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী লকডাউন বাস্তবায়নে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কেউ আইনের ব্যত্যয় ঘটালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সোপর্দ করছে।’
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খায়রুন নাহার আরও বলেন, ‘মাস্কবিহীন কাউকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না। করোনা প্রতিরোধে সবাইকে মাস্ক পরিধান করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। কেউ আইন অমান্য করলে জরিমানা অব্যাহত থাকবে।’
সরেজমিনে দেখা যায়, রোববার রাস্তায় জনসমাগম ও যানবাহন চলাচল বেড়েছে। মিরপুর-১০ নম্বরে দুটি চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছে পুলিশ। পেট্রলিং করছে সেনাবাহিনী। যারা অকারণে বাইরে বের হয়েছে তাদের ফিরেয়ে দেয়া হচ্ছে। মূল সড়কগুলোতে দোকানপাট বন্ধ থাকলেও অলিগলিতে দোকানপাট খোলা। সেখানে অবাধে মানুষ চলা ফেরা করায় উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি।
তৃতীয় দিনে সড়কে বেড়েছে যানবাহনের চাপ : করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তৃতীয় দিনের মতো সারা দেশে পালিত হচ্ছে বিধিনিষেধ। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হলেই নানা ধরনের পুলিশি ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেও ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন সড়কে মানুষ ও ব্যক্তিগত পরিবহনের চাপ বেড়েছে। অনেক স্থানে পুলিশের চেকপোস্ট ঢিলেঢালা হওয়ায় অবাধে মানুষ চলাফেরা করতে দেখা গেছে। রোববার ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন শাহিদুর রহমান। মোটরসাইকেল চালিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসছিলেন অফিসের কাজে। তেজগাঁওয়ে ঢাকা পলিটেকনিকের সামনে দিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশের চেকপোস্টে তাকে আটকানো হয়। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তার মোটরসাইকেলের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখতে চাইলে রেজিস্ট্রেশন কার্ড দেখাতে না পারায় ১২০০ টাকার মামলা দায়ের ও নগদ আদায় পরে পুলিশ।
শাহিদুর রহমান জানান, রোববার থেকে অফিসের কাজ শুরু হয়েছে। এ কারণে সকালে অফিসের কাজে বেরিয়েছেন। মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশনের জন্য টাকা জমা দিলও অফিশিয়াল কাগজপত্র পাননি।
আইএফআইসি ব্যাংকের কর্মকর্তা মামুন শেখ ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে মতিঝিল যাওয়ার পথে পুলিশের চেকপোস্টে আটকা পড়েন। বাইরে বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, রোববার থেকে ব্যাংক খুলেছে। সকালে অফিসে আসলেও এখন জরুরি কাজে মতিঝিল যাচ্ছেন। পরে তাকে যেতে দেয়া হয়।
তেজগাঁও সরকারি পলিটেকনিকের সামনে বসানো চেকপোস্টের দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ মাসুম বলেন, ‘প্রয়োজন ছাড়া ব্যক্তিগত পরিবহন নিয়ে তেমন কেউ রাস্তায় বের হচ্ছেন না। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হলে তাকে শনাক্ত করে সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করায় মামলা দেয়া হচ্ছে।’
এই চেকপোস্টের পাশে বিজিপ্রেসের সামনে বসানো হয়েছে আরেকটি পুলিশ চেকপোস্ট। সেখানে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট শংকর ও মঞ্জুরুলের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, অন্যদিনের চাইতে রোববার সকাল থেকে সড়কে পরিবহনের চাপ কিছুটা বেড়েছে। আজ থেকে ব্যাংক খুলেছে। ব্যাংকের কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত গাড়িতে চলাফেরা করছেন।
এছাড়া জরুরি কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা রাস্তায় চলাফেরা করছেন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া তেমন কাউকে জিজ্ঞাসা করে পাওয়া যায়নি। তবে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একটি মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে মিরপুর, বিজয় সরণি, মহাখালী, মৎস্য ভবনসহ মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কিছু জায়গায় দেখা গেছে চেকপোস্ট বসানো হলোও সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই অবাধে যানবাহন চলাচল করছে।