পরীমনির বিষয়ে চয়নিকা চৌধুরীর বক্তব্য মিথ্যাচার

বিনোদন

বিনোদন প্রতিবেদক : ১৯৫৬ – ২০২১, ৬৫ বছর বয়স আমাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাষ্ট্রির। এই ৬৫ বছরে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পে এসেছেন জনপ্রিয় নায়িকা/অভিনেত্রী হিসেবে অসংখ্য জন যাদের অনেকে হয়ে গেছেন আমাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির সর্বকালের সেরা অভিনেত্রী। কেউ কেউ আবার শুধু অভিনেত্রী নন প্রযোজক হিসেবেও সেরাদের তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছেন।
সুমিতা দেবী, সুজাতা, শবনম, সুচন্দা, রোজী আফসারী থেকে শুরু করে শাবানা, কবরী, ববিতা, রোজিনা, সুচরিতা, অলিভিয়া,চম্পা, দিতি, মৌসুমি শাবনূর পর্যন্ত তিনটি প্রজন্ম চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে কুড়িয়েছেন সুনাম ও জনপ্রিয়তাও। বাংলা চলচ্চিত্রের সবচেয়ে রমরমা সময়ে যাদের আধিপত্য ছিলো তারা কেউই দেখতে অসুন্দরী ছিলেন না, কারোরই গ্ল্যামার্স কমতি ছিলো না। কিন্তু তাদের কাউকেই আজকের তথাকথিত জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পরিমণির মতো নিষিদ্ধ জগতকে বেছে নিতে হয়নি। শাবানা, ববিতা, রোজিনা, অলিভিয়া, চম্পা, দিতি’রা যখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিলেন তখনও কোনদিন তাদের নিয়ে পরীমণির মতো খবরের শিরোনাম হতে দেখা যায়নি। অথচ উনারা সবাই রুপে, গুণে ও জনপ্রিয়তায় ছিলেন আজকের পরীমণির চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে।


বিজ্ঞাপন

৭০ এর দশক থেকে ৯০ দশক তিনটি দশক দর্শকদের মাতিয়ে রাখা শাবানা ছিলেন “বিউটি কুইন” নামে খ্যাতি। যে শাবানাকে দেখতে দর্শক হুমড়ি খেয়ে সিনেমা হলে যেতো, পোষ্টারে শাবানার চেহারা থাকলেই সিনেমা হলে টিকেট নিয়ে দর্শকদের সাথে মারামারি লেগে যেতো। শুধু দর্শক নন সমালোচকদের বিচারেও শাবানা এগিয়ে যিনি এখন পর্যন্ত সর্বাধিক সংখ্যক জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনেত্রী যার রেকর্ড আজও কেউ ভাঙতে পারেনি। সেই শাবানার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কখনও কোন নেতিবাচক খবর দেখেছি বলে আমার মনে পড়ে না। অভিনেত্রী ও প্রযোজক দুই জায়গাতেই ছিলো শাবানার আধিপত্য। শাবানার যুগে যদি এদেশে ইন্টারনেট আর ফেসবুক থাকতো তাহলে শাবানার ফেসবুক আইডি আর পেইজ বলিউড, হলিউডের জনপ্রিয় অনেক তারকাকেও ছাড়িয়ে যেতেন নিঃসন্দেহে। কারণ সেই সময় উপমহাদেশে শাবানার মতো ৩ দশক ধরে একইভাবে আধিপত্য দেখানো অভিনেত্রী ২য় আরেকজন ছিলো না।
গ্ল্যামার ও সুন্দরের দিক শাবানার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ববিতা। ববিতার চোখের দিকে তাকালে পাগল হতো না এমন দর্শক পাওয়া যাবে না। শাবানা না থাকলে ববিতাই হতেন বাংলাদেশ্রর চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির সম্রাজ্ঞী। ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকাবস্থায় ববিতা-জাফর ইকবাল এর প্রেম রোমান্স নিয়ে শোবিজ জগতে অনেক খবর হয়েছে যা এই অঙ্গনে খুবই স্বাভাবিক অবস্থা। এসব স্ক্যান্ডাল ব্যতীত ববিতাকে নিয়ে কখনও নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হতে দেখিনি। অথচ শাবানা, ববিতা চাইলেই সেই সময়ে আজকের পরিমণির মতো সৌন্দর্য ও জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে দেশের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের মনোরঞ্জনকারী হিসেবে শত শত কোটি টাকার মালিক হতে পারতেন কিন্তু তাঁরা কেউই সেপথে হাঁটেননি।

শাবানা, ববিতার সময়ে ইন্ডাস্ট্রিতে মাফিয়া ডন আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়েরও আধিপত্য ছিলো যাকে কাজে লাগিয়ে তাঁরা চাইলে আন্ডার ওয়ার্লের গডমাদার হতে পারতেন অনায়াসে কিন্তু সেপথেও তাঁরা হাঁটেননি। কারণ তাঁরা ছিলেন মেধাবী। সৌন্দর্যের সাথে মেধাকে পুঁজি করেই তাঁরা হয়েছিলেন সিনেমা দর্শকদের কাছে হয়েছেন পূজনীয়। অথচ আজকের পরিমণি ও তার সমসাময়িকদের কার্যকলাপে মনে হয় চলচ্চিত্রের নায়িকা মানেই দেহ ব্যবসায়ী, মাদক ব্যবসায়ী যাদের কাজই হলো চলচ্চিত্রের নায়িকা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেহ ব্যবসা ও মাদক ব্যবসায় উন্নতি করা। পরিমণিকে নিয়ে যারা কাজ করে বা যারা পরিমণির ঘনিষ্ঠ তারাও আজ নিজেকে পরিমণির পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করে। এই পরিমণিকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে নাম লেখিয়ে দুদিন আগে যিনি পরিমণির প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন সেই চয়নিকা চৌধুরী আজ গণমাধ্যম পরিমণির ব্যক্তিগত সম্পর্কে জানেন না বলে নিজেকে সেইফ করার চেষ্টা করছেন যা খুবই হাস্যকর। কিন্তু চয়নিকা চৌধুরী ও পরীমণির ফেসবুক আইডিতে গেলে মনে হবে “দুজন দুজনার কত যে আপন কেউ জানে না “! পরিমণির জন্মদিনের ভিডিওটা দেখুন, কদিন আগে সাংবাদিক সম্মেলন করা পরীমণির ভিডিও টা দেখুন সবখানেই দেখবেন চয়নিকা চৌধুরী ও পরিমণির ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ। এতো ঘনিষ্ঠ কেউ যদি বলে ” আমি তার ব্যক্তিগত সম্পর্কে জানিনা” সেটা হবে নির্লজ্জ মিথ্যাচার। একটা ইন্ডাস্ট্রিতে যখন মেধাহীন ও মিথ্যাবাদীরা বিচরণ করে সেই ইন্ডাস্ট্রির সংকটময় সময় কখনও কাটেনা বরং ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংস হয়ে যায়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে অন্তত এই মুহুর্তে আর কোন আশা নেই।

পরিমণিরা রাস্তা থেকে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে আসে নিজেকে কোটিপতি বানাতে, ইন্ডাস্ট্রিকে কোটিপতি করতে আসে না। একটা দেশের শাসনব্যবস্থা থেকে শুরু করে সবখানে যখন ক্ষমতা, দূর্ণীতি ছেয়ে যায় তখন তার প্রভাব দেশের শিল্প সংস্কৃতিতেও পড়ে। পরিমণি দেখেছে যে এদেশে ক্ষমতা থাকলেই সব অন্যায় বৈধ হয়ে যায়, ক্ষমতা থাকলেই দিনের ভোট রাতে হলেও বৈধতা পায়, ক্ষমতা থাকলেই শত শত কোটি লোপাট করেও পার পাওয়া যায়, ক্ষমতা থাকলেই শত শত মানুষকে গুম, খুন করেও পার পাওয়া যায় সেখানে পরিমণি তো ক্ষমতার পেছনেই ছুটবে এটাই স্বাভাবিক।পরিমণিরা হয়তো ক্ষমতার পিছনে ছুটতে গিয়ে ভুলে যায় যে দিনশেষে ক্ষমতাবানদের বলির পাঁঠা হিসেবে পরিমণিরাই ব্যবহৃত হয়। স্বার্থ শেষে পরিমণিদের স্থান হয় নর্দমায় আর ক্ষমতাবানরা বহাল তবিয়তে রয়ে যায়।