চৌগাছার রাতুল হত্যায় আপন বোন মীম গ্রেফতার

অপরাধ

মো. সুমন হোসেন, যশোর : ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, গত ১২ জুলাই বিকাল সাড়ে ৫ টার সময় চৌগাছা থানাধীন লস্করপুর শ্মশান মাঠে পাটক্ষেত থেকে মুখে স্কসস্টেপ দ্বারা মোড়ানো ১৮ বছর বয়সী অজ্ঞাত যুবকের এক মৃত দেহ পেয়ে উদ্ধার করে চৌগাছা থানা পুলিশ।


বিজ্ঞাপন

পরবর্তীতে মৃতের আত্মীয়-স্বজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে ও ছবি দেখে মৃতের মৃতদেহ সনাক্ত পূর্বক জানায় যে, উদ্ধারকৃত লাশের নাম এহতেশাম মাহমুদ রাতুল (১৮), পিতা-মোঃ মহিউদ্দীন, সাং-বাজিপোতা, থানা-মহেশপুর, জেলা-ঝিনাইদহ। সে মহেশপুর থানাধীন সামবাজার এম.পি.বি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্র।

১১ জুলাই বেলা আড়াই টার সময় বাড়ী থেকে বাইরে যাওয়ার পর সন্ধ্যা ৭ টায় মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করিলেও এরপর হইতে সে নিখোঁজ থাকে।

এই ঘটনার বিষয়ে ভিকটিমের পিতা মহিউদ্দীন বাদী হইয়া অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে চৌগাছা থানা যশোরে অভিযোগ দাখিল করিলে চৌগাছা থানার মামলা নং-০৮, তারিখঃ১৩/০৭/২০২১ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়।

মামলাটি চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হওয়ায় জেলা পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, বিপিএম (বার) পিপিএম মামলার তদন্তভার জেলা গোয়েন্দা শাখা, যশোর এর উপর ন্যাস্ত করেন। অফিসার ইনচার্জ জেলা গোয়েন্দা শাখা এর হাওলা মতে এসআই(নিঃ) মোঃ শামীম হোসেন বর্ণিত মামলার তদন্তভার গ্রহন করেন।

গ্রেফতার ও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যনুযায়ী জানা গেছে, ইতিপূর্বে হত্যার সাথে জড়িত তদন্তে প্রাপ্ত ভিকটিমের ভগ্নিপতি শিশির আহম্মেদকে ১৭ জুলাই চট্টগ্রাম পতেঙ্গা থেকে গ্রেফতার করে তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক ভিকটিমের মোবাইল ফোন, হত্যাকাজে ব্যবহৃত স্কচটেপ, ভিকটিমের পরিহিত ছেড়া বস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

ধৃত আসামী শিশির আহম্মেদ বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃকাঃবিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করে।

যাতে হত্যার পরিকল্পনার সাথে ভিকটিম রাতুলের বোন মাহমুদা মমতাজ মীমের সংশ্লিষ্টতার কথা জানায়।

এই বিষয়ে মামলার তদন্তকারী তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার তথ্য প্রমান পেয়ে ভিকটিমের বোন মাহমুদা মমতাজ মীমকে গতকাল ৭ আগস্ট ৫ টা ৫ মিনিটে মামলার বাদী রাতুলের পিতা মোঃ মহিউদ্দিনের মাধ্যমে মাহমুদা মমতাজ মীমকে ডিবি কার্যালয়ে হাজির করলে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা পেয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে অদ্য বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মাহমুদা মমতাজ মীম ফেসবুকে পরিচয়ে শিশিরের সাথে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে পিতা-মাতার অবাধ্যে শিশিরকে বিয়ে করার জন্য ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়।

বাবা-মায়ের সাথে সম্পর্ক রাখার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করলেও পিতা মহিউদ্দিন তার সম্মান রক্ষায় মেয়ে-মেয়ে জামাতা শিশিরের সাথে সম্পর্ক ছেদ করেন এবং শিশিরকে বিভিন্নভাবে অপমান করেন।

অপমানের প্রতিশোধ নিতে শিশির ও মীম পরস্পর যোগসাজসে ভিকটিম রাতুলকে নেশাগ্রস্থ করার চেষ্টা চালায় এবং একপর্যায়ে তারা সফল হয়।

এরপর পরিকল্পনা মত ঘটনার দিন মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে চৌগাছা শ্মশান মাঠের পাশে বেড়গোবিন্দপুর বাওড়ের পাড়ে শিশির ও শাওন ভিকটিমকে চেতনা নাশক ঔষধ খাইয়ে অচেতন করিয়া মুখে স্কচটেপ মেরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ পাট ক্ষেতে ফেলে রাখে।

ভিকটিমের মোবাইল ফোন শিশির ও মীম মিলে শিশিরের ঘরে ইটের নীচে পুতে রাখে বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত আসামীর নাম ঠিকানা, মাহমুদা মমতাজ মীম (২১), স্বামী-শিশির আহম্মেদ ,সাং-কাশিপুর, থানা-কোটচাঁদপুর, জেলা-ঝিনাইদহ।